১৪ নভেম্বর জওহরলাল নেহরুর জন্মদিনে শিশু দিবস পালন ও কিছু বিতর্কিত প্রসঙ্গ
Celebrating Children's Day on Jawaharlal Nehru's birthday on November 14 and some controversial issues

Truth of Bengal, কাজল ব্যানার্জী: পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু (১৪ই নভেম্বর, ১৮৮৯—২৭শে মে, ১৯৬৪) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পণ্ডিত এবং কূটনীতিবিদ নেহরু ছিলেন এক জন আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।লেখক হিসেবেও নেহরু ছিলেন বিশিষ্ট। ইংরাজিতে লেখা তাঁর তিনটি বিখ্যাত বই- ‘একটি আত্মজীবনী’ (অ্যান অটোবায়োগ্রাফি), ‘বিশ্ব ইতিহাসের কিছু চিত্র’ (গ্লিম্পসেস অফ ওয়ার্ল্ড হিস্টরি), এবং ‘ভারত আবিষ্কার’ (দ্য ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া) চিরায়ত সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছে। তাঁর পিতা মতিলাল নেহরু এক জন ধনী ব্রিটিশ ভারতের নামজাদা ব্যারিস্টার ও রাজনীতিবিদ ছিলেন।
মহাত্মা গান্ধীর তত্ত্বাবধানে নেহরু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। পরবর্তীকালে তাঁর মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী ও দৌহিত্র রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর শাসন কালে একটি ভারত-পাকিস্তান ও একটি ভারত-চিন যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ভারত-পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান নেহরু-লিয়াকত চুক্তি করেন। ২৭ মে, ১৯৬৪ পর্যন্ত তিনি ভারতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে রুচিবান পুরুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন জওহরলাল নেহরু। তাঁর পরিধেয় বহুল ব্যবহৃত প্রিয় কোটটি নেহরু কোট নামে পরিচিত।
নেহরু ফ্যাশনের সব চেয়ে চমকপ্রদ অধ্যায়টি হচ্ছে যে-কোনও রাজনৈতিক বা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে স্বতন্ত্রধর্মী এই কোটটি পরতেন তিনি। জওহরলাল নেহরু ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসতেন। ছোটদের মধ্যে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। চাচা নেহরু নামে তাঁর খ্যাতি ছিল। তাঁর চরিত্রের এই বিশেষ দিকটিকে মনে রেখে তাঁর জন্মদিনটি ভারতে শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। বর্তমানে অবশ্য নেহেরুর জন্মদিনে শিশুদিবস পালন করা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বিশেষ করে নেতাজীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর লেখা যে চিঠি প্রকাশিত হয়েছে, তা দেশের কোনো শিশুকেই খুশি করতে পারবে না। অনেকেই বড় হয়ে আক্ষেপ করছেন।
এই-রকম একজন বক্তির জন্মদিনে শৈশবে আনন্দ করেছেন, বুঝতে পেরে কষ্টও হয়, অনেক তরুণের। কেউ কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে শিশুদের বিকাশের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেন নি। বরং আমাদের প্রাক্তন রাস্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম সারাজীবন শিশুদের ভালোবাসতেন। সময় পেলেই বিভিন্ন স্কুলে চকোলেট, কেক, বিস্কুট নিয়ে ছুটে যেতেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগেও একই ছবি দেখেছে দেশ। কালাম বিশ্বাস করতেন, দেশের প্রকৃত উন্নতিসাধন করতে হলে, সর্বাগ্রে দেশের শিশুদের উন্নতি প্রয়োজন। তাই, দেশের নিরপেক্ষ-সচেতন নাগরিকদের অনেকেই চান, নেহেরু নয়, কালামের জন্মদিনে পালিত হোক শিশুদিবস। এমনকি আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী রাজ্যের সকল শিশুদের বিশেষত কন্যা সন্তানের উন্নতি জন্য যেটুকু চেষ্টা করেছেন, নেহেরুজী প্রধানমন্ত্রী হয়েও সেরকম নজির রাখতে পারেন নি।