নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বর্জনে শপথ নিতে হবে নাগরিকদের
Citizens must take an oath to avoid banned plastics

Truth Of Bengal: অর্পিতা দেবাংশী: প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য পচনশীল নয় এবং তা পরিবেশের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। তাই প্লাস্টিক মুক্ত সমাজ গড়তে প্রচার অভিযান, ও সরকারি সার্কুলার অনেকদিন হতেই শুরু হয়েছে। প্লাস্টিক দ্রব্য বর্জন দিবসও পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে সেই থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়।
প্লাস্টিকের বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য রমরমাভাবে নিয়মিত ব্যবহার হয়ে চলেছে। সকালবেলায় দেবদেবীর পুজোর ফুল তোলা দিয়ে শুরু হয় ক্যারি ব্যাগের ব্যবহারের শুভ সূচনা। তারপর সবজি, মুদিখানা, মাছ মাংস, ফল মিষ্টি ইত্যাদি দ্রব্য ওই ক্যারি ব্যাগের মধ্য দিয়ে সংসার কুঞ্জে জড়ো হয়। তারপর সারাদিনের ওই সমস্ত ব্যবহারিত প্লাস্টিকের ব্যাগগুলির জায়গা হয় ড্রেনের মধ্যে।
এই ভয়ঙ্কর দ্রব্য গুলি ড্রেনের মধ্যে পড়ে আবর্জনা হয়ে নিকাশি নালার গতিপথ বন্ধ করে দেয়। এবং দুর্গন্ধ বের হয়ে সুস্থ মনকে নষ্ট করে দেয়, মশার জন্ম বাড়িয়ে তোলে, এবং বিভিন্ন ধরনের জ্বরের প্রসার বাড়িয়ে তোলে। বর্তমানে সভ্য সমাজের প্রতিবাদহীন মানুষ দেখেও না দেখার ভান করে নাকে রুমাল দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
অসুস্থ সমাজ জানে সরকার কোন একদিন ১০০ দিনের কাজে ঠিক পরিস্কার করবে সুতরাং ওই নিয়ে ভাবনার দরকার নেই। সুতরাং ক্যারি ব্যাগ হাতে থাকুক আর প্রয়োজন মিটে গেলে ট্রেনের জায়গা হোক। এইভাবে পরিবেশ দূষণ নিয়মিত হয়েই চলেছে, আর তার ফাঁক দিয়ে মহামারী প্রবেশ করে চলেছে। এমত অবস্থায় প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে জোরদেওয়া হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব দ্রব্য ব্যবহারের।
গ্রামীন স্বরোজগারী প্রশিক্ষণ সংস্থা আর এস ই টি আই বোলপুর বীরভূম, সাঁইথিয়া ব্লকের পাহাড়পুর গ্রামে মনসা মন্দির প্রাঙ্গণে, জয়দেব দেবাংশীর উদ্যোগে শিক্ষিত কর্ম উদ্যোগী মহিলাদের নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল কাগজের তৈরি ব্যাগ, ক্যারি ব্যাগ, কভার ফাইল, খাম, ইত্যাদি ইত্যাদি দ্রব্য গুলি নিয়ে দশ দিনের প্রশিক্ষণ হয়েছিল কিছু কিছুদিন আগে।
৩২ জন মহিলা খুবই নিষ্ঠা সহকারে উক্ত মহতি কাজটি শিখে স্বনির্ভর হওয়ার পথে বের হল। কিন্তু আজও কোন বাজারজাত হল না। উক্ত সংস্থার সুপারভাইজার দীপান্বিতা প্রামানিক অনেক চেষ্টা করেছেন বা করছেন কিভাবে কাগজের দ্রব্যগুলিকে বাজারজাত করা যায়। কিন্তু যতদিন না প্লাস্টিকের দ্রব্য তৈরির কারখানা গুলি বন্ধ না হচ্ছে, ততদিন এই প্লাস্টিকমুক্ত সমাজ গড়ার অভিযান, মানুষের মুখে মুখে থাকবে, আর সরকারি সারকুলারে আবদ্ধ হয়ে থাকবে।
সাধারণ মানুষ বলছেন আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। শুধুমাত্র কাগজে-কলমে নিয়ম বা আইন বেঁধে রাখলে চলবে না। যে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ, বাজার থেকে চিরতরে যাতে বন্ধ হয়ে যায় তার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সমাজকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে সরকার এবং সাধারণ নাগরিকদের। বছরের পর বছর ধরে চলা অনিয়ম যেমন শুধু সরকার বন্ধ করতে পারেনা তেমনি শুধু নাগরিকদের পক্ষেও বন্ধ করা সম্ভব নয়।
সরকার এবং নাগরিক উভয় পক্ষকে হাতে হাত মিলিয়ে সমাজ সংস্কারে এগিয়ে আসতে হবে। যেসব বেআইনি প্লাস্টিকের কারখানা রয়েছে যারা সরকারি নিয়ম ভেঙে অবৈধভাবে নিষিদ্ধ ক্যারি ব্যাগ তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনের শাসনের মধ্যে ফেলে তাদেরকে বাধ্য করতে হবে নিয়ম মেনে চলার। তবেই বাজার থেকে যেমন নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ তুলে দেওয়া যাবে পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ ব্যবহার বাড়বে।