সম্পাদকীয়

চিকিৎসকদের সমস্যায় ১০কোটি লোক খেসারত দেবে কেন: কুণাল সরকার

Why will 10 crore people pay for the problem of doctors: Kunal Sarkar

Truth of Bengal,জয় চক্রবর্তী: গরুর পালে বাঘ পড়ার গল্প শুনিয়ে স্কুলের মাস্টার মশাই যখন প্রশ্ন করেন, কী শিখলি? ছাত্রের জবাব, ‘সত্যি বললে লোক আসে না, মিথ্যে বললে ভিড় জনতা’ পূজারি কুণ্ডুয়াশিসের ‘উলট পুরাণ’ কবিতার লাইনগুলি কোথাও যেন মিলে যাচ্ছে। ‘‘আমাদের স্বার্থে জুনিয়র চিকিৎসকরা সবাইকে একত্রিত করে সমস্যাগুলিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে আন্দোলন করার সৎ সাহস দেখিয়েছেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিষয়টিকে বিভ্রান্তিতে নিয়ে যাচ্ছে। এটা কিন্তু আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে’’ কয়েকশো ডিগ্রি ঘুরে একেবারে অন্য মন্তব্য করলেন কলকাতার প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ কুণাল সরকার। জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন তথা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছেন ডাঃ সরকার।

কিন্তু তিনি আলোচনার টেবিলে সমস্যা মেটানোর পক্ষে। তাঁর সাফ বক্তব্য, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকরা আদর্শবাদী। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কী কী ঘাটতি রয়েছে সেগুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে যদি কর্মবিরতি করা যায় তা হলে তো ডাক্তাররা কাজ করার সুযোগই পাবেন না।’’ সেই সঙ্গে তিনি যোগ করলেন, ‘‘তারা (জুনিয়র চিকিৎসক) স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে ভাবছেন।

এটা প্রয়োজন। কাজের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিভিন্ন কথা চলতেই পারে। তাই আমি অবশ্যই বলব কর্মবিরতি ফিরিয়ে নিক জুনিয়র চিকিৎসকরা।’’ ডাঃ সরকারের সঙ্গে একই মত পোষণ করেছেন কলকাতার আরও একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস। তিনি বলেছেন, ‘‘ঘটনা যেদিকে যাচ্ছে সেটা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। মনে রাখতে হবে বহু মানুষ সরকারি চিকিৎসার ওপর নির্ভর করেন।

সেই জায়গা থেকে বারবার যদি কর্মবিরতি হয়, তা হলে সমস্যায় পড়ে সাধারণ মানুষ।’’ কর্মবিরতি নিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকরা আরও একটু ভাবুক– এই অনুরোধ করে ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস জানালেন, শুরুটা হয়েছিল একটা নির্মম ঘটনার প্রতিবাদকে ঘিরে। কিন্তু বারবার এই ধরনের কর্মবিরতিতে মানুষের ধারণা অন্যরকম হবে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন, এটা কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত? ‘‘বর্তমানের আন্দোলন এবং পরিপ্রেক্ষিতের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। থ্রেট কালচারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা তো বাইরের থেকে আসছে না।

ডাঃ কুণাল সরকার

‘‘যেটা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার ধার কমেছে’’
‘‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিষয়টিকে বিভ্রান্তিতে নিয়ে যাচ্ছে’’
‘‘এটা স্বাস্থ্য বা চিকিৎসকদের সমস্যা, আমজনতার সমস্যা নয়– এটা বুঝতে হবে’’
‘‘চিকিৎসকদের সমস্যায় ১০ কোটি মানুষকে খেসারত দিতে হবে কেন?’’
‘‘আমি অবশ্যই বলব কর্মবিরতি ফিরিয়ে নিক জুনিয়র চিকিৎসকরা’’

এটা তো বাই দ্যা ডক্টরস- ওন দ্যা ডক্টরস। এটা তো সাধারণ মানুষের সমস্যা নয়। এটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যারা জড়িত অর্থাৎ মেডিক্যাল কমিউনিটির সমস্যা’’– এমন চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করলেন ডাঃ কুণাল সরকারের। বেশ কিছু ইনকোয়ারি কমিটি তৈরি হয়েছে। সেগুলি সবটাই ধূর্ততার বশে তৈরি হয়েছে তা নয়। এগুলি থেকে কোনও ফলাফল নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে এই আশাও করেছেন ডাঃ সরকার।

