সম্পাদকীয়

ফুলের নামকরণে রবীন্দ্রনাথ

Rabindranath Tagore on naming flowers

সঞ্জয় ব্যানার্জী: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব ফুল ভালবাসতেন। শান্তিনিকেতনে অনেক ফুলের নাম তিনি নিজে দিয়েছিলেন। আমরা শান্তিনিকেতনে বহুবার বেড়াতে গিয়েছি, সোনাঝুরির হাটে আমরা অনেকেই কতবার গিয়েছি। এই সোনাঝুরি নামকরণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া।

সোনাঝুরির প্রকৃত নাম ‘আকাশ মনি’। এই সোনাঝুরি ফুল দেখলে মনে হবে সত্যিই যেন সোনা ঝরে পড়ছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক ফুলের নামকরণ করেছেন। যেমন– বাঁদরের পায়ের মতো কালো একধরনের ফুলকে স্থানীয় লোকজন বাঁদরলাঠি বলতো।

এই বাঁদরের লাঠি ফুলকে রবীন্দ্রনাথ নামকরণ করলেন ‘অমলতাস’ নামে। জঙ্গলে একধরনের রঙিন ফুল ফুটতো সেই ফুল দেখে রবীন্দ্রনাথ নামকরণ করেছিলেন ‘বনপুলক’ নামে। শান্তিনিকেতনের বাগানে ছোট ছোট সাদা ফুলের গালিচা পাতা থাকতো। তার নাম ‘হিমঝুরি’ সারারাত হিমের মতো ঝরতে থাকতো বলে রবিঠাকুর এই রকম নামকরণ করেছেন। স্থানীয় লোকে এই ফুলকে জানতো ‘নিমচামেলি’ নামে।

হলুদ রঙের আরও একধরনের বনফুলকে কবিগুরু নামকরণ করেছেন ‘অলকানন্দা’ নামে। এইরকম অনেক বনফুলকে কবি জঙ্গল থেকে আনিয়ে তাঁর শান্তিনিকেতনের বাগানে লাগিয়ে ছিলেন। রঙিন ফুলের মতো দেখতে ‘বনপুলক’ ফুলটি অন্য জাতের হলেও এই ফুলের গন্ধ কোমল অথচ ব্যাপক।

কবির বিদেশি বন্ধু পিয়ার্সন সাহেব উত্তরায়নের উঠোনে একটি বিদেশি ফুলের চারা পুঁতেছিলেন। সেই গাছের ফুলটি ছিল নীলচে বেগুনি রঙের।

ফুলের শোভায় মুগ্ধ হয়ে কবি সেই ফুলের নামকরণ করেছিলেন ‘নীলমনি লতা’। ফুল নিয়ে কবি অনেক গানও রচনা করেছিলেন।

মধুমঞ্জরী নামক একটি ফুলকে নিয়ে কবি লিখলেন–

‘ওগো বধূ সুন্দরী, তুমি মধুমঞ্জরী

পুলকিত চম্পার লহো অভিনন্দন।’

থোকা থোকা মাধবীফুলকে নিয়ে কবি লিখলেন সুন্দর একটি গান।

‘হে মাধবী দ্বিধা কেন, আসিবে কি ফিরিবে কি।’

মালতি ফুল সাদা রঙের ও সুগন্ধি। অনেকটা শিউলি ফুলের মতো দেখতে। কবি গান লিখলেন–

‘ওই মালতীলতা দোলে

পিয়ালতরুর কোলে পূব হাওয়াতে।’

আবার পল্লিতে এইরকম একটি বাড়ির নামকরণ কবি ফুলের নামে করেছিলেন।

‘গুলঞ্চ’।

Related Articles