বিনোদন

শিকাগো সভা সেরে কলকাতা আগমন, বিশেষ আঙ্গিকে স্মরণ বিবেকানন্দকে

Return to Kolkata after Chicago meeting, remember Vivekananda in a special way

Truth Of Bengal: শিকাগো মহাসভা থেকে ফিরে আসার পর কিভাবে স্বামীজি বজবজ থেকে শিয়ালদা ফিরে এসেছিলেন তা তুলে ধরা হল বিশেষ আঙ্গিকে। ১৮৯৭-এর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ধর্মসভা থেকে বিবেকানন্দের প্রত্যাবর্তনের পর যে সর্বাত্মক জাগরণ ঘটে তার স্মরণে বুধবার শিয়ালদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রামকৃষ্ণ মঠও মিশন। বেলা ১২টা ১৫-য় বজবজ থেকে স্পেশাল ট্রেন পৌঁছায় শিয়ালদা স্টেশনে। সেখানে স্বামীজিকে বরণ করার জন্য হাজির ছিলেন সন্ন্যাসীদের মতোই অগণিত মানুষ।

নিজস্ব চিত্র

শিকাগোর বিশ্ব ধর্মমহাসভায় ভারতীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে স্বামীজির অবদান ও সর্বাত্মক জাগরণের কথা মনে করে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন শিয়ালদা স্টেশনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিভাবে ১৮৯৭-এর ১৯ফেব্রুয়ারি ট্রেনে বজবজ থেকে শিয়ালদায় বিবেকানন্দ ফেরেন তা তুলে ধরা হয়। সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক জাগরণ ও সনাতন ধর্মের বহমান ঐতিহ্যকে ফিরে দেখা হল।

নিজস্ব চিত্র

ঘড়ির কাঁটা ১২টা ১৫ মিনিট ছুঁতেই বজবজ থেকে আসা স্পেশাল ট্রেন পৌঁছায় শিয়ালদায়। যেভাবে স্বামীজি ট্রেন থেকে নামেন, স্টেশনে পদার্পণ করেন, তারপর তাঁকে স্টেশনে সংবর্ধনা জানানো হয়, সবটাই নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হল বিশেষ আঙ্গিকে। সনাতনী সংস্কৃতির অতীতে ডুব দিতে শিয়ালদহ স্টেশনের বাইরের একটি স্টেজে কলকাতা অদ্বৈত আশ্রমের পরিচালনায় স্বামীজীর স্মরণে অনুষ্ঠান হয়।

নিজস্ব চিত্র

দুপুর দুটোর সময় শিয়ালদা স্টেশন থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রা সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, স্বামীজির বাড়ি, বলরাম মন্দির এবং উত্তর কলকাতা ও বরানগরের বিভিন্ন স্থান, যেগুলি স্বামীজীর সঙ্গে জড়িত এবং ওই অঞ্চলে অধিষ্ঠিত মঠ-মিশনের শাখাকেন্দ্রগুলিকে ছুঁয়ে এগিয়ে চলে। শোভাযাত্রার পথে মঠ-মিশনের যে শাখা কেন্দ্রগুলি পড়ে, তাদের প্রত্যেকেই তাদের গেটের কাছে অনুষ্ঠান হয় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পক্ষ থেকে। রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দজী জানিয়েছেন, শিয়ালদা স্টেশনে তখন সেই শীতের সকালেও সমবেত হয়েছিল কুড়ি হাজার মানুষ।

নিজস্ব চিত্র

তাদের সমবেত হর্ষধ্বনির মধ্যে স্বামীজীর ট্রেন শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছায় সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ। স্বামীজি ট্রেন থেকে নামলে যাঁরা কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে থাকেন। আর যাঁরা দূরে ছিলেন তাঁরা সমবেত কণ্ঠে জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠেন, জয় পরমহংস রামকৃষ্ণদেব কি জয়, জয় স্বামী বিবেকানন্দ কি জয়। এরপর ভিড়ের মধ্যে থেকে কোনরকমে স্বামীজিকে বের করে নিয়ে তাঁকে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ঘোড়ার গাড়িতে উঠানো হয়। গাড়ি ছাড়ার আগেই একদল ছাত্র এসে গাড়ির ঘোড়া খুলে দিয়ে নিজেরাই স্বামীজিকে টেনে নিয়ে চলে রিপন কলেজের (এখনকার সুরেন্দ্রনাথ কলেজের) দিকে।

নিজস্ব চিত্র

তাঁর গাড়িকে অনুসরণ করে চলে এক বিরাট শোভাযাত্রা, যার মধ্যে আছে বহু মানুষ, বেশ কয়েকটি গানের দল এবং সাড়ি দিয়ে চলা বহু ঘোড়ার গাড়ি। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা বলছেন,শিকাগো ধর্মমহাসভা তথা আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে স্বামী বিবেকানন্দের অভাবনীয় সাফল্য এবং তাঁর ভারত প্রত্যাবর্তনের পর সমগ্র দেশ তাকে যে সাদর সংবর্ধনা জানায়-তা থেকেই ভারতবর্ষের সর্বাত্মক জাগরণের সূচনা ছিল। চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারীর মতে, স্বামী বিবেকানন্দই হিন্দুধর্ম এবং ভারতবর্ষকে রক্ষা করেছিলেন।

তিনি বলেছেন, তিনি না থাকলে আমরা আমাদের ধর্ম হারাতাম এবং স্বাধীনতাও লাভ করতে পারতাম না। আমাদের সবকিছুর জন্যই আমরা তাই বিবেকানন্দের কাছে ঋণী। চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারীর মতে, বিবেকানন্দের ভারত প্রত্যাবর্তন কোন সফল ব্যক্তির স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নয়। এ যেন ভারতের আত্মাই আবার ফিরে এসেছিল তাঁর মাধ্যমে।এই অবস্থায় রামকৃষ্ণ মঠও মিশনের এই মহতী উদ্যোগ ভক্তদের মধ্যে আলাদা সাড়া ফেলেছে।

Related Articles