অফবিট

দেবীর বিভিন্ন বাহন কীসের প্রতীক জানেন?

Durga Pujo 2023

The Truth of Bengal,Mou Basu: আকাশে বাতাসে এখন শিউলির গন্ধ। বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব যার জন্য আপামর বাঙালি বছরভর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে সেই দুর্গোৎসব সমাগত। আসলে শক্তিদায়িনী দশভূজা দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গা হলেন এমন এক শক্তি যাঁর দর্শনে মানুষের মনে অনেক দুঃখের মধ্যেও যেন একটা বিপুল স্নিগ্ধতা, নির্মল হাসির প্রলেপ পড়ে যায়। সারা বছরের না পাওয়ার যন্ত্রণা, শতকষ্ট, গ্লানি সব যেন জাদুর ছোঁয়ায় উধাও হয়ে যায়। নতুন পাওয়ার আনন্দে আট থেকে আশি সবাই খুশির আমেজে মেতে থাকে।
সংস্কৃত দুর্গ শব্দ থেকে এসেছে দুর্গা শব্দটি। দুর্গ মানে প্রোটেকশন বা রক্ষা। আমাদের শরীরে রয়েছে ৬টি রিপু (কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য), ৫টি কর্মেন্দ্রিয় ও ৫টি জ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চ তন্মাত্র (গন্ধ, রস, রূপ, স্পর্শ ও শব্দ), পঞ্চ মহাভূত (ক্ষিতি, অপ্, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম)। আমাদের শরীরে অলসতা, রাগ, হিংসা, লোভ, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি আসুরিক শক্তিকে বিনাশ করতেই মা দুর্গার আগমন।

মা দুর্গার পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের বাহনের দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারব দেবী আমাদের কী দেখাতে চাইছেন। কী শিক্ষা আমরা পেতে পারি?

সিংহ: দেবী দুর্গার বাহন সিংহ। সমস্ত শুভ গুণের আধার ঐশ্বর্যময়ী শক্তি হলেন দেবী দুর্গা। আমাদের মন বহন করে থাকে শুভ চিন্তা। সিংহ শব্দের পরমার্থিক রহস্যময় অর্থ হল মানুষের পশুভাবকে হত্যা করতে ইচ্ছুক বুদ্ধি ও মন। সিংহ জঙ্গলে একা থাকে ও শিকার করে। তেমনই সিংহরূপী শুভ মন আমাদের মনে থাকা আসুরিক শক্তিকে হত্যা করে।

মা লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা: মা লক্ষ্মীর কৃপায় যিনি জাগতিক ধন, মান, ঐশ্বর্য, যশ যে লাভ করে তাকে পেঁচার মতো জাগতিক বস্তু থেকে দূরে নির্জনে সাধন সম্পদ রক্ষা করতে হয়। পেঁচা গভীর জঙ্গলে অতি সঙ্গোপনে বাস করে, সহজে দেখা যায় না।
দেবী সরস্বতীর বাহন হাঁস: সার বা জ্ঞান যিনি দান করেন তিনিই সারদা। দেবী সরস্বতী হলেন জ্ঞানের দেবী। আবার দেবী সরস্বতীকে রাগরাগিনী ও সঙ্গীতের দেবীও মনে করা হয়। জ্ঞানের সাধনায় চিত্তশুদ্ধির খুব প্রয়োজন। দেহমনের শুচিতা, শুদ্ধতা ছাড়া আধ্যাত্ম জ্ঞান অর্জন অসম্ভব। হাঁস জলে থাকে কিন্তু গায়ে জল লাগে না। তেমনই বিবেকবান মানুষকে মালিন্য স্পর্শ করে না। তিনি জগতের অসার বা অনিত্য চিন্তাকে বাদ দিয়ে নিত্য বা সার বস্তু মন থেকে গ্রহণ করেন। এছাড়া হাঁস ব্রহ্মের প্রতীক।

গণেশ ঠাকুরের বাহন ইঁদুর: সব দেবদেবীর পুজোর আগে বিঘ্নহর্তা, সিদ্ধিদাতা গণেশের পুজো করা হয়। গণেশ ঠাকুর শ্রমের দেবতা, গণশক্তির প্রতীক। বিরাটাকার সর্বদা সুখপ্রদ আনন্দদায়ক দেবতা গণেশের বাহন ছোট্ট ইঁদুর। আসলে ইঁদুর হল ক্ষুদ্র গণশক্তি বা জনতার প্রতীক। গণেশ হলেন নেতা। গণেশের বাহন ইঁদুর কর্মফলদাতা। কাজের ক্ষেত্রে মানুষকে সতর্ক থাকার কথা বোঝাতেই গণেশের বাহন ইঁদুর।

দেবসেনাপতি কার্তিকের বাহন ময়ূর: দেবসেনাপতি কার্তিক। আর তাঁর বাহন হল ময়ূর। অসাধারণ সুন্দর দেখতে এই পাখি দারুণ কর্মপটু ও কর্মতৎপর। ময়ূর খুব কম সময় ঘুমোয়। সর্বদাই সতর্ক থাকে। আলস্যবিহীন। ময়ূরের স্বজনপ্রীতি লক্ষ্যণীয়। ময়ূর আকাশে মেঘ দেখলে পেখম মেলে নাচতে শুরু করে। তেমনই ধীর স্থির ব্যক্তিও শত বিপদেও উৎফুল্ল থাকে, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে না।

Related Articles