কম লগ্নিতে বিপুল আয়, ভিয়েতনামি নারকেল গাছে, বছরভর আয়ের সুযোগ

The Truth of Bengal: ডাব বা নারকেল একই গাছের এই দুই ফলের বিপুল পরিমাণ লাভ করা যায়। নারকেলকে ভারতে অর্থকরী ফলস হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। ভারতের মতো দেশে এই গাছের প্রতিটি অংশই জনজীবনের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তবে আমাদের দেশে যে ধরণের নারকেল গাছ প্রকৃতিক ভাবে হয়ে থাকে, সেই জাতের গাছের ফলন যেমন সময় সাপেক্ষ, তেমনই ফলও কম মেলে। একটি গাছ বড় হতে কম করে ৭ থেকে ৮ বছর হতে পারে, এবং বছরে ৫০-৬০টি ফল হয়ে থাকে। ফলে, বিপুল পরিমাণ সফলতা মেলে না। কিন্তু এক ধরণের প্রজাতির নারকেল গাছ রয়েছে, যার থেকে ফলন যেমন বেশি পাওয়া যায়, তেমনই সময়ও কম লাগে বৃদ্ধি হতে। তাই নতুন এই ছোট মাপের ডোয়ার্ফ জাতের নারিকেল চাষের ব্যাপারে অনেকেই জোর দিচ্ছেন।
মাত্র তিন বছরের মাথায় নারিকেলের গাছের উচ্চতা হবে দুই থেকে আড়াই ফুট। এই গাছকে ঠিকঠাক পরিচর্যা করলে ২.৫ থেকে ৩ বছরের মধ্যে ফুল আসা শুরু হয়। বছরে তিন থেকে চারবার ফুল আসে। আর ফলেনর দিকে বিচার করলে, দেশি গাছের তুলনায় এই গাছের ফলন প্রায় তিনগুণ। ঠিকঠাক পরিচর্যা করলে প্রতি বছর প্রায় ২০০-২৫০ টি নারিকেল পাওয়া যাবে।
একটি গাছ বাঁচে গড়ে ২০ থেকে ২৫ বছর। ভিয়েতনামি জাতের নারকেল গাছে জলও বেশি থাকে। এই জাতের গাছ সব ধরনের মাটিতে লাগানো যায়। এই জাতের গাছ লবণাক্ততা অনেক বেশি সহ্য করতে পারে। গাছ খাটো হওয়ায় ফলে পরিচর্যা করাও সহজ।
ভিয়েতনাম থেকে ছোট নারকেল গাছের দুটি প্রজাতি
১ সিয়াম গ্রিন কোকনাটঃ এটি ডাব হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই জাতের ফলে ডাবের রং কিছুটা সবুজ, আকার কিছুটা ছোট , প্রতিটির ওজন ১.২-১.৫ কেজি হয়ে থাকে। ডাবের মধ্যে ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিলিটার জল পাওয়া যায়। বছরে প্রতি গাছে ফল ধরে ১৫০-২০০ টি।
২ সিয়াম ব্লু কোকোনাটঃ এটিও বেশ জনপ্রিয় জাতের গাছ। এর উদ্ভাবন করা হয় ২০০৫ সালে। ভিয়েতনামে এই প্রজাতির চারা কৃষকের অত্যন্ত পছন্দের। ফলের রং হলুদ, প্রতিটির ওজন ১.২-১.৫ কেজি, ডাবে জল থাকে ২৫০-৩০০ মিলি। ডাবের পানি বেশ মিষ্টি এবং শেলফ লাইফ বেশি হওয়ায় এ জাতের ডাব বিদেশে রপ্তানী করা যায়। বছরে প্রতি গাছে ফল ধরে ১৫০-২০০ টি। এই জাতের গাছ চাষ হয় শ্রীলঙ্কাতেও, একে শ্রীলঙ্কায় কিং কোকোনাট বলা হয়ে থাকে।
উৎপাদন পদ্ধতিঃ
এই গাছের চাষের জন্য দো-আঁশ থেকে বেলে দো-আঁশ মাটি হলে ভালো। তবে সব ধরনের মাটি নারিকেল চাষের জন্য উপযোগী। অতি শক্ত, কাঁকর শীলাময় মাটি হয়ে থাকলে, প্রায় ১.৫ মিটার চওড়া ও ১.৫ মিটার গভীর করে গর্ত করে জৈব সার দিয়ে ভরাট করে গাছ লাগালে গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
এই গাছ রোপণের আসল সময় জুন থেকে জুলাই মাস। রোপণের সময় যেটি মাথায় রাখতে হবে, সেটি হল একটি গাছের থেকে আর একটি গাছের দূরত্ব: ৬ x ৬ মিটার হিসেবে হেক্টরপ্রতি ২৭৮ টি চারা প্রয়োজন। বাগান আকারে ৭ মিটার দূরত্বে চারা রোপণ করা যাবে।
গর্ত তৈরি ও সার প্রয়োগ করতে হলে, ১মি x ১ মি x ১ মি মাপের গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্ত তৈরি করা হলে, ৪-৫ দিন রোদে রাখার পর প্রতি গর্তে পচা গোবর অথবা আবর্জনা পচা সার ৪০-৫০ কেজি, কেঁচো সার ২ কেজি, হাড়ের গুড়া অথবা শুঁটকি মাছের গুড়ো ১ কেজি, নিমের খোল ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৩০০ গ্রাম, এমওপি ৩৫০ গ্রাম, জিঙ্ক সালফেট ১০০ গ্রাম, বোরন বা বোরিক এসিড, ২০০, ফুরাডান বা কার্বোফুরান ৫০ গ্রাম এবং কার্বেন্ডাজিম দলীয় ছত্রাকনাশক ১০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন- মৌমাছির চাষ করে বিপুল আয় করুন, রইল পুরো প্ল্যান
মাটিতে পোকার আক্রমণ থেকে চারাগুলিকে রক্ষা করার জন্য, প্রতি গর্তে ৫০ গ্রাম ফুরাডান প্রয়োগ করতে হয়। সব কিছু মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পরে ১২-১৫ দিনের মধ্যে গাছ লাগিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। ভরাটের পর পর্যাপ্ত জল দিয়ে গর্তটাকে ভিজিয়ে দিতে হবে যাতে সব সার ও অন্যান্য উপাদান মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যায়। গর্তের তলায় বা একদম নীচের স্তরে ১০-১৫ সেমি চওড়া করে নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে ভরাট করা হলে ভালো। কারণ বাতাস চলাচল ও শিকড় ছড়ানোর জন্য জায়গা পাবে।
চারা রোপণের হয়ে গেলে, প্রতি ৩ মাস অন্তর পরিচর্যা করে যেতে হবে। প্রথমে চারার গোড়া থেকে ৩০ সেমি দূরত্বে ৩০-৪০ সেমি চওড়া ও ২০ সেমি গভীর নালায় সারগুলো প্রয়োগ করতে হবে। পরের প্রতিবার চারার গোড়া থেকে আগের বারের থেকে ৫-৭ সেমি আরও দূরে সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর ১৫-২০ লিটার জল দিয়ে গাছের গোড়াগুলি ভেজাতে হবে। শুকনো মরসুমে খড় বা কচুরিপানা দিয়ে মালচিং করে নিয়মিত জলে দিতে হবে।
এই গাছের চারা পেতে ও চাষাবাদ সম্পর্কে জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেন।