Truth Of Bengal: বাংলাদেশের নতুন পাঠ্যবই থেকে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ধীরে ধীরে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঐতিহাসিক অবদান মুছে ফেলা হচ্ছে। এমনকি শেখ হাসিনার ছবিও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
১৯৭১ সালে যখন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছিল, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ভারত শুধু মানবিক আশ্রয়ই দেয়নি, বরং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে সামরিক সহায়তাও করেছিল। হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্য যুদ্ধ করেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যক্রমে সেই ঐতিহাসিক সত্যকে প্রায় অস্বীকার করা হয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০২৫ সালের জন্য নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। নতুন বইয়ে শেখ হাসিনার ছবি বাদ দেওয়া হয়েছে, যেখানে আগে শিক্ষার্থীদের জন্য তাঁর বার্তা থাকত। পাঠ্যবইয়ের শেষ অংশে ‘জুলাই আন্দোলন’-এর ছবি যুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর ঐতিহাসিক ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় মুজিব-ইন্দিরার ঐতিহাসিক যৌথ ভাষণ এবং ১৭ মার্চ ঢাকায় ইন্দিরাকে স্বাগত জানানোর ছবি নতুন পাঠ্যবইয়ে রাখা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা কমিয়ে আনা হয়েছে।
অপরদিকে, তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে কেবল শেখ মুজিবের নাম নয়, আরও তিনজনের নাম যুক্ত করা হয়েছে—এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানি এবং হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দি। এই পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে এবং ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি ইতিহাস বিকৃতির একটি প্রচেষ্টা, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্রকে পরিবর্তন করা হচ্ছে।
শিক্ষা বোর্ডের দাবি, নতুন পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দেশের ইতিহাসকে নতুনভাবে জানবে। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ইতিহাস কি নতুন করে লেখা সম্ভব? মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব মুছে ফেলে কি নতুন প্রজন্মকে প্রকৃত ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে? বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কীভাবে এই পরিবর্তনগুলোর প্রভাব অনুভব করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ইতিহাসবিদরা মনে করছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণ না করা হলে ভবিষ্যতে এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে।