কলকাতারাজনীতি

Tob Editorial : বিরোধী দলের দায়িত্ব সম্পর্কে কি সম্যক ধারণা আছে বিজেপির?

State Opposition Party BJP Roles And Responsibilities

সিরাজুল ইসলাম

সরকার কি মানুষের কাজ করছে? সরকার কি মানুষের কথা বলছে? সরকার কি ঠিক পথে চলছে? সংখ্যার বিচারে বলীয়ান শাসকপক্ষ হয়তো নিজেদের ভুল স্বীকার করে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সরকার ভুল পথে চলে না। সরকারপক্ষের সেই ভুল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব বিরোধী দলের। শক্তিশালী গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে সরকারকে ঠিক পথে চলতে বাধ্য করতে পারে বিরোধীরা। সরকারের চলার পথের নতুন দিশা দেখাতে পারে বিরোধীরা। ভারতীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলের এতটাই গুরুত্বপূর্ণ পরিসর দেওয়া হয়েছে। সদস্য সংখ্যার বিচারে শক্তি তুলনামূলক কম হলেও বিরোধী দলের ভূমিকা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই।

সরকার ভুল পথে চলে। সরকার জনবিরোধী নীতি লাগু করে। সরকার মানুষের কথা বলে না। একটা সরকার কখন এইসব করতে পারে? সরকারের সামনে যদি প্রশ্ন তোলার কেউ না থাকে, তা হলে সরকার যখন ইচ্ছে তখন এই কাজ করতে পারে। সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি যদি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে বিরোধীরা, তা হলে সরকারকে চলতে হয় অনেক ভেবেচিন্তে। শক্তির বিচারে যতই তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হোক না কেন, যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের পাঁচবার ভাবতে হবে। যদি বিরোধীরা নিজেরা না জানে তাদের দায়িত্ব কতটুকু বা গণতন্ত্রে তাদের ভূমিকা কী, তা হলে সরকার চলতে পারে নিজের ইচ্ছামতো। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে যা। জনস্বার্থবাহী নাও হতে পারে।

এই রাজ্যে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তির তিন ভাগের এক ভাগ বিরোধী বিজেপি। এমন নয় যে বিজেপি শাসক দলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। আবার বিজেপির শক্তি হেলাফেলা করার মতোও নয়। সেই বিজেপি কি পারছে বিধানসভায় তাদের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে? গত তিন বছর দেখা যায়নি বিরোধী বিজেপি দলের ভূমিকা ঠিক কেমন হওয়া উচিত। কোনও অধিবেশনে সরকার পক্ষের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে তর্ক-বিতর্কে বা আলোচনায় অংশ নেয়নি বিজেপি। তারা বুঝিয়ে দেয়নি সরকারের সিদ্ধান্তে তাদের মত আছে কী নেই। তারা একবারও দেখিয়ে দিতে পারেনি যে সরকার ঠিক পথে চলছে না ভুল পথে। বিরোধী হিসেবে তাদের সবচেয়ে বেশি কথা বলার যে জায়গা, সেই বিধানসভা চত্বরকে বিজেপি রাজনৈতিক ক্ষেত্র বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি অধিবেশনে বিজেপির এমন ভূমিকা দেখা গিয়েছে। প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, বিরোধী দলের ভূমিকা সম্পর্কে সত্যিই কি ওয়াকিবহাল বিজেপি? বিজেপি কি জানে তাদের ওপর কতটা দায়িত্ব অর্পণ করেছে রাজ্যের মানুষ?

চলতি শীতকালীন অধিবেশনে বিজেপিকে সেই আগের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। বিরোধী হিসেবে গঠনমূলক যে ভূমিকা হওয়া উচিত, তা দেখা যাচ্ছে না বিজেপি বিধায়কদের আচরণে। মাথায় পেতলের ঘড়ায় গঙ্গাজল নিয়ে হেঁটে চলেছেন বিধায়করা। সেই গঙ্গাজল দিয়ে ‘শুদ্ধিকরণ’ করা হচ্ছে সংবিধান প্রণেতা বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূর্তির পদদেশ। টানা তিনদিন সেই জায়গায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিপদে ধর্না-অবস্থান চালিয়েছিলেন শাসক দলের বিধায়করা। তাতে নাকি জায়গাটি ‘অপবিত্র’ হয়ে গিয়েছে। সেই জন্য গঙ্গাজল দিয়ে ‘শুদ্ধিকরণ’ করলেন বিজেপি বিধায়করা। অধিবেশন কক্ষের বাইরে বিজেপির বিধায়কদের এমন অন্যরকম তৎপরতা দেখে অবাক রাজ্যের মানুষ। বিধানসভার সঙ্গে এই ঘটনা একেবারেই মানানসই নয়। এর আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে পড়ছে না। আগেও শাসক-বিরোধী বাদানুবাদ হতো বিধানসভায়। বিতর্ক হতো। মতান্তর থাকতো। কিন্তু, বিরোধী দলকে কখনও এই ধরনের আচরণ করতে দেখা যায়নি। এখন রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপির দৌলতে বিধানসভার অন্দরে যা দেখা যাচ্ছে, তা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে গণতন্ত্রের গরিমা নিয়ে।

বিরোধী দলকে অত্যন্ত উঁচু স্থান দিয়েছে গণতন্ত্র। আর সেই স্থানের গুরুত্ব কতটা, সেই সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা দরকার বিরোধী দলের। কিন্তু এই রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি’র বোধহয় সেই সম্পর্কে সম্যক কোনও ধারণা নেই। তারা জানে না, সরকারপক্ষের ভুল ধরিয়ে দিয়ে তাদের ঠিক পথে চলতে বাধ্য করার জন্য তাদের ভূমিকা কী। গণতন্ত্র তাদের সেই অধিকার দিয়েছে। মানুষ তাদের হাতে সেই দায়িত্ব অর্পণ করেছে। কিন্তু এই রাজ্যের বিজেপি বিধায়কদের বোধহয় এগুলি জানা নেই। এই না জানার কারণ থেকেই হয়তো বিজেপি বিধানসভার মতো জায়গাকে রাজনৈতিক আখড়া বানানোর চেষ্টা করে চলেছে। বিজেপির এই আচরণ গণতন্ত্রের জন্য খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়।

Related Articles