কলকাতা

লাল-গেরুয়া এক হয়েছে অশান্তি করছে: মুখ্যমন্ত্রী

Red-saffron unity is causing unrest: Chief Minister

Truth Of Bengal: প্রতিবছরের মত এবছরও রেড রোডে ইদের নামাজের অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে সকাল ন’টা নাগাদ রেড রোডে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার সম্প্রীতির ঐক্য নষ্ট করতে যেভাবে বিরোধী দলগুলি প্রয়াস চলাচ্ছে তা নিয়ে সোচ্চার হন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় ছিল বাম ও বিজেপি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে। শান্ত বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। প্ররোচনা ছড়ানো হচ্ছে। কেউ যেন প্ররোচনায় পা না দেন সেই আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, লাল আর গেরুয়া আজ এক হয়েছে। তারা এক হয়ে অশান্তি সৃষ্টি করছে। বাংলায় অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি করে রাজনৈতিক লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে তারা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা বিভাজনের রাজনীতি করি না। ধর্মের নামে ব্যবসা করে কিছু রাজনৈতিক দল। এই প্রসঙ্গেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বস্ত করেন বাংলার আমজনতাকে। বলেন ‘কেউ গোলমাল পাকাতে এলে মনে রাখবেন দিদি আছে।’
লন্ডন সফর থেকে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় ফিরেছেন শনিবার। সোমবার মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব ইদ। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলেই লন্ডন সফরে একটি অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন।

সোমবার ইদের অনুষ্ঠানে জানান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার বাইরে যাওয়াটা জরুরি নয়। আমার ঘরের মানুষদের উৎসবে সামিল হওয়াটা আমার কাছে বড়। তাদের শুভকামনা জানানোটা জরুরি। সেজন্য এই উৎসবের আগেই তিনি ফিরে এসেছেন।

রামনবমীর আগে রাজ্যে বিরোধী দলগুলির উস্কানিমূলক প্রচার চলছেই। বিরোধী দলনেতা থেকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বা প্রাক্তন সাংসদ নানারকম মন্তব্য করেছেন। অস্ত্র নিয়ে মিছিল করার কথা বলছেন বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ। আবার দলের রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার প্রকাশ্য জনসভায় বলছেন, “আমার ভাইয়েদের কাছে অনুরোধ করে যাচ্ছি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেখানেই যাবেন ‘জয় শ্রীরাম’ বলে স্বাগত জানাবেন। পশ্চিমবঙ্গের যেখানেই যাবেন সেখানে আমরা জয় শ্রীরাম বলবো।”

সোমবার রেড রোডে ইদের নামাজের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যারা বাংলার সম্প্রীতি ভাঙার চেষ্টা করবে তাদের রেয়াত করা হবে না। সব ধর্মের প্রতি যে তিনি সমান শ্রদ্ধাশীল সে কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন খুশির মুহূর্তের একাধিক ছবি পোস্ট করে সামাজিক মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান।’

বাংলায় ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত, কিন্তু উৎসব সকলের। এখানে, আমরা একে অপরের আনন্দ, দুঃখ এবং ঐতিহ্যকে আমাদের নিজস্ব মনে করে আলিঙ্গন করি। প্রতি বছরের মতো, আজও কলকাতার রেড রোডে, আমি পবিত্র ইদ-উল-ফিতর উদযাপনে হাজার হাজার মানুষের সাথে যোগ দিয়েছি।

উৎসব আমাদের সম্মিলিত শক্তি, সম্প্রীতির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার এবং যারা আমাদের বিভক্ত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধের প্রতিফলন। এমন কিছু শক্তি আছে যারা ফাটল তৈরি করতে চায়, নিজেদের স্বার্থের জন্য সম্প্রদায়গুলিকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চায়।

কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলা ঘৃণাকে প্রত্যাখ্যান করে। আমাদের ভূমি অন্তর্ভুক্তির আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে ভালোবাসা এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আমাদের বিভক্ত করার যেকোনো প্রচেষ্টার চেয়েও গভীর। যতক্ষণ আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, কোনও শক্তিই আমাদের ভাঙতে পারবে না। মানবতা সর্বদা ঘৃণার উপর জয়লাভ করবে। আসুন আমরা এই বার্তাটি কেবল আজ নয়, প্রতিদিন এগিয়ে নিয়ে যাই।”

রেড রোডের অনুষ্ঠান সেরে মুখ্যমন্ত্রী যান পার্ক সার্কাস। সঙ্গে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, জাভেদ খান ও ফিরহাদ হাকিম। রিজওয়ানুর রহমানের বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে রিজওয়ানুরের মূর্তিতে মাল্যদান করেন তিনি। পরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

Related Articles