
সঞ্জয় ব্যানার্জী: ডিমেনশিয়া একটি মানসিক রোগ। এই মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির বুদ্ধি, স্মৃতি ও ব্যক্তিত্ব লোপ পায়। স্মৃতিভ্রংশ বা ভুলে যাওয়া রোগ ডিমেনশিয়া। ডিমেনশিয়া রোগের আক্রান্ত ব্যাক্তি ধীরে ধীরে আলঝাইমার্স রোগের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। আধুনিক যুগে প্রায় বাড়িতেই কেউ না কারও না কারও বা কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা আছে এই মানসিক রোগের শিকার ব্যক্তির সম্পর্কে বা এই রোগ নিয়ে। চিত্তভ্রংশ বা স্মৃতিলোপ পাওয়া ডিমেনশিয়া সমগ্র পৃথিবীতে ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে।
সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হন বেশি। এই রোগের সাধারণত কোনও বিশেষ উপসর্গ থাকে না। হঠাৎ করেই অনেক কিছুই মনে করতে পারেন না এই মানসিক রোগের আক্রান্ত ব্যক্তিরা। আস্তে আস্তে সব কিছুই হারিয়ে যায় তাঁদের স্মৃতি থেকে। প্রথমে অল্প পরে নিজেকেই আর চিনতে পারেন না এই রোগের আক্রান্ত ব্যক্তিরা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক মানুষের কিছু না কিছু মানসিক ভাবে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা আসে। ছোটোখাটো ভুলে যাওয়া কিন্তু কোনও রোগ নয়। ডিমেনশিয়া বা আলঝাইমার্স রোগে আক্রান্ত তা বলা যায় না। ভুলটা যখন বিশদ আকার নেয় তখনই মানসিক রোগের সমস্যার শিকার বলা হয়।
ডিমেনশিয়া বা আলঝাইমার্স মানুষের মস্তিষ্কের কোষের কারণে হয়। আস্তে আস্তে মস্তিষ্কের কোষগুলি শুকিয়ে যেতে থাকে। সাধারণত ৬৫ থেকে ৬৯ বছর বয়সের পর ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এই রোগকে তাই বার্ধক্যজনিত রোগ বলা হয়। বিস্তারিত গবেষণার পর দেখা যায় যে এই রোগের বৃদ্ধি সমগ্র পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা প্রতি পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হয়। এখন এই মানসিক রোগ সম্পর্কে মানুষ খুবই সচেতন। তার প্রধান কারণ এই স্মৃতিভ্রংশ রোগের কোনও চিকিৎসা বা ওষুধ এখনও সম্পূর্ণ নিরাময়ের পথ দেখাতে পারেনি।
ডিমেনশিয়া বা আলঝাইমার্স রোগের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে অনেক স্বনামধন্য সিনেমা পরিচালক সিনেমা তৈরি করেছেন। যাতে জনগণ এই রোগ বা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পর্কে আরও সচেতন হন বা বিস্তারিত জানতে বা বুঝতে পারেন।
২০১৫ সালের ছবি নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ে পরিচালনায় এবং অতনু রায়চৌধুরী দ্বারা উপস্থাপিত ছবি ‘বেলাশেষে’ খুবই ভাল একটি ছবি স্মৃতিভ্রংশ রোগের সচেতনতার জন্য।
আবার ঠিক তার দশ বছর পর আমরা দেখলাম ২০২৫ সালে সুমন ঘোষ পরিচালিত বাংলা সিনেমা ‘পুরাতন’ ছবিটি। এটিও খুবই ভাল সচেতনতার ছবি। পুরাতন ছবিটির প্রধান আকর্ষণ হলেন একসময়ের স্বনামধন্য নায়িকা শর্মিলা ঠাকুর। যিনি এই সিনেমাটিতে অনেক বছর পর স্মৃতিভ্রংশ একজন মানুষের চরিত্রে অভিনয় করে এই ছবিটিকে দর্শকমনের জায়গা করে দিতে পেরেছেন। বেলাশেষে, পুরাতন এইরকম সিনেমা আরও বেশি করে তৈরি হোক যাতে মানুষ ডিমেনশিয়া বা আলঝাইমার্স রোগ বা আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত সচেতন হতে পারে। কবি, সাহিত্যিক সিনেমা পরিচালক স্মৃতিভ্রংশ হয়ে যাওয়া এই রোগ নিয়ে মানুষকে আরও সচেতন করুন।