“এটি আমাদের আবেগের উৎস”, ১২ বছর পর গাজন শুরু হওয়ায় আনন্দিত গ্রামবাসী

Truth Of Bengal: কৈলাস বিশ্বাস, বাঁকুড়া: বাঁকুড়া জেলার কোতুলপুর ব্লকের শিরোমনিপুর গ্রামে দীর্ঘ ১২ বছর পর আবারও ফিরে এলো বহু প্রতীক্ষিত ও ঐতিহ্যবাহী বাবা শান্তিনাথ জিউয়ের গাজন উৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে গাজনের প্রচারপর্ব — গ্রামে গ্রামে চলছে সং যাত্রা।

প্রাচীনকাল থেকেই এই গাজন উৎসবের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এই সং যাত্রা। যখন সোশ্যাল মিডিয়া বা ডিজিটাল প্রচার ছিল না, তখন গাজনের বার্তা পৌঁছে দিতে গাজন কমিটি পথনাট্যের মাধ্যমে গ্রামবাসীর মাঝে যাত্রা করত। সেই প্রথা ও সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রেখেই আজও শুরু হয়েছে গাজনের আগমনী বার্তা নিয়ে এই অভিনব প্রচার।

এবারের সং যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন শিরোমনিপুর দক্ষিণপাড়ার পুরুষ, মহিলা ও শিশুরা। সং যাত্রার মূল প্রতিপাদ্য — সমাজ সচেতনতামূলক বার্তা। এবারের নাটকের নাম “যেমন কুকুর তেমন মুগুর”, যা সমাজের অসৎ ও অবক্ষয়গ্রস্ত চরিত্রগুলির বিরুদ্ধে একটি তীব্র ব্যঙ্গ। নাটকের মাধ্যমে মানুষকে যেমন বিনোদন দেওয়া হচ্ছে, তেমনই সচেতন করার প্রচেষ্টাও চলছে।

উদ্যোক্তাদের মতে, আগের মতো পুরো একমাস নয়, তবে এবারে ১০ দিনব্যাপী সং যাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। কোতুলপুর ব্লকের মোট ১১টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই নাট্যযাত্রা পরিবেশিত হবে।

গাজন উৎসবের সময়সূচি ৮ই জুন: গামির গাছ কাটা, ৯ই জুন: রাত গাজন, ১০ই জুন: দিন গাজন এবং ১১ই জুন: চড়ক উৎসব ও সমাপ্তি। এই চার দিনের গাজন উৎসব শেষ হওয়ার পর ফের শুরু হবে ১২ বছরের অপেক্ষা। তাই এই বছর গাজনের মাহাত্ম্য এলাকাবাসীর কাছে আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা প্রবল উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন এবং বলছেন, “এই উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আবেগের উৎসব।” গাজনের বার্তা পৌঁছে দিতে যাত্রার ঢাক, কাঁসর, একতারা আর প্রাণবন্ত অভিনয় যেন ফিরিয়ে আনছে অতীতের সোনালি দিন।