সম্পাদকীয়

আরজি কর ইস্যু নয়, উন্নয়নের নিরিখেই ভোট দেবেন মানুষ, মত নাগরিক সমাজের

RG is not a tax issue, people will vote for development, like civil society

Truth of Bengal: আবার একটা নির্বাচন চার মাসের ব্যবধান। আবারও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন মেদিনীপুর বিধানসভা এলাকার ভোটাররা। লোকসভা নির্বাচনে কয়েক মাস আগেই ভোট দিয়েছেন। তার আগে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের জুন মালিয়াকে। তার আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সংসদ প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বিজেপির দিলীপ ঘোষকে।

অর্থাৎ দু’বছরের ব্যবধানে মেদিনীপুরের ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নেন বিজেপির থেকে। আর সেই ধারা বজায় রাখেন তিন মাস আগের লোকসভা ভোটেও। আগামী ১৩ ই নভেম্বর রাজ্যের ছয়টি বিধানসভার উপনির্বাচন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এই মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্র। তৃণমূল কংগ্রেস এবার এই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে ঘরের ছেলেকে। তৃণমূল নেতা সুজয় হাজরা মেদিনীপুর জেলা রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির শুভজিৎ রায়।

তিনিও স্থানীয় রাজনীতিতে পরিচিত। পাশাপাশি এই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে সিপিআই এবং কংগ্রেস। এর আগের নির্বাচনগুলিতে বাম কংগ্রেস জোট হলেও এবার আলাদা আলাদা করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে এই দুই দল। সিপিআই এর হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মণিকুন্তল খামরুই এবং কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন শ্যামল কুমার ঘোষ। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে মূল লড়াই হতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির।

এই নির্বাচনের কিছুদিন আগেই বঙ্গ রাজনীতি উত্তাল হয়েছিল আরজিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত রাত জাগো কর্মসূচি বাংলার মানুষ দেখেছে। আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলগুলিও রাজ্য সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করে। সরাসরি আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে পতাকা নিয়ে অংশগ্রহণ না করলেও পিছন থেকে বিজেপি ও বামেদের মদত ছিল।

এই অভিযোগ প্রথম থেকেই করে আসছে শাসক দল তৃণমূল। এই আন্দোলনের আঁচ কি বিধানসভা ভোটের উপনির্বাচনে কোন প্রভাব ফেলবে? কোন কোন ইস্যু এবারের নির্বাচনে ফ্যাক্টর হতে পারে? এই নিয়ে জোর চর্চা চলছে মেদিনীপুরের অলিতে গলিতে। তবে রাজনৈতিক পারদ যখন চড়ছিল হঠাৎ করেই নিম্নচাপ ‘দানা’ দানা বাঁধে। ফলে রাজনৈতিক আলোচনার থেকেও চর্চায় বেশি উঠে আসে ‘দানা’র গতিপ্রকৃতি।

এর মধ্যেই সব দলের প্রার্থীরাই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি প্রচারেও নেমে পড়েছেন। মেদিনীপুরের ভোটারদের অনেকেই বলছেন, উপনির্বাচনে মানুষ ভোট দেবেন এলাকার সার্বিক উন্নয়নের দিকে নজর রেখে। বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা মানুষের দরবারে কতটা পৌঁছেছে তার ভিত্তিতে। এই নির্বাচন রাজ্যে সরকার গঠনের নির্বাচন নয় বা কেন্দ্রের সরকার গঠনের নির্বাচন নয়।

ফলে সাধারণ মানুষ সার্বিক উন্নয়নের বিষয়টাই দেখবেন। আর এক্ষেত্রে আর জি করের প্রভাব পড়বে না বলেই মত ভোটারদের বড় অংশের। স্থানীয় নাগরিকদের একটা বড় অংশ মনে করেন আরজিকরের মত ঘটনা শুধু একটা রাজ্যের ঘটনা নয়, দেশের সার্বিক সমস্যা। দেশের সুপ্রিম কোর্ট সেই কারনেই বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে দিয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রটি বিজেপির হাতছাড়া হয়।

২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন বিজেপির ডাকসাইটে নেতা দিলীপ ঘোষ। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী বদল করে অগ্নিমিত্রা পলকে প্রার্থী করে। তৃণমূলের জুন মালিয়া তাঁকে পরাজিত করেন। মেদিনীপুর বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন জুন মালিয়া। সাংসদ হয়ে যাওয়ার কারণে মেদিনীপুর বিধানসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। সেই কারণেই এই অকাল নির্বাচন।

Related Articles