
The Truth of Bengal, Mou basu: পুজোর আঙিনা ছাড়িয়ে আমাদের প্রিয় বিঘ্নবিনাশক গণেশজীর পুজো আজ উৎসবের চেহারা নিয়েছে। “গণপতি বাপ্পা মোরিয়া”-র ধ্বনিতে মুখরিত চারিদিক। কিন্তু জানেন কি, দেশকালের সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে ” জনগণের দেবতা” গণেশ পূজিত হন বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ও বিভিন্ন রূপে।
জাপানি দেবতা কাঙ্গিতেন (Kangiten) এর সঙ্গে ভীষণ মিল গণেশের। কাঙ্গিতেনের আরেক নাম হল “বিনায়ক-তেন” (Binayak-ten)। সিদ্ধিদাতা গণেশকে বিনায়ক নামেই ডাকা হয়। জাপানি দেবতা গণাবাচি ও গণওয়াহার সঙ্গেও মিল পাওয়া যায় গণেশের। বিপদ আপদ, বিঘ্নকে দূর করেন বলেই গণেশকে ডাকা হয় বিঘ্নহর্তা, বিঘ্নবিনাশক নামে। তেমনই, জাপানি দেবতা বিনায়ক-তেনকেও জাপানিরা অশুভ শক্তির বিনাশকারী বলে মনে করে। সুখ, সমৃদ্ধির কামনায় সিদ্ধিদাতা গণেশের আরাধনা করা হয়। তেমনই জাপানে “শো-তেন” বা আর্যদেবকে সুখ সমৃদ্ধির দেবতা হিসাবে মানা হয়।
ভারতই একমাত্র দেশ নয় যেখানে সাড়ম্বরে সিদ্ধিদাতা গণেশের আরাধনা করা হয়। চিন, জাপান, তিব্বত ও বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষও তাদের সংস্কৃতিতে গণেশকে আপন করে নিয়েছে। যেমন, জাপানি বৌদ্ধরা জীবনের সব বিঘ্ন, বিপদ আপদ দূর করতে ও সুখ, সমৃদ্ধির কামনায় দেবতা কান্তিজেনের আরাধনা করেন। বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি জাপানে তন্ত্রের দেবতা হিসাবেও পূজিত কান্তিজেন। জাপানে এই দেবতার বহু মন্দির রয়েছে। পদ্মফুলে আসীন দেবতা কান্তিজেনের হাতে রয়েছে অস্ত্র। মোদক, লাড্ডু নয় কান্তিজেনের প্রিয় খাবার মুলো। জাপানি ভাষায় মুলোকে বলা হয় দাইকোন (Daikon) নামে। মুলোকে বিবাহ, উর্বরতার প্রতীক হিসাবে ধরা হয়। তাই বৈবাহিক জীবনে সুখ সমৃদ্ধির কামনায় ও সন্তান কামনায় কান্তিজেনের পুজো করেন জাপানিরা।
জাপানে কার হাত ধরে কান্তিজেনের পুজো শুরু হয় তা জানা যায় না তবে নেপালে অতীশ দীপঙ্করের হাত ধরে নেপালি বৌদ্ধরা ১১ শতকে গণেশের কথা জানতে পারেন। তিব্বতে লাল রঙের গণেশের পুজো করা হয়। তিব্বতীয় বৌদ্ধদের একাংশ মনে করেন লামাতন্ত্রের প্রকাশ ঘটেছে গণেশ ঠাকুরের হাত ধরে।
তাইল্যান্ডেও মহা সমারোহে গণেশ পুজো হয়। একাধিক মন্দির রয়েছে গণেশের। তাইল্যান্ডে বিঘ্নহর্তা রূপে পূজিত হন ফ্রা ফিকানেত (Phra Phikanet) নামক দেবতা। এরসঙ্গে মিল পাওয়া যায় গণেশ ঠাকুরের। একইভাবে তাইল্যান্ডে হস্তিমুখ দেবতারও পুজো করা হয়। তাইল্যান্ডেও ব্যবসা শুরুর আগে গণেশ ঠাকুরের পুজো করা হয়। তাইল্যান্ডে গণেশকে শিল্পকলার দেবতা হিসাবে মানা হয়। তাই তাইল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অফ ফাইন আর্টসের লোগোতে রয়েছে গণেশ। ভারতে যে সময় গণেশ চতুর্থী পালন করা হয় প্রায় সেই সময় তাইল্যান্ডেও গণেশ চতুর্থী পালন করা হয়। ব্যাঙ্ককের শিবমন্দির ও উত্তায়ণ গণেশ মন্দিরে গণেশ চতুর্থী পালন করা হয়। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
কম্বোডিয়ার প্রাচীন আঙ্কোরভাট মন্দিরে ফরাসি পুরাতাত্ত্বিক অঁরি মাহুত শিব, বিষ্ণু আর গণেশ ঠাকুরের মূর্তি খুঁজে পান।
একইভাবে জাভা দ্বীপেও রয়েছে বোরাবুদুর টেম্পল কমপ্লেক্স। হিন্দু রাজারা গণেশ, শিব ও মহিষাসুর মর্দিনীর উদ্দেশ্যে বহু মন্দির গড়েন। পূর্ব জাভার তুলিসকাইয়ো গ্রামে গণেশের প্রাচীন ৩ মিটার মূর্তি পাওয়া গেছে। বর্মা বা আজকের মায়ানমারে রয়েছে গণেশ প্যাগোডা। গণেশের বার্মিজ নাম হল মহা পেইন। উত্তর চিনেও ৫৩১ খ্রিষ্টাব্দে মহা গণপতির মূর্তি পাওয়া গেছে। চিনে গণেশকে হো তেই নামে ডাকা হয়। বিশাল বপুর হো তেইকে সুখ সমৃদ্ধির দেবতা হিসাবে মানা হয়। শ্রীলঙ্কায় তামিলরা পিল্লাইয়ার নামে গণেশকে ডাকেন। মঙ্গোলিয়ায় গণেশের নাম Totkharour Khaghan।
প্রাচীন রোমান আমলে জানুস নামে এক দেবতার আরাধনা করা হত। শুভকাজের আগে জানুসের পুজো করা হত। জানুয়ারি কথাটি এসেছে জানুস থেকে। জানুয়ারি মাসের পয়লা তারিখে পুজো করা হত। রোমান দেবতা জানুসের সঙ্গে মিল আছে গণেশের। শুধু রোমান আমলেই নয় প্রাচীন আজটেক সভ্যতাতেও হস্তিমুখ দেবতার আরাধনা করা হত। ইন্দোনেশিয়ায় মুদ্রা রুপিয়াহ নোটে গণেশের ছবি রয়েছে।