ভাটুপাড়ায় ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখল যশোমতী পূজো
Yashomati Puja preserves tradition in Bhatupara

Truth Of Bengal: মাধব দেবনাথ,নদিয়া: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ঠিক জিরো পয়েন্টে, শতাব্দীপ্রাচীন এক ভক্তিময় ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আজও চলমান এক অসাধারণ ধর্মীয় ও সামাজিক মিলনের উৎসব—যশোমতী মায়ের পূজা। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে নদিয়ার তেহট্ট থানার ভাটুপাড়া গ্রামে, ১২৬ নম্বর আন্তর্জাতিক পিলার সংলগ্ন বেলগাছের নিচে। স্থানটি পড়ে কাঁটাতারের বেড়ার একদম কাছে, বিএসএফের কড়া নজরদারির মধ্যেও এই পুজোর মাহাত্ম্য কমেনি, বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে উঠেছে এপার বাংলা ও ওপার বাংলার মানুষের একাত্মতার প্রতীক।
এই পূজার বিশেষত্ব হল, এখানে কোনও দেবীমূর্তি নেই—পুজো হয় একটি ঘটের মাধ্যমে। এই ঘটকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক নিবিড় আস্থা ও আন্তরিকতার জগত। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, যশোমতী মা জাগ্রত দেবী, এবং এই পূজা মানেই অশেষ আশীর্বাদ। শুক্লপক্ষের শনিবার হয় অধিবাস, আর মঙ্গলবার মূল পুজো। এই সময় গ্রামজুড়ে বিরাজ করে এক ধরনের পবিত্রতা—কেউ কাজ করেন না, রান্নাঘরে আগুন জ্বলে না, পুরো গ্রাম নিবেদিত থাকে মাতৃ আরাধনায়।
প্রাচীন জনশ্রুতি অনুসারে, একসময় যখন দেশে খরার প্রকোপ দেখা দিত, তখন বৃষ্টির আশায় শুরু হয়েছিল যশোমতী মায়ের পুজো। বিশ্বাস ছিল, পুজো হলেই নামবে বৃষ্টি—এবং বাস্তবেও নাকি ঠিক তেমনটাই ঘটত। এই বিশ্বাস আজও অটুট। সন্তানপ্রাপ্তির আশায় অনেক নারী মানত করেন যশোমতী মায়ের কাছে, এবং মনস্কামনা পূর্ণ হলে গোপাল ঠাকুর সহযোগে বিশেষ পুজো দেন।
এপার বাংলা ছাড়াও ওপার বাংলার ভক্তরাও এই পুজোতে অংশ নেন, যদিও বর্তমানে আন্তর্জাতিক সীমানার কারণে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে না পারলেও মানসিকভাবে তাঁরা যুক্ত থাকেন। সীমান্তের দুই পাশে থাকা মানুষের আত্মিক বন্ধন এই পূজাকে করেছে এক অনন্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন।
কাঁটাতারের বেড়া, রাজনৈতিক সীমারেখা বা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যস্ততা—কোনো কিছুই এই আন্তরিক ঐতিহ্যকে ম্লান করতে পারেনি। এই পূজা যেন প্রতিবছর মনে করিয়ে দেয়, মানবিকতা, ভক্তি ও সম্প্রীতির কাছে সব সীমান্তই তুচ্ছ।