কেন মেদিনীপুর ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল, রঙ্কিনীদেবীকে! জানুন এক অজানা উপাখ্যান
Untold Story of Rankini Devi

The Truth of Bengal: বিভূতিভষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা রঙ্কিনীদেবীর খড়গ গল্পটি অনেকেই হয়তো পড়েছেন। ছোটনাগপুর মালভূমির প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘাটশিলার প্রেক্ষাপটে লেখা এক জাগ্রত লোকদেবীর গল্প। যে দেবী, ভবিষ্যতের অশনি কোনও সংকেতকে তুলে ধরেন তাঁর খড়্গের মাধ্যমে। অনেকেই হয়তো জানেন না, এই রঙ্কিনীদেবীর আদি বাস ঘটশিলায় নয়, তিনি আগে থাকতেন মেদিনীপুরের জঙ্গলে। বর্তমান সময় দেখলে মেদিনীপুরের জামবনির রাজাদের যে কনকদুর্গা দেবী, তিনিই চিলকিগড়ের প্রধান দেবী হিসেবে পরিচিত। গভীর জঙ্গলের মধ্যে পাহাড়ি দুলুং নদীর পাহাড়ে উপর কনকদুর্গার দেবালয় নির্মিত হয়েছে। আগে পঞ্চরত্নের একটি মন্দির ছিল। সেটি বর্তমানে নেই। কিংবদন্তী রয়েছে, একটা সময়ে এখানে নরবলি দেওয়া হত।
যদিও গবেষকদের মত, একটা সময় ছিল, যখন স্থানীয় জঙ্গলের রাজারা এই দেবীর সামনে শত্রুদের মুণ্ডচ্ছেদ করে শাস্তি দিতেন। গবেষকদের দাবি, জঙ্গলমহলের কোনও বনদেবী পরবর্তী সময়ে বনদুর্গা হয়েছেন। পরে জামবনির রাজাদের রাজকীয় পোষকতায় কনকমণ্ডিত হয়ে তিনি কনকদুর্গা নাম ধারণ করেছেন। আজও দলুং নদীর তীরে কনকদুর্গা যেখানে বিরাজ করেন, সেখানকার পরিবেশে যেন হারানো অতীতের আরণ্যক হিংস্রতার গন্ধ বাতাসে ভেসে আসে। কনকদুর্গা ছাড়াও, চিলকিগড়ে বিখ্যাত রঙ্কিনী দেবীও আছেন। জামবনিতে তিনি খুব বিখ্যাত না হলেও, রাজবাড়ির সীমানার মধ্যে তাঁর অধিষ্ঠান বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। রাজবংশের কুলদেবতার মতোই তিনি পূজিত হন, অথচ কনকদুর্গার আভিজাত্যের কাছে, তিনি কোথাও যেন চাপা পড়ে গিয়েছে। ধলভূম রাজাদের সঙ্গে রঙ্কিনী দেবীর সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ট। কিংবদন্তী রয়েছে রঙ্কিনী দেবী আগে ছিলেন খড়গপুরের কাছে। সেখানে পীর লৌহানির সঙ্গে তাঁর লড়াই হয়। লড়াই মূল কারণ হল নরবলি নিয়ে বিবাদ।
গ্রামের লোককে পালাক্রমে রঙ্কিনীদেবী একটি করে মানুষ জোগাতে হত, নরবলির জন্য । একবার এক বিধবার পালা পড়ে। বিধবার ছিল একটি মাত্র পুত্র সন্তান। তার দুঃখে সে যখন কাতর হয়ে কাঁদছে, তখন পীর লোহানি, তার জন্য ওকালতি করতে যান রঙ্কিনীদেবীর কাছে। পীরের সঙ্গে দেবীর বিবাদ হয় এবং লড়াইও হয়। পীরের কাছে হেরে গিয়ে দেবী খড়গপুর ছেড়ে ধলভূম রাজাদের কাছে জঙ্গলভূমিতে চলে যান। ধলভূমের রাজারা তাঁকে প্রতিষ্ঠা করে নরবলির ব্যবস্থা করেন।