সম্পাদকীয়

আবার এসো মা, এই কথাটাই আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা

Come again mother, this is our motivation to live

Truth of Bengal, মনীষা কর বাগচীঃ বিসর্জন মানেই কষ্ট। বিসর্জন শুনলেই যেন মনের মধ্যে একটা করুন সুর বাজে। আমাদের কতকিছুই না বিসর্জন হয়। কখনও ভালোবাসার বিসর্জন হয় তো কখনো ইচ্ছের বিসর্জন হয়। কখনো প্রিয়জন বিসর্জন হয় তো কখনো বিশ্বাসের। ছোট ছোট আশা ছোট ছোট ভালোবাসা নিয়ে গড়ে ওঠে আমাদের এই ছোট ছোট জীবন। ছোট ছোট খুশি নিয়ে আমরা আনন্দে মেতে উঠি সেই খুশির বিসর্জন হলেই আমরা ভেঙে টুকরো টুকরো হ‌ই…

বাঙালির জীবনে দুর্গা পুজো, কালী পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো এক একটা আনন্দের উৎসব। বাঙালি উৎসব প্রিয় মানুষ। খেয়ে থাকুক না খেয়ে থাকুক উৎসব এলেই সবকিছু ভুলে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই আনন্দে আত্মহারা হ‌য়। শরৎ এলেই আমাদের মন নেচে ওঠে।

আকাশে বাতাসে শিউলি তলায় কাশের বনে ঘাসের ডগায় মাদুর্গার আগমনী বার্তা শুনতে পাওয়া যায়। চারিদিক থেকে সাজো সাজো রব ওঠে। ঘরবাড়ি সাজাও, নিজেকে সাজাও, সপিং করো, পার্লারে যাও। ধনী হোক গরীব হোক সস্তা হোক দামি হোক কমবেশী সবাই কেনাকাটা করে। এই করে কেটে যায় বেশ কয়েকটি দিন।

তারপর শুরু হয় সেই চির আকাঙ্খিত পুজো। চারটি দিন কাটে মহানন্দে। এখন তো প্রায় একসপ্তাহ ধরে পুজোর হ‌ইহুল্লোড় চলে। বনেদী বাড়ির পুজোতে তো আত্মীয় স্বজনে ঘর ভরে যায়। আনন্দের আর সীমা থাকে না। মাইকের গান, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, ঢাকের বাজনার মধ্যে দিয়ে চলে আসে মায়ের বিসর্জনের তিথি।

মায়ের বিসর্জন হয়। মায়ের মুখটি তখন বড্ড থমথমে দেখায়। মায়ের চোখে জল সন্তানের চোখে জল। দেখার মত চোখ থাকলে দেখা যায়। মাকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। তেল সিঁদুর দিয়ে মা মেনকাকে বিদায় দেওয়া হয়। সবাই একে অন্যকে সিঁদুর দান করে। একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ায় কোলাকুলি করে। ঢাকের তালে তালে নাচতে নাচতে মাকে ডুবিয়ে দিয়ে আসা হয় নদীর জলে।

কেউ কেউ আবার মদ খেয়ে বেসামাল হয়। পড়ে থাকে রাস্তার পাশে। সুখে খায় কী দুঃখে খায় সেটা আমি জানিনা।
কেউ কেউ আবার নেশার ঘোরে আসছে বছর আসছে বছর বলতে থাকে… আসলে আমরা সবাই বলি আসছে বছর আবার হবে। সামনের বছর আবার আসবেন মা এই কথাটাই আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা দেয়। বুকে আশা বেঁধে বেঁচে থাকি আমরা।

Related Articles