ভারত-বাংলাদেশ বিরোধ: প্রকৃতি যেখানে বিরোধ নিষ্পত্তিকারক
India-Bangladesh conflict: Where nature is the dispute resolver

ড. রামকৃষ্ণ সেন: বর্তমানে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা দীর্ঘদিনের। চিনের সঙ্গেও সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা আরও জটিল। সীমানা নিয়ে দুটি রাষ্ট্রের বিরোধের ঘটনা বহু পুরনো। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সীমানা নিয়ে বিরোধ তো মাঝে মাঝে আঞ্চলিক নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলে দেয়। ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তরেখা ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ কিংবা ভারত-চিনের ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ এর বড় উদাহরণ। সমুদ্রঘেরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এই সমস্যা নেই। তবে, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যা সম্পর্কে তেমন কিছু শোনা যায় না।
পাকিস্তানের সঙ্গে বর্তমান যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণের মনোভাব দেখে আমরা অনেকটাই অবাক হচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় অধিকাংশ বাংলাদেশি নাগরিক পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন আমাদেরকে ব্যাথিত করে। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের স্বাধীনতা (১৯৭১) পরবর্তী সময় থেকে সুসম্পর্কের দরুন কখনওই সীমানাসহ কোনও বিষয় নিয়ে এত জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেনি।
দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তবে, বঙ্গোপসাগরের মাত্র ২.৫ বর্গ কিমি আয়তনের দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘ চার দশক ধরে চলে দ্বন্দ্ব। কীভাবে দুই বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র জড়িয়ে পড়েছিল এই দ্বন্দ্বে? আর কীভাবেই বা হয়েছিল এর সমাধান? জানলে অবাক হতে হবে। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা বা আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা বা অন্য কোনও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্বারা এই সমস্যার সমাধান হয়নি। প্রকৃতিই এই সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। আরও অবাক করার বিষয় হল বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম ভিলেন হিসেবে খ্যাত ‘জলবায়ুর পরিবর্তন তথা ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন’ দ্বারা এই সমস্যার সমাধান হয়েছিল।
নিউমুর বা দক্ষিণ তালপট্টি নামক দ্বীপ নিয়েই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এই সমস্যা উদ্ভব হয়েছিল। ভৌগোলিকভাবে নিউমুর দ্বীপ ২১°৩৭′ উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯°১২′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দুই ২৪ পরগনা জেলার ও বাংলাদেশের সাতক্ষীরার মধ্যবর্তী স্থানে দুই দেশকে পৃথক করেছে একটি নদী, যার নাম হাড়িয়াভাঙ্গা নদী। বিরোধপূর্ণ দ্বীপটি হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনার কাছেই অবস্থিত হওয়ায় দুই দেশই এর মালিকানা দাবি করে বসে। ভারতের সুন্দরবনের মুর দ্বীপের দক্ষিন-পূর্বে অবস্থিত হওয়ায় ভারত একে নিউমুর বা পূর্বাশা নাম দেয় এবং বাংলাদেশের শ্যামনগর উপজেলার তালপট্টির দক্ষিণে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশ এর নাম দেয় ‘দক্ষিণ তালপট্টি’।
১৯৭০ সালে বঙ্গোপসাগরে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সাইক্লোন ভোলা’। ঘূর্ণিঝড়টি বঙ্গোপসাগরে ৮ নভেম্বর সৃষ্টি হয় এবং ক্রমশ শক্তিশালী হতে হতে এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ নভেম্বর এটির গতিবেগ সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি (১১৫ মাইল)-এ পৌঁছয় এবং সেই রাতেই তা উপকূলে আঘাত করে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ প্লাবিত হয়। এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রায় সেদেশের ৫ লক্ষ মানুষ মারা যায়। সেই সময় বাংলাদেশ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের অধীনে। এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর উদাসীনতা বাঙালির মনে চরম আক্রোশের সৃষ্টি করে। স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্ন আরও একবার বাঙালির সামনে এসে দাঁড়ায়। এরকম একটি পরিস্থিতিতে এই ‘৭০ এর সাইক্লোনেই বঙ্গোপসাগরে ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের জলসীমায় জেগে ওঠে এই দ্বীপ। এই সময় নদী মোহনার খামখেয়ালিপনায় পড়ে দক্ষিণ তালপট্টি কিংবা পূর্বাশা দ্বীপটি যে ভবিষ্যতে দুই দেশের বিবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
