আন্তর্জাতিক

শুধু চোখ ধাঁধানো নয়, ইতিহাস আর আভিজাত্যে মোড়া রানির বাসভবন

The Queen's residence is not only stunning, but also steeped in history and nobility.

Truth Of Bengal: রাজাময় মুখোপাধ্যায়, লন্ডন: প্রায় ২০ ঘণ্টার জার্নি। লন্ডনে পৌঁছে ফ্রেশ হওয়ার পরও জেটল্যাগ-এর একটা ধকল ছিল। শরীর চাইছিল ঘুমোতে। তবে লন্ডন এসে সময় নষ্ট করতে চাইনি। আমরা যে হোটেলে আছি, সেখান থেকে মাত্র কয়েক কদম দূরে রানির বাসভবন বাকিংহাম প্যালেস। কয়েক শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রিটিশ আভিজাত্যের সেই সৌধ দেখার জন্য হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম সেখানে। দেখি, দেশ-বিদেশের বহু পর্যটকের ভিড়। সবাই দেখতে এসেছেন রাজপ্রাসাদ। পর্যটকের এই ভিড় সামাল দিতে দেখা যায় রাজপ্রাসাদের দীর্ঘদেহী, সুঠাম চেহারার নিরাপত্তা কর্মীদের।

চোখ ধাঁধানো এই প্রাসাদই ব্রিটেনের রাজ পরিবারের বাস। অনেকেই বলেন, বাকিংহামের ডিউক ১৭০৩ সালে এই প্রাসাদ তৈরি করেন। তারপর তৃতীয় জর্জ ১৭৬১-তে তাঁর স্ত্রী রানি শার্লটের জন্য প্রাসাদ উপহার দেন। ইতিহাস বলছে, ১৮৩৭ সালে ব্রিটিশ সম্রাটদের জন্য এই প্রাসাদ বাকিংহাম প্যালেস রূপে স্বীকৃতি পায়।

ইতিহাস বিজড়িত রাজ প্রাসাদে রয়েছে ৭৭৫টি ঘর, ১৯টি স্টেট রুম, ৫২টি রাজকীয় ও অতিথিদের শয্যাগৃহ। শুনলে অবাক হবেন চোখ ধাঁধানো বাকিংহাম প্যালেসে রয়েছে ১৮৮টি স্টাফ বেডরুম, ৯২টি অফিস ও ৭৮টি বাথরুম। সবসময় এই এই স্টেট রুমে এলে আপনাকে প্রবেশ করতে দেবে না। বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে এই দর্শনীয় বাকিংহাম প্যালেসের দরজা খোলা হয় সাধারণের জন্য।

শোনা যায়, সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় রানি এলিজাবেথ এখানেই কাটাতেন। বাকিংহাম প্যালেসের পর সবচেয়ে অভিজাত ঠিকানা হল উইন্ডসর ক্যাসল। এখানে রয়েছে ১ হাজারটি ঘর। ৪ লক্ষ ৮৪ হাজার বর্গফুট এলাকার ওপর গড়ে ওঠা রানির এই প্রাসাদ ইস্টারের সময় জমজমাট হয়ে ওঠে। ঘুরতে ঘুরতে যখন এদিক-ওদিক দেখি, তখন চোখ যায় উইন্ডসর ক্যাসেলের দিকে।

এই উইন্ডসর ক্যাসেলে রানি এলিজাবেথ তাঁর বোন মার্গারেটকে নিয়ে থাকার জন্য আসতেন। লন্ডনের মানুষ বলছেন, রানি এলাজেবেথের অত্যন্ত পছন্দের এই ভবন। পুরো এই এলাকাটি রয়েছে ১৩ একর জুড়ে, আর এই বিশাল চত্বরে রয়েছে ১ হাজার ঘর।

তবে এখানে এসে একটা জিনিস দেখলাম, রাজপ্রাসাদের একাংশ সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে রাজপ্রাসাদের বাকি অংশে সর্বসাধারণের প্রবেশের অনুমতি নেই। এরপর অনুসন্ধানী মন নিয়ে এগিয়ে যেতেই নজরে পড়ে বোলমোরাল ক্যাসেলে। ব্রিটিশ রাজকীয় স্থাপত্যের কথা জানতে গেলে এখানে উঁকি মারা চাই।

উইন্ডসর বা হলিরুড হাউসের মতো এই প্রাসাদ কিন্তু ক্রাউন এস্টেটের তত্ত্বাবধানে নেই একেবারেই। রাজপরিবারের কৌলিন্যে মোড়া এই ব্যক্তিগত প্রাসাদ আসলে রানি এলিজাবেথের একান্ত ব্যক্তিগত প্রাসাদ ছিল। স্কট বারোনিয়াল রীতিতে তৈরি হয়েছে এই বালমোরাল প্রাসাদ। বৈভব আর রাজ অহমিকাকে সঙ্গী করে এই বালমোরাল প্রাসাদ গড়ে উঠেছে ৫০ হাজার একর জমির উপর। প্রাসাদের কাছেই যে সব বাংলো রয়েছে তা দেখলেও অবাক হতে হয়।

কলকাতায় রয়েছে আমাদের গর্বের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। মধ্য কলকাতার বৃহৎ মার্বেল পাথরের স্মৃতিস্তম্ভ বড় গর্বের বিষয়। ৬৪ একর এলাকাজুড়ে রয়েছে এই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে রয়েছে ২৫টি গ্যালারি। রাজকীয় গ্যালারি, প্রতিকৃতি গ্যালারি, ভাস্কর্য গ্যালারি কার্যত ব্রিটিশ আমলের শিল্পরীতির গর্বের সম্পদকে তুলে ধরে।

এখন এই ব্রিটেনে এসে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কারণ, রাজপরম্পরার ইতিহাস সমৃদ্ধ এই প্রাসাদ চত্বরে রয়েছে এমন এক প্রাসাদ যা দেখে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। এখানে রয়েছে স্যান্ডরিংহ্যাম প্রাসাদ। প্রায় ২০ হাজার একর জায়গা জুড়ে থাকা এই প্রাসাদ শোনা যায়, ১৮৬২-তে রানি ভিক্টোরিয়া নিজের ছেলে সপ্তম এডওয়ার্ডের জন্য ক্রয় করেন। এটিই সবচেয়ে আরামদায়ক জায়গা। ১৮৭০ সালে এই প্রাসাদকে পুনর্নির্মাণ করা হয়। তাই রানির এই বিশাল প্রাসাদ ঘুরে দেখতে দেখতে অতীত কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।

ব্রিটিশরা ২০০ বছর ভারত শাসন করেছিল। জীবনপণ করে প্রতিটি ভারতবাসীকে সেই পরাধীনতার গ্লানি মুক্ত হওয়ার জন্য লড়াই করতে হয়। ব্রিটিশদের রাজদম্ভ এখন ম্লান হয়ে গিয়েছে। বিশ্বকবির ভাষায় বলি, ‘রাজছত্র ভেঙে পড়ে, রণডঙ্কা শব্দ নাহি তোলে, জয়স্তম্ভ মূঢ়সম অর্থ তার ভোলে।’ তবুও এই বিলেত-বিভুঁইয়ে দাঁড়িয়ে বলি, মানি বা নাই মানি, রাজ আভিজাত্যের কোনও তুলনা হয় না।

Related Articles