বিনোদনশিক্ষা

ট্রোলিং, বুলিং’কে কাটিয়ে কান চলচিত্র উৎসবে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ! জীবনকাহিনী জানলে অবাক হবেন

Cannes 2024: Nancy Tyagi and Ankush Bahuguna Shines at the Cannes 2024, truly inspiring story

The Truth Of Bengal : আচ্ছা ‘কান চলচিত্র উৎসব’ মানে কি শুধুমাত্রই হাই প্রোফাইল তারকাদের ভিড়? সেখানে শুধু কি দামী পোশাকে, অলঙ্কারে সেজে ওঠেন নাম করা শিল্পীরা? কেন ভারতের মতো দেশে যেখানে অভাব নেই শিল্পীদের, সেখানে তাঁদের প্রতিভা দেখানোর সঠিক স্থান পাননা কিছু নতুন মুখেরা? তবে এর বিকল্প ঘটল এবছর। যেখানে ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের মতো সুন্দরী অভিনেত্রীদের গ্ল্যামারের সোভায় আলোকিত হয়ে ওঠে ‘কান’ সেখানে প্রথা ভেঙ্গে একজোড়া নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটল  ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪’এ। দেখা মিলল কিছু নতুন মুখের! যদিও নতুন মুখ বলাটা বেঠিক কারণ ‘কান’-এর মতো উৎসবে তাঁদের মুখ নতুন হলেও, ইনস্টাগ্রামে টপ ট্রেন্ডিং-এ তাঁরাই থাকেন।

কার কথা বলা হচ্ছে আশাকরা যায় বুঝতে পারছেন! আচ্ছা একটু সহজ ভাবে বলা যাক। ‘মেট গালা ২০২৪’ এর রেকর্ড করা সাফল্য কোথাও গিয়ে ভাবিয়ে তুলেছিল এই নতুন প্রজন্মকে। যেখানে ভারত থেকে এই প্রথম কোনও পুরুষ ফ্যাশন ডিজাইনার নিজের হাতের যাদুতে কাবু করেছিলেন গোটা হলিউড’কে। তাঁর ডিজাইন করা শাড়ির ফরম্যাট এবং এবছরের থিম জে.জি.ব্যালার্ড এর ছোট গল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত দ্য গার্ডেন অব টাইম, জেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল সেইদিন। আলিয়ার শাড়ি, যা এখনও বহু মেয়েদের কাছে অবসেশন মাত্র। সেখানেই ‘মেট গালা’র ন্যায় এবার কান চলচ্চিত্র উৎসব’এও দেখা গেল নতুন চমক।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Ankush Bahuguna (@ankushbahuguna)

ইনস্টাগ্রাম খ্যাত অঙ্কুশ বহুগুনা সঙ্গে পরিচিত অভিনেতা হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে গণমাধ্যম জুড়ে, এবার সেই শিল্পীই জায়গা করে নিলেন ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’এ। এই প্রথম ভারতবর্ষ থেকে কোনও পুরুষ ফ্যাশন ও বিউটি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন ফ্রান্সের এই অনন্য সন্ধ্যায় অঙ্কুশ। এই মাইলফলক তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর উচ্ছ্বাসিত তিনি ও সঙ্গে তাঁর মিলিয়ন সাবসক্রাইবার এবং অনুরাগীরা। তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে পরিচিত তাঁর মেকআপ টিউটরিয়াল এবং কমেডি কনটেন্ট’র জন্য। সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রোলিং, বুলিং সহ নিজেকে বহু ওঠা-পড়া এবং কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়েই একটা এমন স্টেজে তুলে ধরেছেন যেখান থেকে কেবল মানুষের কাছ থেকে আশীর্বাদ এবং ভালোবাসা কেড়ে নেওয়া সম্ভব। তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়েও তাঁকে যখন নেটিজেনদের কাছে থেকে ট্রোলিং কিংবা বুলিং এর শিকার হতে হয়, নানান মন্তব্য যেগুলো হৃদয়কে ভেঙ্গে ফেলতে দু-মিনিট সময় নেয়না সেগুলকে তিনি মজার ছলে নেন। উত্তরে সপাটে তিনি তাঁর এমন মন্তব্য করে বসেন কমেন্টের রিপ্লাই’তে যাতে সমর্থক জানান শত্রুরাও। তাই জবাব দেওয়া এবং জবাব দেওয়ার আগে কাজে করে দেখানো যে কতটা প্রয়োজন সেটা তিনি সিখিয়ে দিয়েছেন তা বলাবাহুল্য। সঙ্গে তাই নয়। এমন মুখেরা যদি আরও বেশি করে এগিয়ে আসেন তবে কিছু মানুষ আছেন যারা আরও সাহস পাবেন বলেই মনে করেন ক্রিটিকরা, তাঁদের নিজের প্রতিভা এবং নিজের শিল্প আরাও মন খুলে দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Ankush Bahuguna (@ankushbahuguna)

