আদিবাসী সমাজের জীবনযাত্রার দিশারী পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু
Pandit Raghunath Murmu, a guide to the lifestyle of tribal communities

কবিতা হেমব্রম: পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু। অলচিকি ভাষার প্রবর্তক। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার ডাহারডিহি গ্রামে ১৯০৫ সালে ৫ মে বৈশাখী পূর্ণিমা দিন পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু জন্মগ্রহণ করেন। ছোট থেকেই তিনি দেখতে পেতেন উচ্চবর্ণের মানুষজন আদিবাসী পিছিয়ে পড়া মানুষকে ঘৃণা উপেক্ষা অপমান করে দূরে সরিয়ে রাখার কৌশলগত ব্যবস্থা। যার ফলে মাঝেমধ্যে উনি খুব দুঃখপ্রকাশ করতেন, আর বলতেন আমরা তো সকলেই মানুষ তা হলে এত ভেদাভেদ কেন। তারপর ছাত্র জীবন থেকে পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারলেন, আদিবাসী সমাজের মানুষদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন সমস্যার দিকগুলি।
তিনি উপলব্ধি করলেন এর থেকে রেহাই পেতে হলে শিক্ষার দরকার। তাই প্রথমে তিনি সাঁওতালি ভাষার লিপি তৈরির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিলেন। অনেক সংগ্রাম করে ১৯২৫ সালে উক্ত ভাষার লিপি সৃষ্টি করলেন। লিপির নাম দিলেন অলচিকি। পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু শুধু অলচিকি ভাষার প্রবর্তক ছিলেন না। তিনি কবি, নাট্যকার, যাত্রাপালাকার, এবং বিদগ্ধ দার্শনিকও ছিলেন। তার রচনা সাঁওতালদের জন্য সহজ ব্যাকরণ বই খুবই জনপ্রিয়। এছাড়া সাঁওতালদের জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, বিষয়ে,নীতির বিধান বই। আত্ম জিজ্ঞাসা, ও প্রেরণামূলক বই। উপদেশ মূলক ও গানের বই। তিন খণ্ডে একত্রিতভাবে তিনি লিখেছেন মহাকাব্য। ইত্যাদি আরও অনেক বই তিনি লিখেছেন।
এই মহান পণ্ডিতের জন্মজয়ন্তী পালিত হল সাঁইথিয়া ব্লকের ওমরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে সহিষপুর গ্রামে আনন্দপাঠ শিক্ষা কেন্দ্রে। বিমল বাস্কের মহতী উদ্যোগে এবং তার স্ত্রী আনন্দ পাঠের শিক্ষিকা সরলা টুডুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানটি হয়। উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবী জয়দেব দেবাংশী। অনুষ্ঠান শুরুতে রঘুনাথ মুর্মুর ছবিতে সকলে মাল্যদান করেন, তারপর সমবেতভাবে সংগীত পরিবেশিত হয়। এরপর বিমল বাস্কে রঘুনাথ মুরমুর জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন। জয়দেব দেবাংশী পণ্ডিতের শিক্ষার আন্দোলন আদিবাসী সমাজে এবং তার প্রয়োগের কথা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলেন। এরপর আনন্দ পাঠের ৩৫ জন ছেলেমেয়েদের নিয়ে, গান নৃত্য, ছড়া, ও অলচিকি ভাষায় রচনা লেখার পর্ব শুরু হয়। শেষে ছেলেমেয়েদের পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হলো। এই মহতী অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিলেন শ্রাবণ সরেন, লখিন্দার মুর্মু, পুষ্পা মুরমু, সূচনা মুরমু এবং আরও অনেকে যুক্ত হয়েছিল।
পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু ১৯২৫ সালে সাঁওতালি ভাষার জন্য অলচিকি লিপি তৈরি করেন। এই লিপি সাঁওতালি ভাষার লিখিত রূপ দিতে সাহায্য করেছে, যা আগে শুধুমাত্র মৌখিক ছিল। অলচিকি লিপি ব্যবহার করে মুর্মু সাঁওতালি ভাষায় বিভিন্ন নাটক, কবিতা এবং বই রচনা করেন। অলচিকি লিপি এবং সাঁওতালি সাহিত্য আদিবাসী সংস্কৃতিকে প্রচার করতে সাহায্য করেছে। পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু একজন ভাষাতত্ত্ববিদ, লেখক এবং নাট্যকার ছিলেন। তিনি সাঁওতালি ভাষা এবং সংস্কৃতির উপর গভীর জ্ঞান রাখতেন। আদিবাসী সমাজের উন্নতি ও তাদের অধিকারের জন্য কাজ করেছেন। তিনি ‘হিতাল’ নামক একটি বিখ্যাত বই রচনা করেছেন। পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর কাজ আদিবাসী সমাজের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির দিশারী হয়ে উঠেছে।