১৯৭৪ সালে আমেরিকার ভূ-উপগ্রহ ইআরটিএস-১ সর্বপ্রথম দ্বীপটির অবস্থান শনাক্ত করে। শনাক্তের পর স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণ করে দ্বীপের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এর পর পরই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বীপটি নিজেদের বলে দাবি করে, এবং নাম রাখে ‘পূর্বাশা’। এরপর বাংলাদেশও দ্বীপটির অবস্থান নিশ্চিত হলে মালিকানা দাবি করে বসে। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ দ্বীপটির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার আগেই ভারত সরকার দ্বীপটির নামকরণও করে ফেলে। দুই পক্ষই দাবি করে ‘থ্যালওয়েগ নীতি’ অনুসারে দ্বীপটি তাদের সীমানার ভেতরে পড়ে। ঠিক তখন থেকেই বিরোধের শুরু। পরবর্তী অংশ জানার পূর্বে আমাদের তাই ‘থ্যালওয়েগ নীতি’ বা ‘নদীর মূল স্রোতধারার মধ্যরেখা নীতি’ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
‘নদীর মূল স্রোতধারার মধ্যরেখা নীতি’ হল এমন এক নীতি যার সাহায্যে দুটি রাষ্ট্রের মধ্যবর্তী জলসীমান্ত নির্ধারণ করা হয়। নীতি অনুসারে, যদি দুটি দেশের সীমান্ত কোনও নদী দ্বারা পৃথক হয়, তবে নদীর মূল স্রোতধারার মধ্যরেখা হবে দুই দেশের সীমান্ত রেখা।
যেহেতু, সাতক্ষীরা অঞ্চলে বাংলাদেশ আর ভারতের সীমানা হাড়িয়াভাঙ্গা নদী দ্বারা পৃথক করা হয়েছে সেহেতু মিড চ্যানেল ফ্লো প্রিন্সিপাল বা ‘নদীর মূল স্রোতধারার মধ্যরেখা নীতি’ অনুসারে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মূল স্রোতধারার মধ্যরেখাকে দুই দেশের সীমানা ধরা হয়। তবে সমস্যার উদ্ভব ঘটে যখন হাড়িয়াভাঙ্গা বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। দ্বীপটি নদীর মিড চ্যানেল ফ্লো-এর ঠিক মধ্যে অবস্থান করায় হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর স্রোতধারা কখনও দ্বীপটিকে বাংলাদেশের দিকে রেখে দ্বীপের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়, আবার কখনও দ্বীপের পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে, মূল স্রোতধারা নির্ধারণ এই অংশে একটি জটিল পরিস্থিতির উদ্রেক করে। আর দুই পক্ষই দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপকে নিজেদের দাবি করে। কিন্তু, প্রশ্ন হল ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট এমন ছোট্ট একটি দ্বীপ নিয়ে দুই বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের বিবাদের কারণটা ঠিক কী? প্রকৃতপক্ষে, ভূ-বিশ্লেষকরা দক্ষিণ তালপট্টির মাটির নিচে বিপুল পরিমাণ গ্যাস, কয়লা ও খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। আর এই বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদের ভাণ্ডারই মূলত দুই দেশের আগ্রহের কারণ ছিল। এছাড়াও, দ্বীপের আকার বেড়ে গেলে তা বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করার বিষয় তো ছিলই।
দ্বীপ নিয়ে বিবাদের মীমাংসার জন্য ১৯৭৯ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে ভারতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উভয় পক্ষ দ্বীপটিকে নিজেদের দাবি করে বিভিন্ন তথ্য ও স্যাটেলাইট ছবি পেশ করেন। এরপর দুই দেশের পক্ষ যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয় যে এসব তথ্য আর স্টাডির উপর ভিত্তি করে আলোচনার মাধ্যমে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ নিয়ে বিবাদের সুষ্ঠু সমাধানে আসবে দুই দেশ। তবে, এসব আলোচনার মধ্যেই ১৯৮১ সালের ১১ মে ভারত নিউমুর দ্বীপে ‘আইএনএস সন্ধ্যায়ক’ নামের একটি ভারতীয় নৌজাহাজ পাঠায় এবং সেখানে বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) চৌকি স্থাপন করে। দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপে উড়তে থাকে ভারতের পতাকা। বাংলাদেশ এই ঘটনার দু’দিন পরই, অর্থাৎ ১৩ মে কোস্টগার্ডের দুটি গানবোট প্রেরণ করে এবং বিএসএফ-এর চৌকিতে হামলা চালায়। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্রের যুদ্ধে না জড়িয়ে ভারত দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় এবং দ্বীপটিকে নো ম্যান’স ল্যান্ড ঘোষণা করে।
