সম্পাদকীয়

মোবাইল এবং শিশু মন

Mobile and the child mind

Truth of Bengal,অনন্যা ভট্টাচার্য: আজকের দ্রুতগতির জীবনে মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব ছাড়া জীবন ভাবা যায়না প্রায়। এরপর নতুন এসেছে ভি.আর. প্রযুক্তি যাতে বাচ্ছারা একটি কৃত্রিম দুনিয়ার মধ্যে প্রবেশ করছে এবং সেখানে তাদের আবেগ, প্রতিবর্ত ক্রিয়া, মন, মনন সবটাই কিছুক্ষণের জন্য নিয়ন্ত্রণ করছে সেই কৃত্রিম দুনিয়ার পিছনের প্রযুক্তি। বাবা মায়েরা খুশি এবং গর্বিত কারণ এক তাঁদের সন্তানেরা প্রযুক্তি কে আত্মস্থ করতে পেরেছে বলে তারা মনে করছেন এবং দুই তাঁদের একটা ফাঁকা সময় তৈরী হচ্ছে যেখানে তাঁরা নিজেদের কাজে অথবা নিজেদের সাথে একটা সুন্দর সময় কাটাতে পারছেন কোনো পিছুটান ছাড়া। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে এই পিছুটান বিহীন কিছুটা সময় কাটানো কি বাবা মায়ের জন্য অন্যায়? উত্তর হলো কখনই না। শুধু আমাদের পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি থেকে যাচ্ছে। সেটা কিরকম? আসুন আমরা দেখে নি শিশু মনের ওপর স্ক্রিন টাইমের কি কি প্রভাব পরতে পারে।

একটি শিশু যখন একদম ছোট থাকে অর্থাৎ যখন সে non-verbal থাকে তখন সে চারপাশে শোনা শব্দবন্ধ গুলোকে নিজের ভিতরে সংগ্রহ করতে থাকে। যেকোনো শব্দ উচ্চারণের ক্ষেত্রে কয়েকটা উল্লেখযোগ্য জায়গা হলো শব্দ উচ্চারিত হওয়ার সময়ে আমাদের মুখ, ঠোঁট ইত্যাদির গঠন, জিহ্বার নড়াচড়া, শ্বাস বায়ুর আগমন এবং নির্গমন। এছাড়াও আরো অনেক গুলি ক্ষেত্র আছে যেগুলো উচ্চারণের জন্য জরুরী। আজকের যুগে জীবন ও যাপন দুইই দ্রুতলয়ে ছুটছে। এই গতির সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে বাবা-মা দুজনেই কর্মরত। এমতাবস্থায় সন্তানকে সহায়িকার হাতে রাখতে হচ্ছে। আপনাদের না থাকাকালীন অনেকক্ষেত্রেই আপনার সন্তানের হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বা টিভির সামনে বাচ্ছাকে বসিয়ে দিচ্ছেন। এতে সন্তানের ক্ষতি কি কি হচ্ছে?

প্রথমতঃ আপনার সন্তান একটি কৃত্রিম দুনিয়ার কিছু কার্টুন চরিত্রের সাথে পরিচিত হচ্ছে। যারা ওর কল্পনার জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

দ্বিতীয়তঃ সেই দুনিয়ার কথাবার্তার ধরণের সাথে সে পরিচিত হচ্ছে। যেখানে সে উচ্চারণের মাত্রা, মুখের গঠন, জিহ্বার চলন এমনকি কথা বলার সময়ের মুখের অভিব্যক্তি সম্পর্কে কোনো ধারণা তৈরী হচ্ছেনা।

তৃতীয়তঃ সে কথা বলার চেষ্টা করছেনা।

চতুর্থতঃ সে যেহেতু কৃত্রিম দুনিয়ায় ডুবে থাকছে ফলতঃ ধীরে ধীরে তার চারপাশে থাকা পরিবেশ বা পরিমণ্ডলের থেকে বিযুক্ত হচ্ছে। এই সমস্ত উপস্বর্গ গুলো ধীরে ধীরে বাচ্ছাকে Virtual Autism বা Spectrum এর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এটি এমন একটি রোগ যার ওষুধ এখন আবিষ্কার হয়ে ওঠেনি।

ফলতঃ একটি শিশুকে কি বিপজ্জনক জীবন আপনারা উপহার দিচ্ছেন ভাবুন।

তাহলে এর থেকে বেরোনোর উপায় কি? কাজে অবশ্যই বেরোন কিন্তু বাচ্ছার আপনি না থাকা কালীন সময়তে যেন আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকে। এছাড়া ফাঁকা সময়ে বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ করার জন্য উৎসাহ দিন। যেটুকু সময়ে বাড়িতে থাকছেন মোবাইল থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। ওর সাথে খেলাধূলা করুন। গল্প বলুন। কথা বলার সময় মুখ খুলে ধীরে ধীরে কথা বলুন। কথা বলার সময়ে মুখের অভিব্যক্তি যেন সুস্পষ্ট হয়। এবার আসি কৈশোরে পৌঁছনো সন্তানদের ক্ষেত্রে কি করণীয়। শিশুরা বড় হয়ে গেলে তাদের অনেক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। অজানার হাতছানি তাদের টানে। বাবা মায়ের অভিযোগ উর্ধমুখী পড়াশোনা নিম্নমুখী।

এক্ষেত্রে করণীয় কি? মা-বাবার সাধারণতঃ দিকদর্ষণকারীর ভূমিকায় থাকেন। তাই দিক দর্শন থেকে ঘটনা কখন যে নিয়ন্ত্রণে চলে যায় সেটা চেয়েও বোঝা যায়না। আমরা বহুক্ষেত্রে কথা বলি সন্তানের সাথে নির্দেশের ভঙ্গীতে। সেটা বন্ধ করতে হবে। ঠিক বেঠিক দিয়ে কথা না বলে আমাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে। সন্তানকে তার ব্যক্তিগত পরিসরে সম্মান দিতে হবে। বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে Gadget রহিত সময় হিসাবে বের করতে হবে। বাড়ির ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে সন্তানের মতামত কি জিজ্ঞাসা করুন। সন্তান কে বলুন screentime এর ঋণাত্মক ক্ষমতা কি ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে। আপনি সিদ্ধান্ত নির্ভর জীবন কে প্রশয় না দিয়ে আলোচনা ভিত্তিক জীবনে ওদেরকে ঠেলে দিন। ধীরে ধীরে আপনার সন্তান কৃত্রিম দুনিয়া ছেড়ে ফিরে আসবে প্রকৃতির মাঝে।

Related Articles