রাজ্যের খবরসম্পাদকীয়

চাকদহে রেলের একমুখী আন্ডারপাসকে দ্বিমুখী আন্ডারপাসে পরিবর্তন করা জরুরি

It is necessary to change the one way railway underpass at Chakdaha to two way underpass

Bangla Jago Desk, কাজল ব্যানার্জিঃ নদিয়ার অন্যতম একটিপ্রাচীন শহর চাকদহ। যে শহরের প্রতিটি আনাচে কানাচে রয়েছে বহু ঐতিহাসিক স্মৃতির নিদর্শন। রয়েছে ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরসভা। প্রাচীন ঐতিহ্যের পটভূমিতে লালিত পালিত এই শহর যেন এক নস্টালজিয়া। শিক্ষাদীক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে ক্রীড়াক্ষেত্র– সবেতেই এই শহরের সুনাম আজ বিশ্ববন্দিত। তাই স্বাভাবিক কারণেই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা আজ এই শহরের অন্যতম চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবার লোকসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শহরের যানজট। শহরের স্টেশন সংলগ্ন ৫০নম্বররেলগেটের যানজটের কথা কারেওরই অজানা নয়। তাই সঙ্গত কারণেই বেশ কয়েক বছর আগে পৌর-কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে মূল শহরের যানজটকমাতে মহতী প্রয়াস হিসাবে পালপাড়া ও চাকদহ স্টেশনের মধ্যস্থলে আজগুবিতলা এলাকায় রেলের আন্ডারপাসকে ব্যবহার করে মূলরাস্তা (সুখসাগর রোড) থেকে বেশ কিছু যানবাহনকে বাইপাস করানোর ব্যবস্থা করা হয়।

সেই থেকেই শহরে আগত যানবাহনের একটি বড় অংশ মূল শহরে প্রবেশের পূর্বেই এই আন্ডারপাসের মাধ্যমে পৃথক ও অপেক্ষাকৃত কম ব্যস্ত পথের সন্ধান পেয়ে যায়। এই পরিকল্পনার ফলে শহরের যানজট এড়িয়ে প্রতিনিয়ত মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা প্রদান অনেক সহজ হয়েছে। ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত মানুষ সঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে সক্ষম হচ্ছেন কোনও প্রকার বিড়ম্বনা ছাড়াই। জাতীয় সড়কের উদ্দেশে ধাবমান যানবাহনগুলি এই বাইপাসের সুযোগ নিয়েই পাঁচপোতা মোড়ে উঠে যাওয়ার ফলে, চাকদহ বাসস্ট্যান্ড এবং চাকদহ চৌমাথার মোড় অনেকটাই ভারমুক্ত হতে পেরেছে।

ফলে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়ে যে, চাকদহের যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আজগুবিতলা আন্ডারপাসটি বর্তমানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আবার সম্প্রতি পাঁচপোতা মোড়ে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ চালু হওয়ায় আগামী দিনে রেলগেট এড়িয়ে শহরের মুমূর্ষু রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে ওইহাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই আন্ডারপাসটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে।

এছাড়া আজগুবিতলার ঐতিহাসিক গুরুত্বও কম নয়। সুপ্রাচীন কাজী বাড়িও এখানেই অবস্থিত। কাজী বাড়ির ভগ্নাবশেষ যেকোনও ইতিহাসপ্রেমীর কাছে যথেষ্ট আকর্ষণীয় বিষয়। সেইসঙ্গে এই এলাকাটির ধর্মীয় গুরুত্বও অপরিসীম। বছরের বিশেষ বিশেষ তিথিতে বহু বহিরাগত মানুষ এই শ্রীচৈতন্যদেবের পদধূলিধন্য এই আজগুবিতলা মন্দিরে পুজো দিতে আসেন এবং প্রচুর জনসমাগম হয়ে থাকে। ভারতবর্ষের মধ্যে এই আজগুবিতলা স্থানটি ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন এক মিলনক্ষেত্র, যাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলা চলে।

একই স্থানে যেমন রয়েছে হিন্দু মন্দির ও প্রার্থনার স্থান, পাশাপাশি রয়েছে পিরবাবার দরগা। যেখানে মাজারে চাদর চড়ানোরও সুব্যবস্থা রয়েছে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে কাতারে কাতারে মানুষে এসে একই সঙ্গে পুজো দেন, গাছে ঢিল বাঁধেন এবং মুসলিম রীতি মেনে চাদর চড়িয়ে নিজ নিজ প্রার্থনা নিবেদন করে থাকেন। পৌর উদ্যোগে এই ধর্মাচরণেরও যথেষ্ট সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এবং এসবেরই ফলশ্রুতিতে আজগুবিতলাও বর্তমানে কম জনবহুল নয়। তাই এলাকার জনসাধারণ পৌরকর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এই আন্ডারপাসের কার্যকরী পরিকল্পনাকে সর্বদাই কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করে থাকেন।

কিন্তু শহরের এই জনবিস্ফোরণ উদ্ভূত ক্রমবর্ধমান যানজটের ফলে আজগুবিতলার সংকীর্ণ আন্ডারপাসটি বর্তমানে আর পর্যাপ্ত নয়। নিকাশি ব্যবস্থাও সঙ্কটজনক। অল্প বর্যাতেই জল জমে যায়।একটিমাত্র সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে উভয় দিকের যানবাহন চলাচলের ফলে প্রতিনিয়ত ভুলবোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে চালকদের মধ্যে। এবং তারই সূত্রধরে তৈরি হচ্ছে বিরক্তিকর যানজট।

উভয়দিক থেকে আসা যানবাহনের মধ্যে মুখোমুখি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে দিনের ব্যস্তসময়ে। যা থেকে মুক্ত হতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। দুর্ঘটনার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এমত পরিস্থিতিতে একজন প্রকৌশলী এবং প্রাক্তন পৌরকর্মী হিসাবে আমার প্রস্তাব রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসুন পৌরপ্রশাসকরা। রেল কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুরূপ আরও একটি টানেল তৈরি করিয়ে অভিমুখ অনুসারে যানবাহনগুলিকে দুটি ভিন্ন সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে পৃথকভাবে বিভাজিত করার ব্যবস্থা করাহোক। এই ব্যবস্থার পাশাপাশি পাম্পিং স্টেশন তৈরি করে বর্ষার সময় জল নির্গমণের ব্যবস্থা করতে পারলে এই আন্ডারপাসটি আরও কার্যকরী হয়ে উঠবে এবং মূলশহরের যানজট যে আরও কিছুটা কমবে সে কথা বলাই বাহুল্য।

Related Articles