এরপর বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা আর পালাবদল দক্ষিণ তালপট্টিকে আলোচনায় আসতে দেয়নি। তবে, দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাংলাদেশ ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সীমানা বিরোধ মীমাংসা আদালতে বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপসহ ২৫,০০০ বর্গ কিমি এলাকায় নিজেদের কর্তৃত্ব দাবি করে একতরফা মামলা করে। ভারত সরকার জানে এটি একটি ভিত্তিহীন দাবি। ভৌগোলিক রীতি অনুসারে নিরপেক্ষ বিচার হলে দ্বীপটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে। তবুও বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রাখতে ভারত সরকার দ্বীপটির দাবি থেকে সরে এসে তাকে নো ম্যানস ল্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু ভূগোলবিদ হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মিড চ্যানেল ফ্লো-কে পশ্চিম দিকে সরিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে বিভিন্ন গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যা এককথায় রীতিবিরুদ্ধ। কারণ প্রকৃত প্রবাহকে তারা মানচিত্রে উপস্থাপন করেননি।
ভারতীয় ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ জানতেন যে নিরপেক্ষ ভাবে দেখলে দ্বীপটি মিড চ্যানেল ফ্লো-এর ঠিক মাঝখানে একটু পশ্চিমদিক ঘেঁষে অবস্থান করছে, যা ভারতের মধ্যেই দ্বীপটির অবস্থানকে নির্দেশ করে। এর ফলে দ্বীপটিকে নো ম্যানস ল্যান্ড হিসেবে মেনে নেওয়া ভারত-বাংলাদেশের মামলার মাধ্যমে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের ব্যাপারে একটি নিরপেক্ষ মীমাংসার আশায় বুক বাঁধে। কারণ ভূরাজনৈতিকভাবে এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত রীতি অনুযায়ী দ্বীপটি ভারতের হলেও কেবলমাত্র বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশের সঙ্গে বিরোধে না যাওয়ার জন্য ভারত এই দাবি থেকে সরে এসে দ্বীপটিকে নো ম্যানস ল্যান্ড হিসেবে মেনে নিয়েছিল।
চিনের দ্বারা প্রভাবিত বাংলাদেশ এই বাস্তবতা না বুঝে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে বসে। কারণ বাংলাদেশ এই দ্বীপটির মালিকানা পেলে চিন বাংলাদেশকে প্রচুর অর্থ সাহায্যের বিনিময়ে এখানে তার সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করতে পারবে। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল বাংলাদেশকে তাই তারা প্ররোচিত করে মামলা করতে। তবে, এখানেই আবির্ভাব হয় এই গল্পের মহানায়কের। এই মহানায়ক হলো বিশ্ব উষ্ণায়ন! খলনায়ক হিসেবে পরিচিত এই বিশ্ব উষ্ণায়নই মহানায়কের ভূমিকা পালন করে। যে দ্বীপ নিয়ে দুই বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র বিবাদে জড়িয়েছিল তাদের বিবাধ মীমাংসার দায়িত্ব নিজ কাছে তুলে নেয় স্বয়ং প্রকৃতি। ২০১০ সালের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের জলের উচ্চতা প্রতিবছর বৃদ্ধি পেয়ে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে আসলে পূর্বাশা বা নিউ ম্যুর আইল্যান্ডের কোনও অস্তিত্ব এখন আর নেই! দ্বীপের সম্পূর্ণ অংশ আবার সমুদ্রগর্ভেই তলিয়ে গেছে। তাই, বিবদমান দুই পক্ষের যে-ই জয়লাভ করুক, দক্ষিণ তালপট্টি দু’দেশের কাছেই মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
প্রকৃতির খেয়ালে গড়ে ওঠা যে দ্বীপ ঘিরে বিবাদের শুরু হয়েছিল, প্রকৃতিই সেই বিবাদের নিষ্পত্তি ঘটায়। যদিও পরবর্তীতে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিরোধ মীমাংসা আদালত রায় ঘোষণা করে যে পূর্বাশা বা নিউমুর দ্বীপ পূর্বে যেখানে ছিল সেই অংশ ভারতের অংশ। এখানেই ভারতের ভূগোলবিদ ও ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বাস্তবসম্মত দাবির প্রতিফলন ঘটে। তবে, যেহেতু বর্তমানে দ্বীপের অস্তিত্ব আর নেই, তাই যেখানে দ্বীপটি ছিল সে অংশের সমুদ্রসীমায় ভারতের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ভবিষ্যতে দ্বীপটি জেগে উঠলে বিতর্কহীন ভাবে সেটা বাংলাদেশের অংশ হিসেবেই পরিগণিত হবে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন নিঃসন্দেহে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রতিবছর সমুদ্র জলপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩.৬ মিলিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা ২১০০ সাল নাগাদ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিনদিকের দ্বীপগুলির ১৭-২০ শতাংশ সাগরতলে চলে যাবে। পূর্বাশার নিমজ্জন যেন সে সবই আবার মনে করিয়ে দিয়ে গেল। মানুষের খেয়াল যদি পরিমিত না হয় তবে, প্রকৃতির খেয়াল যে কত ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে পূর্বাশার তলিয়ে যাওয়া সেটাই জানিয়ে গেল বোধহয়।