সম্পাদকীয়

বিহারের আকাশে কি সিঁদুর রাঙা মেঘ দেখছেন নীতিশ?

Is Nitish seeing vermilion clouds in the sky of Bihar?

Truth of Bengal: ইন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়: বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষনা করেছিলেন তিনি নীতি আয়োগের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত। বিগত দিনের এই নীতি আয়োগের বৈঠকে সম্পূর্ণ-পরিকল্পিতভাবে তাঁর বক্তব্যের মাঝখানে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। স্বভাবতই ওই বৈঠকে তাঁর উপস্থিত থাকা- না থাকা সমান। বাংলার উন্নয়নে বিজেপির কোনও আগ্রহ নেই, কেননা এখানে অ-বিজেপি সরকার। কিন্তু অবাক করার কথা হল যে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার কেন্দ্রের এনডিএ-র শরিক হয়েও নীতি-আয়োগের বৈঠকে তাহলে কেন তিনি হাজির হলেন না? তাহলে কি তিনি কেন্দ্রের মোদি সরকারের কাজে ক্ষুন্ন-ক্ষুব্ধ? তিনি কি কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট? মধুচন্দ্রিমা কি বিজেপির সঙ্গে শেষ হতে চলেছে? বিজেপির প্রতি কি মোহভঙ্গের পালা?

বিজেপিকে কি চাপে রাখতেই তাঁর এই কৌশল? এরকম হাজারো প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে ঘোরাফেরা করছে। সূত্র বলছে, সরকার গঠনের এক বছরের মধ্যে অনেক খুঁটিনাটি ঘটনায় নীতিশ সিঁদুর রাঙা মেঘ দেখছেন। যেখানে মূল বিষয় হল বিহারে বিজেপির আগ্রাসন। বিহারে তাঁরা নীতিশকে অন্ধকারে রেখে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জিতে বিজেপি শাসন কায়েম করার ছক কষেছে। নভেম্বরে সেখানে নির্বাচন। আর পহেল-গাঁও-এর ঘটনাকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিহারে ইতিমধ্যেই পা রেখেছেন। এখানেই শেষ নয়, নীতিশের দলের অনেকেই গুরুত্ব পাচ্ছেন বিজেপির কাছে। তার মধ্যে অন্যতম সাংসদ সঞ্জয় ঝাঁ, বিজেপির যে এহেন কৌশল তা ধরতে অবশ্য সময় লাগেনি পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ নীতিশের। এই মুহূর্তে বিহারের আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা, বিজেপি তাঁর দলের সাংসদদের ভাঙাতে পারে, এই আশঙ্কা প্রবল। বিশেষকরে সঞ্জয় ঝাঁ-এর মতো সাংসদদের কাজে লাগানোর চেষ্টা বিজেপি।

এর বিকল্প পথ  খোলা আছে নীতিশের। বিধানসভা নির্বাচনে  নিজস্ব যাদবের হাত ধরতে পারেন তিনি। তাতে হিতে বিপরীতও হতে পারে। কিন্তু তা কেননা সেক্ষেত্রে সঞ্জয় ঝাঁ-এর মতো তাঁর দলের সাংসদরা বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। বিহার রাজনীতির এই টানাপোড়েনে অনেকে মহারাষ্ট্রের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। সেখানে যেভাবে শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডের ঘাড়ে চেপে বিজেপি বৈতরণী পার হয়েছিল। এখানেও তেমন কৌশল নেই তো বিজেপির? বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর শেষপর্যন্ত বোল্ড আউট একনাথ। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বিজেপির ফড়নবিশ। সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করলে ক্রমশ বিহার রাজনীতির প্রেক্ষাপট দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হচ্ছে। তবুও রাজনীতির খেলায় মার-প্যাঁচ তো থাকেই। অনেকের কূলে এসে তরী ডুবে যায়। আবার কারও তরী সহজেই কিনারা বেয়ে যায়। এখন লাখ কথার এক কথা হল, নীতিশ কুমার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন কিনা? ভবিষ্যতই বলবে সেকথা।

Related Articles