পোখরান বিস্ফোরণের ৫০বছর পারঃ কেন ভারত পরমাণু বিস্ফোরণ করেছিল,জানেন সেই ইতিহাস?
50 years of Pokhran explosion: Why did India explode nuclear, do you know that history?

The Truth of Bengal: ভারত বরাবরই শান্তির পথে চলতে ভালোবাসে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের নীতি হল কখনই কোনও দেশকে আক্রমণ করবে না।তবে আক্রান্ত হলে মুখের মতো জবাব দেবে।এমনকি পরমানু বোমার ক্ষেত্রেও নো ফাস্ট ইউজ বা আগে ব্যবহার নয়,এই নীতি অনুসরণ করে নয়াদিল্লি। কিন্তু দেশের সুরক্ষার স্বার্থে কোনও সমঝোতা করতে রাজি নয়।একথা স্বাধীন দেশের সরকার বারবার স্পষ্ট করেছে। ১৯৭৪-র ১৮মে রাজস্থানের পোখরানে প্রথম পরমানু বিস্ফোরণ ঘটায় ভারত।স্মাইলিং বুদ্ধ অপারেশনের অঙ্গ হিসেবে এই পরমানু বিস্ফোরণ করা হয়।কিন্তু এই বিস্ফোরণের আগে চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার। সেসময় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো এই পরমাণু অস্ত্র তৈরি,বিস্ফোরণের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।তাই ভারত সরকার যখন এই বিস্ফোরণ ঘটায় তখন নয়াদিল্লির প্রচারে তুলে ধরা হয় ,শা্ন্তিপূর্ণ পরমাণু বিস্ফোরণ।আসলে কূটনীতিকরা বলেন,রাষ্ট্রসংঘের ৫ শক্তিধর রাষ্ট্রকে বার্তা দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের আমেরিকা,ব্রিটেন,ফ্রান্স,চিন,রাশিয়া ছিল রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। সেই পি-৫কে শান্তির কথা তুলে ধরে পরমাণু বিস্ফোরণ সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর করার চেষ্টা করে ইন্দিরা সরকার।
পরমাণু বিস্ফোরণের পিছনে কারণগুলি কী ছিল?
বলা যায়,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-১৯৪৫-এর পর কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।ধ্বংসের মুখে পড়ে বিশ্বসভ্যতার নানা উপাদান।সেসময় আমেরিকা ও রাশিয়া পরস্পরবিরোধী ঠাণ্ডা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল।মূলতঃ আদর্শগত লড়াইয়ের মাঝে অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার জন্য দুই দেশ দ্বৈরথে জড়ায়।উল্লেখ্য,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা হিরোশিমাও নাগাসিকা শহরে দুটি পরমাণু বোমা ফেলে আমেরিকা।১৯৪৫-র অগাস্টে সেই ঘটনা বিশ্বকে নাড়া দেয়।তারপরেও পরমাণু পরীক্ষা থেমে থাকেনি।১৯৪৯এ আবার সোভিয়েত ইউনিয়ন পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়।এরপরই পরমাণুর মাধ্যমে ধ্বংসের আশঙ্কা তৈরি হয়।সেই ধ্বংস রোধ করার জন্য ১৯৬৮-তে পরমাণু নিষিদ্ধকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়,যার পোশাকী নাম দেওয়া হয় নিউক্লিয়ার ননপলিফারেশন ট্রিটি বা পরমাণু নিষিদ্ধকরণ চুক্তি।তাই ১৯৬৭-র আগে যাঁরা এই পরমাণু বোমা তৈরি করেছেন বা আদানপ্রদান করেছেন সেইসব পি-৫ দেশের সদস্যদের এই বিধি মেনে চলার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে নীতিকে মান্যতা নির্দেশ দেওয়া হয়।
কেন ভারত পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়
ভারত এই পরমাণু নিষিদ্ধকরণ চুক্তির বিরোধিতা করে।কেন পি-৫র জন্য একরকম নীতি থাকবে ? কেন অন্য রাষ্ট্রের জন্য আলাদা নীতি থাকবে ? একথা তুলে ধরে ইন্দিরা সরকার স্পষ্ট বলে পরমাণু চুক্তির সামঞ্জস্যবিধান করা জরুরি। বিদেশ নীতির অনুসন্ধান করে সুমিত গাঙ্গুলি নামে এক ব্যক্তি লেখেন,ভারত এনপিটিতে স্বাক্ষর করতে চায়নি কারণ ভারতের আশঙ্কা দূর করার জন্য কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো।আসলে শক্তিধর দেশগুলো ইচ্ছেমতো পরমাণু বিস্ফোরণ ও গবেষণা করলেও নির্জোট আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ভারতকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়।তাই শান্তির স্বার্থে ও সুরক্ষার প্রয়োজনে দিল্লির এই ১৯৭৪-র পরমাণু বিস্ফোরণ বলে স্পষ্ট করে দেন ভারত সরকারের নীতিকাররা। জানা গেছে,ভারতীয় বিজ্ঞানী হোমি জে ভাবা ও বিক্র সরাভাই যৌথভাবে এই পরমাণু বিস্ফোরণের রূপরেখা চূড়ান্ত করেন।আর সেই লক্ষ্যে ১৯৫৪ সালে পরমাণু শক্তি বিভাগ তৈরি করা হয়।যারজন্য ভাবাকে ডিরেক্টর করে পরমাণু গবেষণার কাজ জোরদার করা হয়। পারমাণবিক শক্তির প্রথম দিকের একজন প্রবক্তা,হোমি ভাবা একবার লিখেছিলেন, “পারমাণবিক শক্তি সফলভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োগ করা হয়েছে এখন থেকে কয়েক দশকের মধ্যে, ভারতকে তার বিশেষজ্ঞদের জন্য বিদেশে তাকাতে হবে না নিজেরাই পরমাণু গবেষণায় স্বনির্ভর হতে পারবে ” কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু পারমাণবিক অস্ত্র এবং সাধারণভাবে অস্ত্র সংগ্রহের প্রসার নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। ১৯৬0-এর দশকে নেতৃত্বের পরিবর্তন এবং১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে একটি যুদ্ধে ভারত হেরে যায় এবং ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে, ই ভারত জিতেছিল, ভারতের দিক থেকে নীতিগত পরিবর্তন হয়।
পরীক্ষার পর কি হল?
ভারত বিশ্বকে দেখায় যে এটি একটি চরম অবস্থায় আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োগ করতে পারে। পোখরানে পরীক্ষা করা পারমাণবিক পরীক্ষা আসলে শান্তির উদ্দেশ্যে করা। তার আগে অনেক দেশের তাৎপর্যপূর্ণ সমালোচনার মুখে পড়ে। ১৯৭৮ সালে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার রোধ আইনে স্বাক্ষর করেন, যার অনুসরণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতে পারমাণবিক সহায়তা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ভারতের এই ধরনের প্রযুক্তি পরীক্ষা করার বিষয়ে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি কড়া দেখা যায়।তবে ভারতের শান্তি রক্ষার প্রতি দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা উন্নত দেশগুলোকে ব্যাকফুটে ফেলে। তাই পরবর্তী সময়ে বাজপেয়ী সরকারের আমলে দ্বিতীয় পরমাণু পরীক্ষা করে।