
Truth Of Bengal: যুধাজিৎ মুখোপাধ্যায়, বিসিসিআই কোচ, প্রাক্তন ক্রিকেটার: অসাধারণ প্রত্যবর্তন ঘটলো কলকাতা নাইট রাইডার্সের। এবং সম্পূর্ণ চ্যাম্পিয়নদের ফর্মূলা মাফিকই। এভাবেই ফিরে আসে চ্যাম্পিয়নরা বারবার, বারংবার। শত্রুদের মুখে ছাই ছুঁড়ে দিয়ে! এ মরসুমে ম্যাচ পিছু গড়ে প্রায় ২০০ রান করা একটা দল ১২০ রানে অল আউট! তাও এরকম একটা বোলিংয়ের সামনে। যাঁরা নাকি বুড়ো এবং হেরো! কীভাবে এই অসম্ভব সম্ভব হল?
পরিষ্কার দেখা গেল ওয়াংখেড়েতে চিরাচরিত দুঃস্বপ্নের রাত পেছনে ফেলে রাহানে এবং চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত জুটি যেন গতবারের রানার্সআপ হায়দরাবাদকে কীভাবে হারানো যায় তার নীল নকশা ছকে নিয়েই নেমেছিলেন মাঠে নেমেছিলেন বৃহস্পতিবার। তার ফলও দেখা গেলো কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটিংয়ে। মুম্বই ম্যাচে ১০০ বল খেলতে গিয়ে হাঁস ফাঁস করা দল হায়দরাবাদী বোলারদের নাকাল করলো ২০ ওভার ধরে।
লক্ষ্যণীয় পার্থক্য ছিল নাইটদের মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের এর প্রয়োগে জলদি ২ জন ওপেনারকে হারিয়ে রাহানে এবং সূর্যবংশী পিচ বুঝে সমঝোতা করলেন এবং সুযোগ বুঝে প্রতি আক্রমণে গেলেন। এ ক্ষেত্রে রাহানে যেন সেই বিশ্বকাপের রোহিতের মতো আগ্রাসী ব্যাটিং এবং অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড পড়ে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যই মনে করিয়ে দিলেন।
এবং সেই আক্রমণ জারি রেখেই দুই ‘ফল্প’ সুপারস্টার ভেঙ্কটেশ আইয়ার এবং রিঙ্কু সিংও নিজেদের সবটুকু দিয়ে ব্যাট করে কেকেআরকে ২০০ রানের ঘরে পৌঁছে দিলেন। ইডেনের পিচ কিন্তু এবার নাইটদের মন মতোই হয়েছিল খানিকটা। ২ স্পেস ও স্পিন সহায়ক। কিন্তু অসাধারণ বল করলেন দুই ওপেনিং পেসার বৈভব ও হর্ষিত রানা। এবং পরে আন্দ্রে রাসেলও। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বলের গতি কমিয়ে সানরাইজার্সের প্রথম দিকের তিন আগ্রাসী ব্যাটার হেড, অভিষেক, ঈশানকে ২ ওভারের মধ্যে প্যাভেলিয়নে পাঠিয়ে দিয়ে ম্যাচ প্রায় শেষ করে দিলেন দুই সমালোচিত পেসার।
যেটা বলছিলাম নীল নকশা- তার প্রমাণ পাওয়া গেল ফিল্ড প্ল্যানিং দেখে এবং ছক মাফিক বোলিং দেখে। হায়দরাবাদের প্রথমের তিন ব্যাটারকে তো বটেই পরের দিকে মারকুটে রেড্ডি, ক্লাসেন মেন্ডিসদেরও নাইট বোলাররা পছন্দ মত স্ট্রোক খেলতে দেননি। একটুকু জায়গা না দিয়ে এবং স্ট্রাটেজিক পজিশনে ফিল্ডার রেখে কামিন্সদের শুরু থেকেই চাপে দিলেন রাহানে বাহিনী। তাই প্রথম ম্যাচে প্রায় ৩০০ করে ফেলা দল কোনও মতে ১৬ ওভার অবধি ব্যাট করতে পারে।
তাই আপাতত ৪ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট পেয়ে নাইটরা পয়েন্ট তালিকায় ওপরের দিকে জায়গা করে নিল। মেগা অকশনের ধাক্কা সামলে টিমটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে হয়। মনে রাখতে হবে প্রতিবারই মেগা অকশনের পর অনেক চ্যাম্পিয়ন টিমই কিন্তু সমস্যায় পড়ে। উদাহরণ যেমন মুম্বই বা সিএসকের কারণটাও কিন্তু তাই। যাতে সেট টিমগুলো টুর্নামেন্টকে সম্পূর্ণ মনোপলি না বানিয়ে ফেলে তাই মেগা অকশনের মাধ্যমে একটা ক্যাকলুলেটেড চুস ফ্যাক্টর নিয়ে আসা।
বিসিসিআইকে সাধুবাদ এরকম মৌলিক উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার জন্যে। তেমনি সাধুবাদ জানাই কলকাতা নাইট রাইডার্স টিমকে। আইপিএল-এ যে দলের গভীরতা যত বেশি তার তত সুবিধে। সেইসঙ্গে খোলা মনে খেলতেও হবে। চাপে থাকা সত্ত্বেও এবং বিশ্ব ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টিতে অন্যতম সেরা ধ্বংসআত্মক ব্যাটিং লাইন আপের সামনে পড়েও বৈভব (প্রথম বলে চার খেয়েও) বা রানা কিন্তু ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা মাফিক বল করে গিয়েছেন।
রাসেল ক্যাচ ফেললেও এবং ব্যাটে রান না পেলেও বোলিংয়ে সফল হয়েছেন। এর জন্যে ড্রেসিংরুমের খোলামেলা আবহাওয়া এবং অবশ্যই নাইটদের বোলিং কোচ অরুণ মশাই কৃতিত্ব দাবী করতে পারেন। পরিশেষে বলি, কলকাতা নাইট রাইডার্স ৩ বারের চ্যাম্পিয়ন টিম। এর চেয়ে বেশি বার ট্রফি জিতেছে মুম্বই এবং চেন্নাইয়ের মত সুপার হেভিওয়েটরা (৫ বার করে)। বাঙালিদের না নিলেও- নাইট ম্যানেজমেন্ট কিন্তু ধারাবাহিকতাকেই প্রাধান্য দেয়। এবং ফাঁকা গ্যালারি দেখে নাইট কর্তৃপক্ষ কিন্তু টিকিটের দামও কমিয়ে দিয়েছে! আশা করব বাংলার ক্রিকেটের দিকে আরেকটু নজর দেবেন কর্তৃপক্ষ।
শেষে বলি, আইপিএল এক নতুন জিনিস দেখলো- কামিন্ডু মেন্ডিসকে এক ওভারে চার রান দিয়ে একটি উইকেট নিল, কিন্তু ৩টি করে বল করল বাম এবং ডান হাতে! ভবিষ্যতে কি এরকম সব্যসাচী বোলিংয়ের ধারাই প্রচলিত হবে? ভুলে গেলে চলবে না – একসময় আন্ডারহ্যান্ডে বোলিং হতো। উনিশ শতাব্দীর গোড়ায় একজন মহিলার স্কার্টে হাত আটকে যাচ্ছিলো বলে তিনি ওভারহ্যান্ড বোলিং শুরু করেন এবং তারপর ১৮৩৫ থেকে এই ধরনের বোলিংই অফিসিয়াল হয়। পরিবর্তনই জীবনের নিয়ম- খেলারও। দেখা যাক ভবিষ্যতে আরও কি উদ্ভাবন অপেক্ষা করে আছে!