তিনি বলেছেন, ‘‘আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের যে নিকৃষ্টতম ঘটনা ঘটেছে তার তদন্ত চলছে। যা নিয়ে আমরা সবাই জাস্টিস চাইছি, এটা তখনই সমাধান সূত্র বের হবে যখন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মুষ্টিমেয় ১০-১২ জন ছেলে-মেয়ে যারা বিষয়টা জানে তারা তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর সামনে বলুক”। তিনি আরও জানালেন, ‘‘সিবিআইকে যদি তাদের স্ট্যাটাস রিপোর্টে বলতে হয়, আমরা অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু আরজি করের ভেতর থেকে মূল কথাটা বেরিয়ে আসেনি। তা হলে তো কঠিন চুনকালি আমাদের মুখে আর কোনওদিন পড়বে না।’’

কলকাতার এই ঘটনা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে থাকা, তাদের আন্দোলনকে সমর্থন করে এসেছেন কলকাতার এই প্রখ্যাত চিকিৎসক। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি চিকিৎসকের মনে সন্দেহ দানা বেধেছে। একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন চিকিৎসক কুণাল সরকার। তিনি বলেছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে মেয়েটিকে তো রাস্তার লোক এসে মারেনি।

’’ তা হলে কিসের ইঙ্গিত করছেন ডাঃ সরকার? তাঁর পরবর্তী যুক্তি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্ফোরক। বলেন, ‘‘আমরা দুর্যোধন-দুশাসনের বংশকে প্রতিপালন করেছি। যে কোনও বদ কাজের জন্য রাজনৈতিক মদত থাকে… ছিল। আমরা তাকে দুধ সাপ্লাই করেছি যারা রাজনৈতিক বিধাতা তারা ভিটামিন খাইয়েছেন। খেয়ে এখন অনেকেই মহা দানবে পরিণত হয়েছে। তারপর তারা এসব দৌরাত্ম্য করেছে।

কিন্তু এটা কখনওই সাধারণ মানুষের সমস্যা নয়। চিকিৎসকদের বা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অন্তর্নিহিত সমস্যা।’’কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নিকৃষ্টতম ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীর ফাঁসি চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার পরেই তদন্তে নেমে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একজনকে গ্রেফতারও করেছিল কলকাতা পুলিশ।

এই ঘটনার জেরে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন এবং কর্মবিরতি শুরু হয়। রাজ্য সরকারের সদিচ্ছায় প্রাথমিক ক্ষেত্রে সাড়া দিচ্ছিলেন না জুনিয়র চিকিৎসকরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করেন। জুনিয়র ডাক্তারদের দেওয়া প্রায় সমস্ত শর্তই মেনে নিয়েছে নবান্ন। এমনকী কলকাতা পুলিশের নগরপালকেও সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তার জন্য যাবতীয় সমস্ত কাজ এগোচ্ছে। এই অবস্থায় ফের জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি। আমজনতা ফের চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন কলকাতার প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ কুণাল সরকার। সুপ্রিম কোর্টের শুনানি নিয়ে রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট সমস্যার সঙ্গী হয়ে যাচ্ছে। দেশের এই রাজ্যে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে একটা সরকার এসেছে, সবথেকে অভিজ্ঞ মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন।

সেখানে কটা সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হবে এইটা কি আলোচ্য বিষয়? আমাদের মোবাইলে ক্যালকুলেটর ছিল না? মনে হচ্ছে যেন ক্যাফেটেরিয়াতে আলোচনা হচ্ছে। দেড়শো-দুশো আইনজীবী তেড়ে রোজগার করছেন। আর ডাক্তাররা কেঁদে ভাসাচ্ছেন।‌ এটা স্বাস্থ্য বা চিকিৎসকদের সমস্যা, আমজনতার সমস্যা নয়। এটা বুঝতে হবে।’’ ‘‘যেটা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার ধার কমেছে’’—আন্দোলনের বর্তমান গতিপ্রকৃতি নিয়ে এমনই জানালেন চিকিৎসক কুণাল সরকার।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা সন্দীপ ঘোষকে ক্রিমিনাল হিসাবে চিহ্নিত করেছি। কিন্তু তিনি তো তৎকালীন সময় ডাক্তার ছিলেন। এবং তাঁর সহকর্মীরা একসঙ্গে যদি মেয়েটিকে ঝামেলায় ফেলে থাকে তারাও তো ডাক্তার। সেই পাঁচজন এখনও কেন ভয়ে গুটিয়ে থাকবে, আর তার জন্য বাকি ১০ কোটি মানুষকে খেসারত দিতে হবে? এটা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ আরজি করের ঘটনা এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমতো বিস্ফোরক কথা বললেন ডাঃ কুণাল সরকার।

Related Articles