সম্পাদকীয়

মহিলাদের যথাযথ সম্মান না জানালে কোনও জাতি উন্নতি করতে পারে না

No nation can progress without proper respect for women.

Truth Of Bengal: প্রভাত কুমার মিত্র: একটা জাতির সত্যিকারের উন্নতি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও মিলিটারি সামর্থ্য ও উন্নতি দেখে মাপা যায় না, এটি মূলত প্রতিফলিত হয়, সকল নাগরিকের বিশেষ করে নারীদের প্রতি সম্মান এবং মর্যাদা রক্ষা ও সুরক্ষার চেষ্টা ও পদ্ধতি দেখে। নারীদের সম্মান এবং মর্যাদা হচ্ছে সমাজের আয়না, যার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় সামাজিক নৈতিক স্বাস্থ্য। নারীদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করে কোনও জাতি দাবি করতে পারে না, সঠিক বা প্রকৃত উন্নয়নের।

সমাজের মূল ভিত্তি– নারীরা শুধুমাত্র সামজের অবদানকারী নয়, তারা সমাজের মূল ভিত্তি। মা হিসাবে, শিক্ষক হিসাবে, নেতৃত্বদানকারী হিসাবে এবং পরিবর্তনকারী হিসাবে, নারীরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন, যা একটি প্রজন্মের ভাগ্য বা ভবিষ্যৎ পথ তৈরি করে দেয়। তাদের প্রতি অশ্রদ্ধা বা অসম্মান দেখানো, একটি জাতির নৈতিক কাঠামোকে ক্ষুণ্ণ করে এবং মানব সম্পদকে দুর্বল করে!

অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতি– অসংখ্য গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, যখন নারীদের সম্মান করা হয়, তাদের শিক্ষার সুযোগ এবং ক্ষমতায়নের সুযোগ দেওয়া হয়, তখন অর্থনীতির দ্রুত অগ্রগতি হতে থাকে, পরিবারগুলি স্বাস্থ্যবান হয় এবং সমাজ অনেক স্থিতিশীল ও প্রাণবন্ত হয়।

নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রকাশের দরজা খুলে দেয়, যা বিভিন্ন কাজে নারীদের আরও বেশি অন্তর্ভুক্তির জন্য স্থায়ী উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়। এর ঠিক বিপরীত ফলাফল ঘটে, যে জাতি যখন নারীদের তাদের ন্যয্য স্থান থেকে বঞ্চিত করে, সেই জাতির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দারিদ্র বেড়ে চলে, এবং সমস্ত ক্ষেত্রে সামাজিক বিকাশ স্তব্ধ হয়ে যায়।

শিক্ষা ও সমতা– সম্মান প্রদর্শন শুরু হয় সমান সুযোগ দিয়ে-শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুযোগ এবং ন্যায়বিচারের মাধ্যমে, নারীদের বড় স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করে এবং নারী নেতৃত্বের সুযোগ দেয় তাদের প্রভাব বাড়াতে, সেই সমাজ দ্রুত উন্নতির মুখ দেখে।

জাতির নৈতিক দিকদর্শন– নারীদের প্রতি সম্মান জানানো শুধুমাত্র একটি সামাজিক নীতির বিষয় নয়, এটি একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা ও প্রয়োজনীয় অবশ্য করণীয় এক কাজ। যে জাতি লিঙ্গভিত্তিক হিংস্রতা, এবং অসাম্যকে প্রশ্রয় দেয়, তারা জাতির নৈতিক দিকদর্শন হারিয়ে ফেলে। সত্যিকারের সভ্যতা, টিকে থাকে নারীদের রক্ষা এবং সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে, উন্নয়নে, নারীদের সমান সুযোগ ও অংশীদার করে চলার মাধ্যমে এবং নারীদের সুরক্ষা, মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত করে।

যে জাতি নারীদের শ্রদ্ধা করে, সেই জাতি ভবিষতে সম্প্রীতি, সমৃদ্ধি এবং ন্যায়বিচারের ভিত গড়ে তোলে। নারীদের প্রতি এই সম্মান প্রদর্শন ব্যাতিরেকে যে কোনও উন্নয়নই অসম্পূর্ণ এবং ভঙ্গুর। সুতরাং, জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, মর্যাদা ও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত করে জাতির উন্নয়ন শুরু করতে হবে। শুধুমাত্র তখনই একটি জাতি উন্নত হতে পারে- শুধুমাত্র সম্পদশালী হিসাবে নয়, জ্ঞানগরিমা এবং মানবতার ক্ষেত্রে।

Related Articles