খড়্গপুর আইআইটি-তে পড়ুয়াদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ খোঁজতে গঠন করা হল বিশেষ দল
Special team formed to probe mysterious deaths of students at IIT Kharagpur

Truth of Bengal: শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খড়্গপুর আইআইটি, যেখান থেকে দেশের ও বিশ্বের বহু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী গড়ে ওঠে, সেই প্রতিষ্ঠানেই বিগত কয়েক বছরে একের পর এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুতে গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই তিনজন পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে। গত তিন বছরে এই সংখ্যা ছয়জনেরও বেশি। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রবল চাপে পড়ে অবশেষে একটি উচ্চপর্যায়ের বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করল আইআইটি খড়্গপুর কর্তৃপক্ষ।
বিশেষ করে হস্টেলের মধ্যেই বারবার ঘটেছে এই মৃত্যুর ঘটনা। মারা গেছেন ফাইজান আহমেদ, কে. কিরণ চন্দ্রা, দেবীকা পিল্লাই, সাওন মালিক, অনিকেত ওয়ালকার এবং সম্প্রতি মহম্মদ আসিফ কামার। এর মধ্যে ১২ জানুয়ারি থেকে ৪ মে— মাত্র চার মাসে তিনজনের মৃত্যু এই সমস্যার ভয়াবহতাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
শুধু পড়ুয়ারা নয়, তাঁদের পরিবার, সহপাঠী ও গোটা দেশ জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মনোরোগ চিকিৎসা, কাউন্সেলিং লাউঞ্জ, আধুনিক মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করেও পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেনি বলে মত শিক্ষা মহলের একাংশের। ফলে বাধ্য হয়ে গভীরতর তদন্তে নামল আইআইটি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার রাতে এক প্রেস বিবৃতিতে আইআইটি খড়্গপুর জানিয়েছে, তৈরি করা হয়েছে একটি দশ সদস্যের বিশেষ কমিটি। এই কমিটিতে থাকবেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ পুলিশ আধিকারিক, আইনজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও আইআইটির প্রাক্তনীদের প্রতিনিধি। তাঁদের কাজ হবে ক্যাম্পাসে পরপর ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার গভীরে গিয়ে কারণ অনুসন্ধান করা। শুধু পুলিশি তদন্ত নয়, ছাত্রদের মানসিক চাপ, পরিবেশ, প্রশাসনিক গাফিলতি — সবদিক বিচার করে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে তাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিটি ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী ও নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলবে। তাঁদের বক্তব্যের ভিত্তিতে গঠন করা হবে সুপারিশ। লক্ষ্য একটাই — ভবিষ্যতে যেন আর কোনও পড়ুয়াকে অকালে প্রাণ হারাতে না হয়।
আইআইটি খড়্গপুরের এই উদ্যোগ দেশের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও এক শিক্ষা হয়ে উঠতে পারে — পড়ুয়ার মৃত্যু শুধুই পরিসংখ্যান নয়, তার পেছনে থাকে গভীর সামাজিক ও মানসিক সংকট, যা বুঝে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।