সম্পাদকীয়

নির্মল, স্বচ্ছ সমুদ্র ও সমুদ্রতটের তাগিদ

The need for clean and clear seas and beaches

Truth Of Bengal: বিপ্লব চৌধুরী: আমাদের সবার জানা সমুদ্র মন্থনে দেবতারা অমৃত লাভ করেছিলেন। কিন্ত আজ সেই সমুদ্র ক্রমশ বিষাক্ত ও দূষিত হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর মোট ভূ-ভাগের প্রায় ৭১ শতাংশ জুড়ে রয়েছে সমুদ্র এবং পৃথিবীতে প্রাপ্ত জলের  ৯৭ শতাংশ হল সাগর ও‌ মহাসাগরের জল। যদিও লবণাক্ত হওয়ার কারণে সমুদ্রের জল পানযোগ্য নয় তবুও জল চক্র, খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সমুদ্রের জলের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আমাদের পৃথিবীর অস্তিত্বের প্রাণরস লুকোনো আছে সমুদ্রে। সারা বিশ্বব্যাপী সমুদ্র থেকে ২.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় উৎপন্ন হয়ে থাকে প্রতি বছর। পৃথিবীর ৫০-৭৫ শতাংশ অক্সিজেনের জোগান আসে সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন বা উদ্ভিদজাত প্ল্যাঙ্কটন থেকে এবং সমুদ্র ৩০ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে নেয়।

আর আজ মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডের ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন। একটা বিশাল সংখ্যক সামুদ্রিক জলজ জীবের প্রাণ শেষ হয়ে যাচ্ছে সমুদ্র দূষণের জন্য যা কিনা পৃথিবীর জৈব-বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছে প্রচণ্ড মাত্রায়। ৮৮ শতাংশ প্রবাল প্রাচীর ক্ষয় পেয়েছে ইতিমধ্যে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্ট অনুযায়ী বছরে ৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য প্রবেশ করছে সমুদ্রের জলে। সমুদ্র উপকূলের নিকটবর্তী এলাকায় মানুষের বসতি গঠন, বাড়ি-ঘর ও হোটেল নির্মাণ সমুদ্রের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাচ্ছে। সমুদ্র সৈকতগুলিতে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের উপস্থিতি ও তাদের দ্বারা সমুদ্র সৈকত নোংরা করা, যত্রতত্র প্লাস্টিকের বোতল ও প্যাকেট পড়ে থাকা, সমুদ্র দূষণের প্রধান কারণ। এছাড়াও তৈল বর্জ্য ও অতিরিক্ত মৎস্য শিকার এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য।

ফলস্বরূপ জলবায়ুর পরিবর্তন, সমুদ্রের অম্লীকরণ ঘটছে ও সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সাধের পৃথিবীর জন্য আগামীতে অপেক্ষা করছে ভীষণ বিপদ। সুতরাং সমুদ্র সংরক্ষণের তাগিদ ও প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে কাম্য হয়ে উঠেছে।