অঙ্কুশ এদিন তাঁর ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করে লেখেন, “এটা সেই সময়ের জন্য যখন থেকে আমি চেষ্টা করেছি নিজের কনফিডেন্টকে সর্বনিম্ন স্থান থেকে ওপরে তুলে আনতে। আমি ভারতের প্রথম পুরুষ সৌন্দর্য স্রষ্টা হিসাবে গত রাতে কানের রেড কার্পেটে হেঁটেছি। আমি যদি আমার সাথে ৮ বছর বয়সী অঙ্কুশকে নিয়ে যেতে পারতাম যে স্কুলে যেতে ভয় পেত, কারণ সবাই তাকে উত্যক্ত করত, তার  চেহারার জন্য তাকে বঞ্চিত করত, তাকে ব্যাঙ বলে ডাকত কারণ তার চোখ তার মুখের জন্য খুব বড় ছিল, হাতগুলি খুব খসখসে ছিল, যে যথেষ্ট পুরুষ হয়ে উঠতে পারেনি এবং যে দেখিয়েছিল কেও একজন নিজেকে ঠিক কতটা ভালবাসতে পারে নিজের মতো থেকে। আমি আশা করি সে দেখতে পাবে যে, সে আজ নিজেও এই উদযাপনের অংশ এবং যোগ্য। এখানে  প্রত্যেককের জন্য এটাই বলার যে যারা হাল ছেড়ে দেওয়ার ওই একটা শতাংশকে কেন বেছে নেব যেখানে আরও ৯৯ টি কারণ রয়েছে! আমি তোমাকে দেখছি, এবং একদিন পৃথিবীও দেখবে..”। যা একপ্রকর সেই সকল হাল ছেড়ে দেওয়া প্রাণ গুলিতে প্রান ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Nancy Tyagi (@nancytyagi___)

তাছাড়াও এদিন শুধুমাত্র অঙ্কুশ নন, ইনস্টাগ্রাম পরিচিত ন্যান্সি ত্যাগী। করোনার সময় নিজের UPSC এর স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে নিজের সেলাই মেশিনকেই সম্বল করে নেন এই ইনফ্লুয়েন্সর। যার কথা বার্তায় রয়েছে এখনও গ্রাম্যটান সঙ্গে আদব কায়াদাতেও নেই বিদেশি ছাপ। তবে আছে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস। নিজের ডিজাইন করা পোশাকে ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’এ লাল গালিচায় পিঙ্ক রঙের গাউনে যখন নিজেকে আত্মপ্রকাশ করছিলেন, স্বপ্নকে দুচোখ ভরে দেখছিলেন বাস্তব হতে, অনুভব করছিলেন, সেইসময় তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জামাটির ডিজাইনার কে? তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, “এটা আমার বানানো, আমার নিজের ডিজাইন করা জামা”। নজর কারেন সকলের যখন তাঁকে ইংরেজীতে প্রশ্ন করা হয়, ইংরেজী না জানলেও থেমে জাননি কোথাও। সেইসময় সাহায্য নিয়ে প্রশ্নকে হিন্দিতে অনুবাদ করিয়ে পরে উত্তর গোটা তিনি হিন্দিতেই দেন। তিনি তাঁর উত্তরে এটাই বলেন যে, “এত বড় স্বপ্ন আমি কখনও দেখিনি। এই জামাটি আমি নিজেই বানিয়েছি। আমার নিজের ডিজাইন করা জামা। এক মাস সময় নিয়ে এই জামাটি আমি বানিয়েছি”। তাঁর ইনস্টাগ্রামের কন্টেন্ট গুলিতে মূলত তাঁকে কম দামে ফেবরিক কিনে জামা বানাতে দেখা যেত এবং যা কোনও বলিউড কিংবা হলিউডের তারকাদের জামা দ্বারা অনুপ্রাণিত থাকত। তবে এদিন নিজের জামা নিজের জন্য বানিয়ে তাও আবার এমন স্টেজে যে কথাও গিয়ে ন্যান্সি ত্যাগী এদিন নিজেকে নয়, ভারতের প্রত্যেকটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।

 

Related Articles