ধোঁয়া ওঠা কফিতেই লম্বা জীবন সফর, কমে আলঝাইমার্স রোগের ঝুঁকি
Health Benefit of Coffee

The Truth of Bengal, Mou Basu:
‘চায়ের দোকানে আড্ডা সকাল সন্ধে/বেকার জীবন চলছিল ভালো মন্দে’
গোটা পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হল চা আর কফি। কাজ হোক কিংবা পড়াশোনা, কফির পেয়ালায় তুফান তুলতে ভালোবাসেন না এমন মানুষ মেলা ভার। কফির কাপে রোজ তুফান না তুললে চলে না আড্ডাপ্রিয় বাঙালির। এরমধ্যেই কফিপ্রেমীদের জন্য সুখবর বয়ে এনেছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্র। ইতালির ভেরোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাঁদের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখেছেন এসপ্রেসো (espresso) কফি কমায় অ্যালাঝাইমার্স বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। ভেরোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক মারিয়ানা ডি’অনোফ্রিওর নেতৃত্বে এই গবেষণা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন কফিতে থাকা ক্যাফিন, ট্রাইগোনেলিন আর জেনিস্টেইনের মতো উপাদান ক্ষতিকারক tau প্রোটিনের জমাট বাঁধা আটকায়। আলঝাইমার্স রোগীদের মস্তিষ্কে যে ক্ষতিকারক জমাট বেঁধে যাওয়া tau প্রোটিন পাওয়া যায় তাকে ফাইব্রিলস বলে। এই ফাব্রিলস মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। স্মৃতিভ্রংশের পাশাপাশি চিন্তাশক্তি কমিয়ে দেয়। এসপ্রেসো কফিতে থাকা ক্যাফিন আর জেনিস্টেইনের প্রভাবে জমাট বাঁধতে পারে না টাও প্রোটিনের ফাইব্রিলস। ফলে কমে আলঝাইমার্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে Journal of Agricultural and Food Chemistry তে।
অন্যদিকে,কফির নেশাতেই বাড়তে পারে আয়ু। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই এক আশ্চর্য তথ্য। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাঁদের গবেষণায় জানিয়েছেন, কফি বেশি খেলে অ্যালঝাইমার্স, ডিমেনশিয়ার মতো স্মৃতিভ্রম রোগ, এমনকী ক্যানসারের ঝুঁকিও কমতে পারে। কফিতে মেলে ক্যাফিন। মানুষের আয়ু নির্ভর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর। কফি প্রতিরোধ করে কার্ডিওভাস্কুলার রোগ থেকেও।এমনটাই মনে করেন গবেষকরা। খাবার হজম করতে ও অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে কফি। ‘Nutrients Journal’ নামে গবেষণাপত্রে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। ফ্রান্সের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল রিসার্চ (INSERM)- এর এমিরেটাস রিসার্চ ডিরেক্টর অ্যাস্ট্রিড নেহলিগের তত্বাবধানে গবেষণাটি হয়েছে। ১৯৪টি গবেষণাপত্র বিচার করে দেখা গেছে প্রতিদিন ৩-৪ কাপ কফি খাওয়াকে মাঝারি মাপের কফি সেবন বলে ধরা হচ্ছে। এতে ক্ষতির কিছু নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
গবেষণায় গলব্লাডারের পাথর হওয়া আর প্যানক্রিয়াটিসের সমস্যা কফি আটকাতে সক্ষম কিনা তার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সময় নানান গবেষণায় দেখা গেছে, ডাইজেস্টিভ হরমোন গ্যাস্ট্রিন যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে তার নিঃসারণ ভালো ভাবে ঘটাতে সাহায্য করে কফি। পাকস্থলী থেকে নিসৃত হয় উৎসেচক বাইল। এই উৎসেচকের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে Cholecystokinin (CCK) নামে একটি হরমোন। কফি এই হরমোনকে স্টিমিউলেট করে কার্যকারিতা বাড়ায়। অন্ত্রে বিভিন্ন রকমের ভালো ব্যাক্টেরিয়া থাকে। তার কম্পোজিশনে বদল ঘটায় কফি।কফির প্রভাবে খুব সহজে খাবার হজম হয়। হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা (hepatocellular carcinoma) নামে এক ধরনের লিভারের ক্যানসার আটকাতে সক্ষম কফি। ‘Journal of Obstetrics and Gynaecology Research’ নামে মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে বেশি পরিমাণে কফি খেলে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে।