ওপার বাংলা

বাংলাদেশের সংবিধান থেকে বাদ দিতে হবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দ, শুরু বিতর্ক

Debate begins over removal of word 'secularism' from Bangladesh constitution

Truth Of Bengal: বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। সম্প্রতি সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের খসড়া রিপোর্টে এ সুপারিশ তুলে ধরেছে। তারা জানিয়েছে, দেশের ৯০ শতাংশ নাগরিক মুসলিম হওয়ায় সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটির প্রয়োজন নেই। এই খসড়া ইতিমধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনুসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

একটি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক আলি রিয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতির মধ্যে তিনটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। শুধু গণতন্ত্রকে রেখে নতুন চারটি মূলনীতি যোগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত পাঁচটি মূলনীতি হলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র।

কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। গণভোটের মাধ্যমে এই সংশোধন অনুমোদনের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

ইতিহাসে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নিয়ে পরিবর্তন

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে প্রণীত সংবিধানে ‘জাতীয়তাবাদ’, ‘সমাজতন্ত্র’, ‘গণতন্ত্র’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ছিল মৌলিক নীতি। তবে জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এরশাদের আমলে এসব নীতিতে পরিবর্তন আসে। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে পুনঃস্থাপন করা হয়। কিন্তু এবার ফের একবার তা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে।

হিন্দু নির্যাতন ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত, ব্রিটেন ও আমেরিকা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

সমালোচনা ও বিতর্ক

ধর্মনিরপেক্ষতার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতির বাদ দেওয়া নিয়ে নানা মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই মনে করছেন, এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই খসড়া রিপোর্টের ভিত্তিতে কী সিদ্ধান্ত নেয় সরকার এবং দেশের জনগণ এতে কী প্রতিক্রিয়া জানায়।

Related Articles