বনগাঁর ঐতিহ্যবাহী বিড়াল হাত দুর্গা আজও বজায় রয়েছে ৩৫০ বছরের রীতি
The traditional Cat Haat Durga of Bangaon is still a 350 year old custom

Truth of Bengal, সৌম্য বাগচীঃ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রাচীন দুর্গাপুজো গুলির মধ্যে অন্যতম বনগাঁর ছয়ঘরিয়ার গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো। প্রায় ৩৫০ বছরে পা দিতে চলেছে এখানকার দুর্গাপুজো। এই দুর্গা পূজার ঘিরে রয়েছে অনেক কাহিনী। যে কাহিনী এলাকার মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। এই পুজো প্রচলনের মধ্যে মায়ের স্বপ্ন রয়েছে। এই পরিবারের কর্তাকে মা স্বপ্ন দিয়েছিলেন।
শোনা যায়, বনগাঁর ছয়ঘরিয়ার গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বপ্নে দেখা দিয়ে দেবী বলেছিলেন, তাঁর কোন রূপের পুজো করতে হবে! ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠাকুরদাদা ছিলেন গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। মায়ের স্বপ্ন পেয়ে তিনি দুর্গাপুজো শুরু করেন। সেই শুরু। ইছামতি দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। শোনা যায় এক সময় এই ইছামতি দিয়ে বড় বড় জাহাজ যেত।
এখন সেই ইছামি আর প্রবাহমান ধারায় বইতে পারে না। অনেক জায়গাতেই নদী তার প্রবাহমানতা হারিয়েছে। তবে সেই সময় থেকে দুর্গাপুজো সেই পুরনো রীতি মেনে বয়ে আসছে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত গিয়েছে। বহুবার বাধা এসেছে। তবুও মায়ের আরাধনা হয়েছে নিয়ম মেনে। যেমন ২০০০ সালের বন্যায় প্লাবিত হয়ে উঠেছিল গোটা এলাকা। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজা নিয়ে কালো মেঘ জমে ছিল।
গোটা বাড়ি জলমগ্ন। ২০০০ সালে পুজোর আগে বন্যায় গোটা বনগাঁ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা ভেসে যায়। ষষ্ঠীর দিন কী ভাবে দেবীর বোধন করা হবে তা নিয়ে চিন্তায় গোটা পরিবার। কারণ বোধনতলা জলের তলায় চলে গিয়েছে। পরিবারের এক সদস্য বলেন ‘কী ভাবে দেবীর বোধন হবে তা নিয়ে আমরা চিন্তায় ছিলাম। শিব মন্দিরের উঁচু ঢিবিতে বোধন করবার পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছিল।
কিন্তু হঠাৎই ষষ্ঠীর আগে বোধনতলায় দু’তিন হাত জল কমে যায়। নির্দিষ্ট স্থানেই বোধন করতে পেরেছিলাম আমরা।’ সেবছর বন্যার মধ্যে ১৩০ জন এই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদেরকে নিয়েই সে বার জমে উঠেছিল পুজো। কিন্তু বিসর্জন দেওয়ার আগে ফের বিপত্তি দেখা দেয়। প্রতিমা কী ভাবে পাশে নাওডাঙা নদীতে নিয়ে যাওয়া হবে তা ভেবে পাচ্ছিলেন না পরিবারের লোকেরা।
হঠাৎই এক জেলে বউ সেখানে উপস্থিত হন, মাকে সিঁদুর পরানোর জন্য। তাদের সঙ্গে নৌকাও ছিল। সেই নৌকা করেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গার দশটি হাত থাকলেও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দু’টি হাত বড়, বাকি আটটি হাত ছোট! দু’পাশের কাঁধে রয়েছে ছোট ছোট চারটি হাত। অনেকটা বিড়ালের হাতের মতো! সে কারণে এই দুর্গাকে বলা হয় ‘বিড়ালহাত দুর্গা’।
মহালয়ার পরের দিন, প্রতিপদে চণ্ডীর ঘট বসানো হয়। পুজোর দিনগুলিতে চলে চণ্ডীপাঠ। ষষ্ঠীতে বাড়িতে থাকা জোড়া শিব মন্দিরের নীচে বেলতলায় হয় দেবীর বোধন। বিসর্জনের আগে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা দেবীকে বরণ করেন। তার পর মহিলারা। নিয়ম মেনে দশমীর দিন আকাশে একটি সন্ধ্যাতারা উঠলেই বন্দ্যোপাধ্যায়বাড়ির প্রতিমা নাওডাঙা নদীতে বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয়। বিসর্জন দেখতেও বহু মানুষ ছুটে আসেন।