ভিন্ন আঙ্গিকে,ভিন্ন রূপে মকর সংক্রান্তি, কোথাও পোঙ্গল,কোথাও উত্তরায়ণ তো আবার কোথাও বিহু পালনে দেশের মঙ্গলকামনা ..
Pictures of the colorful festival of colorful India on Makar Sankranti. The country's good wishes to Suryadev in different guises, in different forms.

The Truth Of Bengal: মকর সংক্রান্তিতে বর্ণময় ভারতের রঙিন উত্সবের ছবি ধরা পড়ল। বাংলায় যা পৌষ সংক্রান্তি ,তাই তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল, গুজরাটে উত্তরায়ণ,অসমে ভোগালি বিহু,কর্ণাটকে মকর সংক্রমণ নামে পালিত হয়। উত্সবমুখর দেশবাসী যেন সূর্যদেবের কাছে দেশের মঙ্গল কামনা করল ভিন্ন আঙ্গিকে,ভিন্ন রূপে।
পৌষ সংক্রান্তিতে ভারতজুড়ে উত্সবের ঘনঘটা। নানা রাজ্যে নানা নামে পৌষের এই অনুষ্ঠান পালন হয়।কী এই মকর সংক্রান্তি ? কেন পালন করা হয়? পুরাণমতে, শনিমহারাজ সূর্যদেবতার সন্তান।একসময় তিনি কুষ্ঠ-য় আক্রান্ত হন। তাতে যমরাজ উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। যমরাজের চেষ্টায় শনিদেবের কুষ্ঠ সেরে যায়। শরীর সুস্থ হতে নাকি তাঁর নজর পড়ে মকরের ওপর। সেখানেই বাস ছিল তাঁর ত্যজ্য স্ত্রী ও সন্তান শনিদেবের। তাদের বাড়িঘর পুড়ে যায় সেই তেজে।শনিদেবকে বাঁচানোর জন্য সূর্যদেবের কাছে প্রার্থনা করা হয়।সেসময় সূর্যদেব নাকি শনিদেবকে একটি নতুন ঘর দেন,সেটাই মকর নামে পরিচিত। আর এই মকর সংক্রান্তিতে নদী বা সাগরে ডুব দেওয়ার চল রয়েছে বাংলায়। আর পার্বন উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে দেওয়া হয় আলপনা।পিঠে-পুলি পাত পেড়ে খাওয়ার চলও রয়েছে এই বঙ্গে।টুসুগান আর নদীর তীরে মেলায় মেতে ওঠার ছবি রাঢ়বঙ্গেও দেখা যায়।বাংলায় যা পৌষ সংক্রান্তি রূপে পালিত হয় তাই আবার অন্যনামে অন্যরাজ্যে পালন করা হয়।বাংলার মতোই উত্সবে গা ভাসায় তামিল ভূমও। সেখানে ধুম লাগে পোঙ্গলের। পোঙ্গল কথার অর্থ হল নতুন শুরু।
হিন্দু পূরাণ মতে জানা যায়, এই উৎসব অন্ধকারের শেষ করে নতুন আলোর কামনায় পালন করা হয়। চারদিন ধরে এই উৎসব পালন করা হয়। প্রতি বাড়িতে এই সময়ে নানারকম খাবার তৈরি করা হয়। উঠোন সাজানো হয় রঙ্গোলি দিয়ে ।সূর্যদেবকে নতুন চাল দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। নতুন পোশাক আর হরেক খাবারে স্বাদ-ভাগ করে নেওয়া হয়।১৫জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া পোঙ্গল চলবে ১৮জানুয়ারি পর্যন্ত। তামিলনাড়ুর মতোই গুজরাটে উত্তরায়ণ উত্সবে আবাগের বাঁধ ভাঙে।ছাদে বা ফাঁকা জায়গায় ঘুড়ি ওড়ানোর চল দেখা যায়। এই উৎসবের লক্ষ্য হল দেবতাদের গভীর ঘুম থেকে জাগরণ ঘটানো।উ ত্তরায়ণের সবচেয়ে প্রাণবন্ত এবং জনপ্রিয় উদযাপনে কেবল মজার মিলন উত্সবই হয় না।গুজরাটের ঘুড়ি উৎসবে ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবারের মধ্যে রয়েছে, যেমন উঁধিউ , চিক্কি এবং তিল লাডু। খাবার তৈরি করে প্রতিবেশী এবং আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ করা হয়, আত্মীয়তা এবং বন্ধুত্বের বন্ধনকে শক্তিশালী করে।
অন্য প্রদেশের মতোই অসমেও শস্যোৎসব উদযাপনের রীতি রয়েছে,যা ভোগালি বিহু নামে পরিচিত। বিহু শব্দের অর্থ হল শান্তির ডাক। সংক্রান্তিতে নতুন ফসল গোলায় তোলার দিন। আগের রাত থেকে তৈরি হয় খড়ের ছোট ছোট বাড়ি। সেগুলি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। একেই বলা হয় মেজি। পরের দিন পালন করা হয় বিহু। নাচ-গানের অনুষ্ঠান তো আছেই, তার সঙ্গে চলে খাওয়াদাওয়া। বিহুর প্রধান আকর্ষণ হল পিঠে। চাল গুঁড়ো দিয়েই পিঠে বানানো হয় অসমে। দেওয়া হয় নারকেল। গুড়ের সঙ্গে খাওয়া হয় সেই টেস্টি ফুড। চালের পিঠে ছাড়াও সুঙ্গা পিঠে, লাউ পিঠে, তেকেলি পিঠে খাওয়ার রেওয়াজ আছে বিহুতে। এর পাশাপাশি লারু, সান্দো গুরির মতো খাবারগুলি খাওয়া হয় এই উৎসবে। কর্নাটকে আবার এই উত্সবের রূপভেদ আলাদা,যা মকর সংক্রমণ নামে পরিচিত। যে কোনও উৎসবের সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে মানুষের মিলনের আনন্দ বার্তা। আত্মীয়-পরিজনের আগমনে উৎসব পূর্ণতা লাভ করে। পৌষের সংক্রান্তিতেই সম্পর্কের বাঁধন যেন আরও একবার শক্তপোক্ত করা হয় এই ভূ-ভারতে।তাঁদের নাম শুধু ভিন্ন নয়,সংস্কৃতির রূপও আলাদা আঙ্গিকে মোড়া।
Free Access.