
The Truth of Bengal: তুঙ্গনাথ’ শব্দের অর্থ হল ‘শৃঙ্গ কুলের দেবতা’। ‘পঞ্চকেদারের’ মধ্যে তৃতীয় কেদার তুঙ্গনাথ উত্তরাখণ্ড রাজ্যের রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় অবস্থিত। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ শিবমন্দির হিসেবে বিখ্যাত। যার উচ্চতা প্রায় ১২০৭৩ ফুট। মন্দাকিনী এবং অলকানন্দা নদীর উপত্যকার উপর অবস্থিত তুঙ্গনাথ।গ্রানাইট পাথর দিয়ে তৈরি মন্দিরটির গঠন অনেকটা কেদারনাথের মতো। মন্দিরের গায়ে রয়েছে সুন্দর কারুকার্য আর চূড়াতে তামার পাতের উপর সোনার প্রলেপ দেওয়া অংশ। সামনের বাঁধানো অংশের এক পাশে আছেন পঞ্চ ঈশ্বরী মাতা, ভগবান বিষ্ণু, গৌরীশঙ্কর পিতৃদেব,ভৈরবনাথ।তৃতীয় কেদার তুঙ্গনাথে মহাদেবের ‘বাহু’ পতিত হয়। পুরাণ অনুযায়ী, তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানা যায়। কিন্তু পরবর্তীতে শঙ্করাচার্য নতুন করে এই মন্দির আবার নির্মাণ করেন এবং তিনিই প্রথম মন্দিরে নিয়মিত পুজোর প্রচলন করেন। এই মন্দিরে মহিষরূপী শিবের মস্তকের অংশ পূজিত হয়। এছাড়াও জানা যায় শিবের বর পেতে লঙ্কাধিপতি রাবণ তুঙ্গনাথে এসে তপস্যা শুরু করেছিলেন। আবার রাবণকে বধ করে রামচন্দ্র চন্দ্রশিলা শিখরে তপস্যা করেন।
কিভাবে পৌছবেন এই তুঙ্গনাথ মন্দিরে? প্রথমে ট্রেনে হরিদ্বার পর্যন্ত যেতে হবে। তারপর গাড়ি করে সেখান থেকে উখিমঠে পৌঁছতে হবে। সেখানে চাইলে এক রাত কাটিয়ে পরের দিন সারিগ্রাম থেকে হাঁটা পথে দেওড়িয়াতাল পৌঁছে রাত কাটিয়ে,পরদিন সকালে সেখান থেকে চোপতায় পৌঁছে সাড়ে তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ার পিঠে চড়ে পৌঁছে যাওয়া যায় তুঙ্গনাথ মন্দিরে। প্রবেশদ্বারে ঘণ্টা বাজিয়ে যাত্রাপথের শুরু হয়।
যাত্রাপথে চোপতার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অভূতপূর্ব। ছোট জনপদ চোপতার এক প্রান্তে রয়েছে সবুজ উপত্যকা ভূমি। যার তুলনা একমাত্র ‘ইউরোপের সুইজারল্যান্ডের’ সঙ্গেই করা হয়। সবুজাবৃত চোপতার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯০০০ ফুট। চোপতা থেকে তুঙ্গনাথ মন্দিরের পথ খুব বেশি চড়াই-উৎরাই। সেই ছায়া সুনিবিড় পথ দিয়ে মোটামুটি এক কিলোমিটার যাওয়ার পর দেখা যায় ঘন সবুজ ‘বুগিয়াল’। যার অপরূপ শোভা সর্বদা আগত পর্যটকদের আকর্ষণ করে চলেছে।
এই স্থানে বেশকিছু টেন্ট দেখতে পাওয়া যায়।যেগুলির মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং পর্যটকেরা কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নেয়। পথের দু’ধারে সবুজ বনানী রডোডেনড্রন গাছ আছে। এছাড়াও পাইন,ওক,ম্যাপেল, উইলোর ঘন জঙ্গল দেখতে পাওয়া যায়। বুগিয়ালের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে পর্যটকেরা তুঙ্গনাথ দর্শনের এগিয়ে চলে। পথে অনেক সময় একটু অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। যাত্রাপথ যেহেতু খুব বেশি চড়াই; তাই হাঁটা পথে মন্দির দর্শনই শ্রেয়।