‘ভূতুড়ে’ ভোট, কালীগঞ্জের প্রকাশিত ভোটার তালিকা মান্যতা দিয়েছে মমতার অভিযোগ
Mamata alleges 'ghostly' vote, Kaliganj's published voter list is valid

ইন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক): মহারাষ্ট্র, দিল্লি নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের স্বল্প দিনের ব্যবধানে ভোটার তালিকা থেকে প্রচুর ভোটার বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার একই সঙ্গে রেকর্ড সংখ্যক ভোটার সংযোজিত হয়েছে। সবটাই বিজেপিকে জেতানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আঙুল উঠেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিধানসভা কেন্দ্রে কয়েক হাজার ভোটারের নাম বাদ দেয় কমিশন, আবার ওই কেন্দ্রে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর সংখ্যক ভোটারের নাম সংযোজন করা হয়। স্বভাবতই সেখানে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে হারতে হয় কেজরিওয়ালকে।
যে মহারাষ্ট্র ও দিল্লি নিয়ে বিজেপির অন্দরেই দুশ্চিন্তা ছিল জেতার ক্ষেত্রে, মিডিয়ার সম্ভাব্য ফলেও বিজেপিকে ব্যাকফুটে রাখা হয়েছিল। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। আর এটা শুধু একটা কোনও বিধানসভা নয়, প্রতিটি বিধানসভা ধরে ধরে ব্যাপক পরিমাণে তালিকা থেকে ভোটারের নাম ছেটে দেওয়া হয়েছে, সংযোজনও হয়েছে প্রচুর। এতে প্রচুর ভূতুড়ে ভোটারের জন্ম হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। আর এটা কার স্বার্থে হয়েছে এই প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন কাঠগড়ায়। একই এপিক নম্বরে আলাদা আলাদা নামের অস্তিত্বও মিলেছে।
আর এই বিষয়টা ধরতে পেরেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিত চিহ্নিত করতে পেরেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের এই কৌশলকে। যা অন্যান্য বিরোধী দলগুলির মাথায় প্রথমে ঢোকেনি। পরবর্তীতে অবশ্য তাঁরা এটাকে গুরুত্ব দিয়েছে। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এভাবে জমি ছাড়তে নারাজ। কেন না ২০২৬-এ বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন, তাই তিনি এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক, ভুতুড়ে ভোটার ধরতে তাই তিনি তাঁর মেশিনারিকে কাজে লাগিয়েছেন, তিনি তা প্রমাণও করেছেন, প্রথমে কমিশন বিষয়টাকে গুরুত্ব না দিলেও পরে স্বীকার করেছেন ও মান্যতা দিয়েছেন।
আজ বাদে কাল কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বচন। মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগকে মান্যতা দিয়ে যে কমিশন সংশোধিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে ৫ হাজার ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। এরা ভূতুড়ে ভোটার। যেখানে পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই নাম রয়েছেন। গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয়েছে সংশোধিত ভোটার তালকা। কমিশনের বক্তব্য, পুরুষ ভোটারের ক্ষেত্রে ড্রাফট এনরোলমেন্ট হয়েছিল ১,৩১,৬৯৩। চূড়ান্ত ক্ষেত্রে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,৩০, ৩৬৩। মহিলাদের ড্রাফট এনরোলমেন্ট ১,২৩,২৭১, চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে ১,২২,৩০৩ জন।
এখন প্রশ্ন উঠছে, যদি কালীগঞ্জ এর মতো একটি বিধানসভা যার ভোটার সংখ্যা আড়াই লক্ষের মতো, সেখানে ৫,৮৪০ জন ভুতুড়ে ভোটারের অস্তিত্ব মেলে তা হলে রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে এর সংখ্যা কত দাঁড়াবে? নির্বাচন কমিশন কী বলবে এই ভুতুড়ে ভোটার নিয়ে? কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা কী থাকছে?