একুশের সমাবেশের দিনে বাতিল বহু লোকাল ট্রেন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তৃণমূলের
Many local trains were canceled on the day of Trinamool's 10th rally, alleging political conspiracy

The Truth Of Bengal: ধর্মতলায় একুশের সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। মঞ্চের কাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে। চলছে শেষ তুলির টান। অন্যান্য বারের মতই মূলসভা মঞ্চের পাশাপাশি থাকছে আরও দুটি মঞ্চ। একটি মঞ্চ থাকবে শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য। যেখানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সমাবেশ ঘিরে শুধু কলকাতা নয় রাজ্যের সর্বত্রই তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা প্রচার শুরু করেছেন। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি জনস্রোত বইবে এবারের শহীদ সমাবেশে।
লোকসভা নির্বাচনে বিরাট সাফল্যের পর এই সমাবেশ। স্বাভাবিকভাবেই দলের কর্মী সমর্থকরা উন্মাদনায় ফুটছেন। তার বহিঃপ্রকাশ দেখা যাবে কলকাতার রাজপথে। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা লোকাল ট্রেনে করে সমাবেশে যোগ দিতে আসেন। শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশনে নেমে হাজার হাজার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সভায় যোগ দেন। এই চেনা ছবি প্রতিবছর একুশের সমাবেশের দিনে দেখা যায়। এবারও তার ব্যাতিক্রম ঘটবে না সেটাই প্রত্যাশা তৃণমূল নেতৃত্বের। কিন্তু হঠাৎ করেই রেল কর্তৃপক্ষের একটি বিজ্ঞপ্তি ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ২০ ও ২১ জুলাই একাধিক লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।রেল সূত্রে খবর, ২০ ও ২১ জুলাই শিয়ালদহ সেকশনে বাতিল থাকবে একাধিক লোকাল ট্রেন। আগামী শনি ও রবিবার লাইন মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য এইসব লোকাল ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে বলে রেল সূত্রে জানানো হয়েছে। হঠাৎ এই সপ্তাহে কেন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ট্রেন বাতিলের সিদ্ধান্ত? আগের সপ্তাহ বা পরের সপ্তাহে নয় কেন? প্রশ্ন তৃণমূল কংগ্রেসের। যেখানে একুশ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের মেগা সমাবেশ রয়েছে কলকাতায়। শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে হাজার হাজার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থক ওইদিন একুশের সমাবেশে যোগ দেন। বিশেষ করে নদীয়া মুর্শিদাবাদ উত্তর চব্বিশ পরগনার হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী সমর্থক লোকাল ট্রেনে করে সভায় যোগ দিতে আসেন। যাতে করে তারা সভায় যেতে না পারেন তার জন্যই কী ২০ ও ২১ তারিখকে বেছে নেওয়া হয়েছে? ঠিক এই সপ্তাহকেই বেছে নেওয়া কেন রেলের মেরামতির কাজের জন্য ট্রেন বাতিলের সিদ্ধান্ত? এর পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ ও ২১ জুলাই একাধিক লোকাল ট্রেন বাতিলের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রাপথ বদল করা হয়েছে। কয়েকটি ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। শুক্রবার পূর্ব রেল জানিয়েছে, শনিবার আপ–ডাউন মিলিয়ে এক জোড়া নৈহাটি–ব্যান্ডেল, এক জোড়া শিয়ালদহ–শান্তিপুর, এক জোড়া শিয়ালদহ–রানাঘাট, এক জোড়া কল্যাণী সীমান্ত–নৈহাটি লোকাল বাতিল করা হয়েছে।আর রবিবার বাতিল করা হয়েছে আপ–ডাউন মিলিয়ে চার জোড়া নৈহাটি–ব্যান্ডেল, দু’জোড়া শিয়ালদহ–কৃষ্ণনগর, দু’জোড়া শিয়ালদহ–শান্তিপুর, এক জোড়া শিয়ালদহ–রানাঘাট লোকাল। রবিবার বাতিল থাকবে দু’জোড়া শিয়ালদহ–কল্যাণী সীমান্ত লোকাল, এক জোড়া রানাঘাট–নৈহাটি লোকাল এবং একটি নৈহাটি–কল্যাণী সীমান্ত লোকাল। এর পাশাপাশি দূরপাল্লার ট্রেনের সূচি এবং যাত্রাপথেও কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। রবিবার বালিয়া–শিয়ালদহ এক্সপ্রেস, যোগবাণী–কলকাতা এক্সপ্রেস, গোরক্ষপুর–কলকাতা পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেস, মালদা টাউন–শিয়ালদহ গৌড় এক্সপ্রেস, জয়নগর–শিয়ালদহ গঙ্গাসাগর এক্সপ্রেস নৈহাটির পরিবর্তে ডানকুনি হয়ে যাবে। তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস–সহ একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন নির্ধারিত সময়ের পরে শিয়ালদহ এবং অন্য স্টেশন থেকে ছাড়বে।তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার রেলের এই সিদ্ধান্তকে ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন। এই তৃণমূল নেতা বলেন, লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র সরকার। একশ দিনের কাজের টাকা থেকে আবাস যোজনা টাকা থেকে বঞ্চনা করা হয়েছে বাংলাকে। বিজেপির এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছেন। এবার ট্রেন বন্ধ করে একুশে জুলাই এর সমাবেশে লোক আসা বন্ধ করতে চাইছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ অন্য পরিবহন ব্যবহার করে সমাবেশে যোগ দেবেন। বিজেপির এই ষড়যন্ত্র রুখে দেবেন বাংলার আমজনতা।উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেসের দিল্লি অভিযানের সময়ও তৃণমূল কংগ্রেসের বুকিং করা ট্রেন বাতিল করা হয়েছিল। বাংলা থেকে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা বাসে করে দিল্লিতে পৌঁছেছিলেন আন্দোলনে যোগ দিতে। এবার লোকাল ট্রেন বাতিল করা হল সমাবেশের দিন।