জন্মদাত্রীর খোঁজে আবছা ঠিকানায় হাতছানি, ২৬ বছর পর মা-কে পেলেন প্রিয়া
Priya found her mother after 26 years searching for her birth mother

The Truth Of Bengal : পরিস্থিতি মানুষকে বদলাতে শেখায়। শুধু তাই নয় এই পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে কত মানুষ হারিয়ে যায় এই সভ্যসমাজ থেকে। আবার কেউ হয়ত বর্তমান পরিস্থিতিকে মেনে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।তবে পরিস্থিতির সাথে লড়াই করে নিজের সামাজিক স্বীকৃতি ফিরিয়ে আনার ঘটনা হয়ত খুবই বিরল। হ্যাঁ, ট্রুথ অফ বেঙ্গলের পাঠকদের জন্য রইল আজ এমনই এক লড়াকু মেয়ের গল্প।
মা কবিতা সরকার ২৬ বছর আগে পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ করে সদ্যোজাত কন্যা সন্তানকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন অনেক দূরে। সেই মায়ের ভালবাসা থেকে বঞ্চিত মেয়েই গর্ভধারিণী মায়ের সামনে এসে দাঁড়াল ২৬ বছর পর। আর এই শুভক্ষণের স্বাক্ষী রইল কালিকাপুর এলাকার মতুয়া মিশন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রায় দশ বছর ধরে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া তে বা সমস্ত এনজিও তে ও মাকে খুঁজেছেন স্প্যানিশ প্রিয়া। জম্নসুত্রে বাঙালী হলেও প্রিয়ার বেড়ে ওঠা, পড়াশুনো সমস্ত কিছুই স্পেনে। স্প্যানিশ ছাড়া আর অন্যকোন ভাষা বোঝেন না প্রিয়া। সেই প্রিয়াই মায়ের খোঁজে চলে এলেন ৮ হাজার কিলোমিটার পার করে সটান কলকাতায়। এখানে এসেই শুরু করেন চিরুনি তল্লাশি। মনে একটাই ইচ্ছে জন্মদাত্রী মায়ের সম্মুখীন হওয়া। মহানগরের বহু অলিগলি খোঁজা শুরু করেন। খুঁজতে খুঁজতে চলে আসেন কালিকাপুর এলাকায়। এখানেও মাকে তন্ন তন্ন করে খোঁজা শুরু করেন। বহু জায়গায় খোঁজার পর অবশেষে গর্ভধারিণী মা অর্থাৎ কবিতা রানিকে খুঁজে পান। অবশেষে মা ও মেয়ে কাছাকাছি আসেন। ওই যে কথায় বলেনা নাড়ির টান বড় টান, সত্যি তাই। মাকে কাছে পেয়ে মেয়ে পেল মায়ের শরীরের মা মা গন্ধ। অথচ কি আশ্চর্য তাইনা! যে মেয়েটা ছোট থেকে কোনোদিন নিজের মাকে এক নিমেষের জন্য কাছে পাননি সেই মেয়েই শুধুমাত্র একবার কবিতাকে জড়িয়ে ধরতেই পেলেন মায়ের গায়ের সেই মিষ্টি গন্ধ।
আজকাল আর অনুভূতির ফলে কিছু হয়না। সুতরাং মাকে ফিরে পেতে গেলে চাই যথার্থ প্রমান, যা দেখিয়ে প্রমান হবে দুজনে মা মেয়ে কিনা। ব্যাস, যেমন কথা তেমন কাজ। আমেরিকার এক ল্যাবরেটরিতে করা হল দুজনের ডিএনএ টেস্ট। আর রিপোর্ট মিলতেই একেবারে চক্ষু চড়কগাছ। সত্যি এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। কবিতা ও প্রিয়ার ডিএনএ টেস্ট এর রিপোর্ট মিলে গেছে সুতরাং সত্যি ওনারা মা ও মেয়ে। মাকে কাছে পেয়ে প্রিয়া জানান, “কত লোকে বলেছিল আমি আর কোনদিন মাকে খুঁজে পাবো না। অনেকে বলেছিল আমার মা আর আমাকে কোনদিন দেখতে চাইবে না। কিন্তু আমি বিশ্বাস হারাইনি। তিল তিল করে অপেক্ষা করে গিয়েছি এই মুহূর্তটি উপভোগ করার জন্য। মাকে জড়িয়ে ধরার পর মনের মধ্যে সেই অহেতুক ঝড়টা যেন আজ থেমেছে”। ২৬ বছর পর মাকে খুঁজে পেয়ে মা ও মেয়ের দুচোখে নেমে এল অশ্রুর ধারা।
অন্যদিকে, বীগত ২৬ বছর ধরে মা কবিতার যাবতীয় সমস্ত দায়িত্ত বহন করেছে এই মতুয়া মিশন। এই মিশনের এক সদস্য জানান, “আমরা মতুয়া মিশনের সমস্ত ভক্তরা বিশ্বাস করি শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের আশীর্বাদে এবং মতুয়া মিশনের কর্ণধার শ্রী প্রভাষ মন্ডলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আজকের এই মহামিলনের সাক্ষী রেখে গেল”।