Abhishek Banerjee: রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় গঠন করা হবে তিনটি করে বিশেষ তদারকি টিম: অভিষেক
ভোটের কাউন্টডাউন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জনসংযোগ ও সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
Truth of Bengal: ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন বছরের শুরু থেকেই রাজনৈতিক ময়দানে গতি বাড়াতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ভোটের কাউন্টডাউন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জনসংযোগ ও সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এসআইআর ঘিরে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের প্রচার কর্মসূচি কতটা কার্যকরভাবে এগোচ্ছে, তা নিয়ে কড়া নজরদারির বার্তাও দেন তিনি। শুক্রবার দলের একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক জানান, রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় গঠন করা হবে তিনটি করে বিশেষ তদারকি টিম। প্রতিটি দলে বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পুরসভার চেয়ারম্যান ও ব্লকের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রতিটি টিমে সদস্য সংখ্যা থাকবে পাঁচ থেকে দশ জন। লক্ষ্য একটাই—প্রচারে কোনও শৈথিল্য বা ঘাটতি যেন না থাকে।

নেতা-কর্মীদের আচরণ নিয়েও স্পষ্ট নির্দেশ দেন অভিষেক। মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় শালীনতা ও সংযম বজায় রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আচরণই নেতাদের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরে। মানুষের কাছে পৌঁছনোর সময় যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই ও পরিশ্রমের প্রতিফলন কর্মীদের ব্যবহারে ধরা পড়ে, সেই বার্তাও দেন তিনি। অভিষেক জানান, ১ জানুয়ারি থেকেই ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ কর্মসূচি নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু হবে। এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১৮০০ জন প্রভাবশালী নাগরিক বা ইনফ্লুয়েন্সারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২০০ জনের কাছে সরাসরি পৌঁছবেন মন্ত্রী ও সাংসদরা, আর বাকি অংশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন বিধায়ক ও জেলা নেতৃত্ব। গোটা রাজ্যজুড়ে এই কাজে যুক্ত থাকবে ৩৮টি টিম, এক মাসের মধ্যেই প্রচার শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
প্রচারকিটে থাকছে উন্নয়নের পাঁচালি সংক্রান্ত নথি, গত ১৫ বছরের রিপোর্ট কার্ড, উত্তরীয় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি। এই সামগ্রী দিয়েই সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের কাজ ও সাফল্য তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি। ভোটের আগে সংগঠনের কাজ দু’দিক থেকে চলবে বলেও জানান অভিষেক। তাঁর কথায়, আগামী দেড় থেকে দু’মাস একদিকে যেমন এসআইআর সংক্রান্ত কাজ চলবে, তেমনই জেলা ভিত্তিক কো-অর্ডিনেটররা জনসংযোগ কর্মসূচির অগ্রগতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। তিনি নিজেও ২ জানুয়ারি থেকে সরাসরি কর্মসূচিতে নামবেন বলে জানান।

রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের কাছে পৌঁছনোর আহ্বান জানিয়ে অভিষেক বলেন, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের প্রাপ্য প্রায় দুই লক্ষ কোটি টাকা এখনও বকেয়া। সেই অর্থ না পেয়েও রাজ্যে লক্ষ্মীর ভান্ডার, রাস্তা ও আবাসনের মতো একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তাঁর দাবি, উন্নয়নের গতি বিজেপি থামাতে পারেনি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হওয়ার পরেও কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের অর্থ বন্ধ করে রেখেছে। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সেই টাকা রাজ্যকে দেওয়া হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন। এই তথ্য সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দেন তৃণমূল নেতৃত্বকে।

ভিনরাজ্যে বাঙালিদের উপর হামলার প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিচয়কে যারা অপমান করে, তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এসআইআর সংক্রান্ত শুনানি নিয়েও সতর্কবার্তা দেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কারও নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়লে সরাসরি শুনানির মাধ্যমে তা সংশোধনের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, একজন যোগ্য ভোটারের নামও যেন বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বৈঠকের শেষে সংগঠনের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়ে অভিষেক বলেন, এটি লড়াইয়ের সময়। সামান্য ঢিলেমি দেখালেই বিরোধীরা আক্রমণ করবে। তাই প্রতিটি স্তরে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সক্রিয়তা বজায় রাখার নির্দেশ দেন তিনি।






