অফবিট

বারাকপুরের অন্নপূর্ণা মন্দিরে এসেছিলেন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, জানেন কেন?

Sri Sri Ramakrishna Paramahamsadev came to Annapurna Temple in Barrackpore, do you know why?

Truth Of Bengal: বারাকপুরের অন্নপূর্ণা মন্দির নির্মাণ করেছিলেন রানি রাসমণির কনিষ্ঠা কন্যা তথা মথুরমোহন বিশ্বাসের পত্নী জগদম্বা দেবী। বারাকপুরের এই মন্দির দেখতে অবিকল দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের মতো। এই অন্নপূর্ণা মন্দিরে ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব মোট চার বার এসেছিলেন। মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন নৌকায় এসে তিনি মন্দির প্রাঙ্গণের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বেলতলায় বসেছিলেন। সেই বেলগাছটি আজও অক্ষত রয়েছে।

বারাকপুরের এই অন্নপূর্ণা মন্দির নির্মিত হয়েছিল দক্ষিণেশ্বরের মন্দির নির্মাণের ঠিক কুড়ি বছর পরে। স্বামী মথুরমোহন বিশ্বাসের ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতেই জগদম্বা তৈরি করেছিলেন এই মন্দির। এই মন্দিরটি তৈরি করতে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। মন্দিরের মূল প্রবেশপথ পূর্ব দিকে।

ন’টি চূড়াবিশিষ্ট নবরত্ন মাতৃমন্দির, ছ’টি আটচালার শিবমন্দির, দু’টি নহবতখানা, নাটমন্দির, ভোগের ঘর, গঙ্গায় স্নানঘাট ইত্যাদি তৈরি হয়েছিল। ছ’টি শিবমন্দির যথাক্রমে কল্যাণেশ্বর, কাম্বেশ্বর, কিন্নরেশ্বর, কেদারেশ্বর, কৈলাসেশ্বর, ও কপিলেশ্বর। এই মন্দির নির্মাণের পেছনে একটা কাহিনি আছে। বারাকপুর তালপুকুর অঞ্চলের অন্নপূর্ণা মন্দির। বারাকপুর- টিটাগড় অঞ্চলের প্রাচীন নাম চানক। তাই এই মন্দির চানক মন্দির নামেও পরিচিত।

১৮৪৭-এ রানি রাসমণি তাঁর জামাই মথুরমোহন বিশ্বাস, আত্মীয়স্বজন ও দাসদাসীদের নিয়ে বজরায় কাশীযাত্রা করেছিলেন। যাত্রা শুরুর দিন রাতেই তিনি স্বপ্নাদেশ পান – কাশী না গিয়ে গঙ্গার পাড়েই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে নিত্যপুজোর ব্যবস্থা করা হোক। রানি রাসমণি কাশীযাত্রা স্থগিত করে ফিরে আসেন।

পরে ১৮৫৫ সালে দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। শোনা যায়, অন্নপূর্ণা-দর্শন না হওয়ায় মথুরমোহনের মনে মনে ইচ্ছে ছিল দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করেন তাঁর স্ত্রী, রানি রাসমণির ছোটো মেয়ে জগদম্বাদেবী। মন্দির প্রতিষ্ঠার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাঁদের পুত্র দ্বারিকানাথ বিশ্বাস।

মন্দিরের গর্ভগৃহে অধিষ্ঠিত শিব ও অন্নপূর্ণার বিগ্রহ অষ্টধাতুর। রুপোর পদ্মফুলের ওপর আসীন দেবীর একটি পা ঝোলানো, বাঁ হাতে অন্নপাত্র আর ডান হাতে হাতা। মহাদেব পাশে দাঁড়িয়ে, ভিক্ষাপাত্র নিয়ে। মাতৃমূর্তি দক্ষিণমুখী।অন্নপূর্ণা মন্দির তোরণদ্বারের ওপর স্থাপিত রয়েছে এক সিংহমূর্তি। কথিত আছে, এই সিংহমূর্তি নিয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকের সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সিংহমূর্তি সরিয়ে নেওয়ার জন্য নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল।

কারণ ব্রিটিশদের দাবি ছিল, সিংহ তাদের রাজশক্তির প্রতীক। বিবাদ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। তবে আইনি লড়াইয়ে জয় হয়েছিল রাসমণির পরিবারের। বারাকপুর মন্দিরের নির্মাণ শুরু হয় সিবি স্টুয়ার্টের কুঠিবাড়ি কিনে। মূল মন্দিরের সামনে অবস্থিত নাটমন্দিরের কারুকার্য অনেক বেশি। এর থামে গথিক স্থাপত্যের প্রভাব রয়েছে।

মন্দিরের ধনুকাকৃতি খিলানে রয়েছে সূক্ষ্ম নকশা। মন্দিরের পাশেই চাঁদনি রীতির গঙ্গার ঘাট, যা রানি রাসমণি ঘাট নামে পরিচিত। শোনা যায়, এই ঘাটে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ শিখ সৈন্যদের সঙ্গে স্নান করেছিলেন। এই মন্দিরে প্রতিদিন দেবীকে অন্নভোগ দেওয়া হয়। এবং ভোগে মাছ থাকা আবশ্যিক। অন্নপূর্ণা পুজোর দিন ভোগে থাকে পোলাও, সাদাভাত, পাঁচ রকমের ভাজা, পাঁচ রকমের মাছ, তরকারি, চাটনি, পায়েস ইত্যাদি। প্রতি মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে বিশেষ পুজো হয়। তা ছাড়া কালীপুজোর পরের দিন এবং অন্নপূর্ণাপুজোর দিন অন্নকূট উৎসব পালন করা হয়।

Related Articles