রাজ্যের খবর
Trending

ফ্রান্সে থাকা কৃত্তিবাসের রামায়ণ কবে ফিরবে দেশে? রাম নামের মাঝেই প্রশ্ন বৈষ্ণব তীর্থের রামভক্তদের…

When will Ramayana of Krittivas return to the country? In the name of Ram, the question of Ram devotees of Vaishnav Tirtha.

The Truth Of Bengal: রাম ভজনার ধুমধাম দেখা যাচ্ছে দেশজুড়ে। আর সেই রাম নামের মাঝেই প্রশ্ন উঠল কৃত্তিবাসের রামায়ণ কবে ফিরবে দেশে ? বর্তমানে ফ্রান্সেই রয়েছে কৃত্তিবাসের অমর কীর্তি। স্বাধীনতালাভের এতদিন পড়েও কেন কীত্তিবাসের রামায়ণ দেশে ফিরে এল না,  সেই প্রশ্ন তুলছেন বৈষ্ণব তীর্থের রামভক্তরা।

কৃত্তিবাস ওঝা (আনুমানিক ১৩৮১ খ্রিস্টাব্দ – আনুমানিক ১৪৬১ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান কবি। তিনি পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত ফুলিয়া গ্রামে বাস করতেন। গৌড়েশ্বর গনেশনারায়ণ ভাদুড়ির পৃষ্ঠপোষণায় তিনি বাল্মীকি রামায়ণের সহজবোধ্য বাংলা পদ্যানুবাদ করেছিলেন। বাঙালির আবেগ, অনুভূতি ও রুচির দিক লক্ষ্য রেখে সর্বজনবোধ্য পদ্যে মূল সংস্কৃত রামায়ণের ভাবানুবাদ করায় কৃত্তিবাসী রামায়ণের ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ ঘটে। কিন্তু সেই সময়ে তিনি লেখেন তালপাতার ওপর। সেই সময়ে তা ছাড়া তো উপায় ছিল না।

কিন্তু ভারত স্বাধীনতা লাভের অনেক আগেই সেই গর্বের, আবেগের কৃত্তিবাস ওঝার হাতে লেখা কৃত্তিবাসী রামায়ণ চলে গিয়েছিল ফরাসি ঔপনিবেশিকদের হাতে। ১৭৯৪ সালে ফ্রান্সের জাতীয় গ্রন্থাগার বিবলিওথেক ন্যাশনালে এই পাণ্ডুলিপিটি ক্যাটালগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে কলকাতা জাতীয় গ্রন্থাগারের সাহায্যে কৃত্তিবাসী স্মৃতি কমিটির উদ্যোগে ফ্রান্সের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। তবে মূল পান্ডুলিপিটি পাওয়া যায়নি। বর্তমানে ফুলিয়ায় বয়রার সংগ্রহশালায় কবি কৃত্তিবাস ওঝার হাতে রচিত রামায়ণের মূল পাণ্ডুলিপির মাইক্রোফিল্ম ও সেই পাণ্ডুলিপির ফোটোকপি সংরক্ষিত রয়েছে। প্রশ্ন এখানে? কেন স্বাধীনতা লাভের ৭৬ বছর পরেও কেন্দ্রের কোনও সরকার আজও পর্যন্ত তৎপর হয়নি বাঙালির শিকড় কৃত্তিবাসের স্বহস্তে রচিত কৃত্তিবাসী রামায়ণ দেশে ফিরিয়ে আনার।

ফুলিয়ার প্রবীণ নাগরিক ভবানীকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘এখানকার একজন মানুষ বাঙালির মতো করে রামায়ণ তৈরি করলেন। তার জন্য তাঁকে কম পরিশ্রম করতে হয়নি। সংস্কৃত থেকে বাংলায় এবং তা বাঙালির সমস্ত ঐতিহ্য বজায় রেখে করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। তা কেন বিদেশে থাকবে? আমরা চাই, সেটি দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।’’

কৃত্তিবাস সংগ্রহশালার প্রাক্তন গ্রন্থাগারিক কেশব লাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা জাতীয় গ্রন্থাগারের সাহায্য ফ্রান্সে যোগাযোগ করে কৃত্তিবাসের লেখার মাইক্রোফিল্ম পেয়েছিলাম। তারপর তার প্রিন্টও বের করা হয়। সে সব সংরক্ষিত রয়েছে। তার পাঠোদ্ধারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়। তার জন্য অর্থও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই পাঠোদ্ধারও আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। আমরা চাই দ্রুত মূল লেখা নিয়ে আসা হোক। রাখা হোক ফুলিয়ার গ্রন্থাগারে। সঙ্গে পাঠোদ্ধারের কাজও সমাপ্ত হোক।’’

কৃত্তিবাসের স্মরণে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে ফুলিয়ার বয়রায় একটি গ্রন্থাগার তথা কমিউনিটি হল তৈরি হয়। ১৯৬৭ সালে গ্রন্থাগারটি খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। সেখানে ১৪ টি ভাষায় রামায়ণের অনুবাদ রয়েছে। আছে কৃত্তিবাসের স্বহস্তে রচিত রামায়ণের পান্ডুলিপির ফোটোকপি। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ, বাংলায় রামায়ণের রচয়িতা কৃত্তিবাস ওঝার স্মৃতিতে তৈরি সেই লাইব্রেরিও বর্তমানে অবহেলিত। লাইব্রেরীর আশেপাশে নোংরা আবর্জনায় ভর্তি। অবহেলার চিহ্ন চারিদিকে। সপ্তাহে মাত্র দু’দিন, শুক্র ও শনিবার একজন গ্রন্থাগারিক খোলা রাখেন লাইব্রেরী ও সংগ্রহশালা। আরও একজন সপ্তাহে দু’দিন আসেন। কিন্তু  বাইরে থেকে যারা আসেন তাদের পক্ষে এতকিছু জেনে আসা সম্ভব নয়। ফলে অনেককেই না দেখে ফিরে যেতে হয়। থেকে যায় আক্ষেপ। এমনকী,  কৃত্তিবাস নামাঙ্কিত গ্রন্থাগারটিতে রক্ষিত অমূল্য সব বই পড়তে গিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয় গবেষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি রাজ্য সরকারও উদাসীন বাঙালির এই আবেগের স্থানটি নিয়ে? ফুলিয়াবাসীর দাবি, রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে উচছ্বাস থাক। আবেগ থাক। কিন্তু রামায়ণ নিয়েও আবেগ থাক। আবেগ থাক কৃত্তিবাস ওঝা নিয়েও। ফ্রান্স থেকে ফিরিয়ে আনা হোক কৃত্তিবাসী রামায়নের মূল পান্ডুলিপি।

Free Access

Related Articles