কলকাতার মতোই উত্তরপাড়াতেও গঙ্গার ভাঙন ভয়াবহ আকার নিচ্ছে
Like Kolkata, Ganga erosion is taking a terrible toll in Uttarpara too

Truth Of Bengal: গঙ্গার ভয়াবহ ভাঙনের জেরে ক্ষতির মুখে উত্তরপাড়ার একাংশ। ভাঙন বাড়তে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে হুগলির এই ঐতিহ্যবাহী শহর। যেভাবে এখন জিটিরোড থেকে ৫০০ মিটার দূরে বইছে গঙ্গা তাতে অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে এই প্রাচীন শহর। কলকাতার নিমতলা ঘাটের মতোই উত্তরপাড়ার প্রান্তিক এলাকা কী গঙ্গার পেটে চলে যাবে, উঠছে প্রশ্ন।
কলকাতার মতোই উত্তরপাড়াও বিপদের কিনারায় দাঁড়িয়েছে। আগ্রাসী গঙ্গা গিলে খাচ্ছে হুগলির জনপদের একাংশকে। কয়েক মাস ধরে জিটি রোড লাগোয়া কোতরং এলাকার বিরাট অংশ জুড়ে গঙ্গার পাড় ভাঙছে। ওই অঞ্চলের একটি আবাসনের পাঁচিল ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে। কোতরং আদর্শ বিদ্যালয়ের পিছনেও গঙ্গার পাড়ের বড় অংশ জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভদ্রকালীর শিবতলা শ্মশান লাগোয়া এলাকাও ভাঙনপ্রবণ।
রাজ্য সরকারের সেচ দফতর থেকে পাড় বাঁধানোর কাজ করলেও কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতায় ভাঙনরোধে কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা হচ্ছে না। পরিস্থিতি এমনই জায়গায় দাঁড়িয়েছে, বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কায় কোতরং এলাকার একটি আবাসন কমিটির পক্ষ থেকে রাজ্যের সেচ দফতরকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে। সেচদফতর সাধ্যমতো ভাঙন রোখার কাজ করছে। কিন্তু তাতেও রাক্ষুসে গঙ্গা এগিয়ে আসায় অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে ঐতিহাসিক শহর ।বর্তমানে গঙ্গা থেকে ৫০০মিটারের মধ্যে রয়েছে জিটিরোড। তাই দূরপাল্লার যানচলাচল নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গঙ্গার তীরে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরি। শ্রী রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়ের পদধূলি পড়েছিল এই লাইব্রেরিতে। গঙ্গার তীরে লাইব্রেরি নির্মাণ করেছিলেন রাজা জয় কৃষ্ণ মুখার্জী। উত্তরপাড়ার বুকেই রয়েছে রাজা পেয়ারি মোহন মুখার্জি, ভাওয়াল রাজবংশের অসংখ্য স্থাপত্য। কিন্তু দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে গঙ্গা ধীরে ধীরে গ্রাস করেছে উত্তরপাড়া গঙ্গার তীরবর্তী জি টি রোডের পূর্ব পাড়।
সম্প্রতি এই ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। এরফলে একদিকে যেমন আতঙ্কিত গঙ্গার তীরবর্তী বসবাসকারী সাধারণ মানুষ পাশাপাশি প্রশ্নের মুখে অতীত স্থাপত্য গুলি। গঙ্গা যেহেতু কেন্দ্রীয় সম্পত্তি, তাই তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় জল সম্পদ উন্নয়ন দফতরের। এছাড়াও কেন্দ্রীয় সম্পত্তি হওয়ায় গঙ্গার তীরে কোনরকম পাকা নির্মাণ করতে গেলে, কেন্দ্রীয় জল সম্পদ উন্নয়ন দফতর এবং পোর্ট ট্রাস্টের অনুমোদনও প্রয়োজন। রাজ্য ভাঙন রোখার চেষ্টা করলেও স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। পাকা কংক্রিট ঢালাই করে পাড় বাধাতে গেলে খরচা কয়েক হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একেবারে উদাসীন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকার গঙ্গা ভাঙন রোধে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। নচেৎ আগামী দিন ঐতিহাসিক এই শহরের একাংশ মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।