“পায়ে ধরে বলছি, চিকিৎসা করুন”, বেহালার অনুষ্ঠান থেকে ডাক্তারদের কাছে অনুরোধ মুখ্যমন্ত্রীর
The Chief Minister requested treatment from the doctors

Truth Of Bengal : আর জি কর মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খুনের ঘটনার প্রতিবাদে তোলপাড় রাজ্য থেকে গোটা দেশ। বুধবার রাতে এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামতে চলেছেন মহিলারা। মহিলাদের এই প্রতিবাদে রাজনীতির রং না লাগানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আরজি কর হাসপাতালে নিহত চিকিৎসকের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রাক-স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেহালায় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি।
বেহালার অনুষ্ঠান থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে মমতা জানান, ‘‘মধ্যরাতে আমাদের স্বাধীনতা এসেছিল। যত দিন ধরে আমরা রাজনীতি করি, তত দিন এভাবেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ করি, শ্রদ্ধা জানাই। যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য, তাঁদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’’
বেহালার অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘চিকিৎসকদের আমি আবেদন জানাচ্ছি সাধারণ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে। তিন জন ইতিমধ্যে বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন। চিকিৎসা দিতে কিন্তু আপনারা অঙ্গীকারবদ্ধ। পাঁচ দিন হয়ে গেল। পায়ে ধরে বলছি, চিকিৎসা করুন। তার জন্য আপনারা নিযুক্ত। অনেক আন্দোলন করেছেন। কেউ আটকায়নি। এবার কাজে নামুন, এটা আমার আবেদন। আমার স্বাস্থ্য সচিব এই আবেদন জানিয়েছেন। আজ আমিও আবেদন করছি। সিনিয়র ডাক্তাররা পরিষেবা দিচ্ছেন, তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’
তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের আবেদন জানাচ্ছি, সাধারণ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে। তিন জন বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন। চিকিৎসা দিতে আপনারা অঙ্গীকারবদ্ধ। পাঁচ দিন হয়ে গেল। পায়ে ধরে বলছি, তাতে যদি চরণযুগল ভাল থাকে। চিকিৎসা করুন। তার জন্য আপনারা নিযুক্ত। আন্দোলন করেছেন। কেউ আটকায়নি। এবার কাজে নামুন, আবেদন। আমার সচিব আবেদন জানিয়েছেন। আজ আমি আবেদন করছি। সিনিয়র ডাক্তাররা পরিষেবা দিচ্ছেন, আমি কৃতজ্ঞ।’’
আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে অগ্নিগর্ভ গোটা দেশ। এমতাবস্থায়, এক কর্মসূচি ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সমস্ত রকমের চক্রান্তের বিরুদ্ধে পথে নামতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘১৭ তারিখ থেকে সারা বাংলায়, সব ব্লক, সব ওয়ার্ডে ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত বাম-রামের চক্রান্তের বিরুদ্ধে মিছিল এবং আন্দোলন হবে। ১৮ তারিখ ধর্না হবে ব্লকে ব্লকে। ১৯ তারিখে রাখি। ২০ তারিখে আবার পথে নামব আমরা। সে দিনের কর্মসূচি পরে জানিয়ে দেব।’’
স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে তাতে লেখেন, ‘‘প্রতি বছরের মতো এ বছরও আমরা ‘মধ্যরাতের স্বাধীনতা’ উদ্যাপন করব। মধ্যরাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।’’ বুধবার সন্ধ্যায় প্রাক-স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে এই মর্মান্তিক ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের আদেশের পর এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। এমতাবস্থায়, বুধবার প্রাক-স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার রাষ্ট্র পরিচালিত আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বক্ষ বিভাগের সেমিনার হলের ভিতরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন সহ স্নাতকোত্তর শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এরপর সেই দেহ ময়নাতদন্তের করতে দেওয়া হলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল। তার পর থেকে সুবিচার এবং নিরাপত্তার দাবিতে পথে নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চলছে টানা কর্মবিরতি। তবে এবার আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি আন্দোলনরত চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আর কোন সাধারন মানুষ যাতে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।
আরজি কর-কাণ্ডে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে মনে করিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও নির্দোষ যেন শাস্তি না পায়। ধনঞ্জয়ের ঘটনায় যা হয়েছিল, তা যেন আর না হয়। মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া হয়েছিল। তিনি এখন বিলাপ করেন। মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তাঁকে মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।’’
মমতা বলেন, ‘‘রবিবার পর্যন্ত আমি সময় দিয়েছিলাম পুলিশকে। কারণ তদন্তে ন্যূনতম সময় লাগে। সেটা দেওয়া গেল না। তার আগেই হাই কোর্টে গেলেন। সব ভাল যার শেষ ভাল। কারণ, পুলিশ না করতে পারলে আমাকেই সিবিআইকে তদন্তভার দিতে হত। সমাজমাধ্যমে একটা অংশ মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে।’’