লাইফস্টাইল

চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক উৎসবের মাধ্যমে সমাজের উচ্চ বংশজাতদের সম্ভ্রম পান অন্তজ্যরা

On the occasion of Chaitra Sankranti, the high castes of the society get the respect of the upper castes through the festival

Truth Of Bengal: মৌ বসু: চড়ক উৎসব হল বাংলার লোকায়ত জীবন দর্পণ। চৈত্র মাসের শেষে বাংলার বর্ষবিদায়ের মধ্যে দিয়েই বাজে গাজনের বাজনা। শিবগোত্র ধারণ করে আপন গোত্র বিসর্জন দিয়ে চলে সন্ন্যাসব্রত পালন। চক্র থেকে এসেছে চড়ক কথাটি। চৈত্র সংক্রান্তিতে একসময় বাংলার গ্রামেগঞ্জে চড়ক, গাজনের মতো সনাতনী উৎসব হত। এখন কোনো মতে এই উৎসব টিকে আছে।

গাজন অংশ হিসেবেই পরের দিন পালিত হয় নীল পুজো। সনাতন সংস্কৃতি মেনে সন্তানের মঙ্গল কামনায় গাজন সন্ন্যাসীদের ফল, আতপচাল, ও অর্থ দান করেন মায়েরা। অনেকে গোটা দিন উপবাস করে শিবের পুজো দেন। চৈত্রের একেবারে শেষ দিনে উদযাপিত হয় চড়ক। গাজনতলায় হয় চড়কগাছের পুজো। চড়কগাছ মানে একটি লম্বা কাঠের দণ্ড। তার উপরে অনেকটা উঁচুতে আংটায় ঝুলে থাকা জনা সন্ন্যাসীরা ক্রমাগত ঘুরপাক খান। চক্র থেকে এসেছে চড়ক কথাটি। চৈত্র মাসের শেষ দিন থেকে বৈশাখ মাসের প্রথম দু-তিন দিন চলে এই চড়ক মেলা। এটি চড়ক সংক্রান্তির মেলা হিসেবেও পরিচিত।

চড়ক পুজোর অঙ্গ হল- কুমিরের পুজো, জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর হাঁটা, কাঁটা ও চুরির উপর লাফানো, বানফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নি নৃত্য, চড়কগাছে দোলা, দানো-বারানো পুজো। চড়ক গাছে ভক্ত- সন্ন্যাসীদের লোহার হুরকো দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। তাদের মতে বিভিন্ন তন্ত্র- মন্ত্রের মাধ্যমে এই বর্শি বিধানো হয়, যার ফলে এই সমস্ত কাজ কর্মের সঙ্গে লিপ্ত থাকা কোন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এছাড়াও পিঠে, হাতে, পায়ে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে শলাকা বিদ্ধ করা হয়।

আদি কাল থেকে চড়ক উৎসবের সঙ্গে জাদুবিশ্বাস জড়িত রয়েছে। আদিকালে গর্জন, শাল বা গজারি গাছের খুঁটি সারাবছর পুকুরের জলে ডুবিয়ে রাখা হত। নীলষষ্ঠীর দিন গাজন সন্ন্যাসীরা তা পুকুর থেকে তুলে এনে মাটিতে শক্ত করে পোঁতেন। তার আগে তেল মাখিয়ে রাখা হয়। এই লৌকিক আচারের নাম গাছ জাগানো। গাছ আসলে শিবলিঙ্গের প্রতীক আর মাটি বা ভূমি হল মা পার্বতী। গাছ জাগানো আসলে উর্বরতার প্রতীক বলে মনে করা হয়। এরপর গাছে বাঁশ বেঁধে চক্রাকারে ঘোরা হয়। এর থেকে চড়ক শব্দ এসেছে। অনেকে মনে করেন চক্রাকারে ঘোরার মাধ্যমে আসলে সৌরচক্র শেষ করা হয়। সেদিক থেকে দেখলে চড়ক উৎসবের মধ্যে সূর্য পুজোর ধারাও বহমান।

এরসঙ্গে কাটারি, ঝাঁপ, কাঁটা ঝাঁপ ও বাণফোঁড়ার মতো আদিমকালের জাদুবিশ্বাসের বিষয় জড়িত। পাশাপাশি, জড়িয়ে আছে আদিম কালের শল্য চিকিৎসার বিষয়ও। এই পদ্ধতিতে আদিমকালে হাঁপানি, যক্ষা রোগ সারত বলে মনে করা হত। গাজন সন্ন্যাসীরা একে শিবের মহিমা বলে মনে করতেন।

Related Articles