মৃত মালগাড়ির চালকের বিরুদ্ধে এফআইআর, দোষ চাপিয়ে দায় এড়াচ্ছে রেল?
FIR against the driver of the dead goods train, Railways is avoiding responsibility by blaming

The Truth of Bengal: রাঙাপানি স্টেশনের কাছে মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্তে নামতে চায় রেল প্রশাসন। ইতিমধ্যে ২০জন রেল আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। কারণ অনুসন্ধান করতে সক্রিয় হয়েছে রেলপ্রশাসনের কর্তারা। প্রশ্ন, উঠছে,একই লাইনে কিকরে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ও মালগাড়ি গেল? রেলের বক্তব্য,স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল অকেজো থাকায় কাগুজে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। যাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন,কাগুজে ছাড়পত্র দেওয়া হলে কিকরে মালগাড়ি প্রতি ঘন্টায় ৭৮কিমি বেগে ছুটছিল? মৃত মালগাড়ির চালকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে রেলদফতর কী দায় এড়াতে চাইছে ,সেই প্রশ্নও উঠছে। উত্তরবঙ্গের অভিশপ্ত রাঙাপানি স্টেশনের কাছে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আতঙ্ক এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন রেল যাত্রীরা।যাঁরা প্রিয়জনকে এই হারিয়েছেন তাঁরা রেলের ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ। রেল মন্ত্রকের অব্যবস্থা,সমন্বয়হীনতা বা গাফিলতির জন্য যাত্রীরা দারুণভাবে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। ১০জনের ওপর যাত্রীর মৃত্যুতে একটাই প্রশ্ন,মৃত্যুর দায় কার ? কাঞ্চনজঙ্ঘা ও মালগাড়ির চালক, ২ জনকেই পেপার ক্লিয়ারেন্স মেমো ইস্যু করা হয়েছিল।
এর মানে হল, লাল সিগন্যাল উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ৯টি সিগন্যাল পেরিয়ে যাওয়ার পর দাঁড়িয়ে পড়েছিল।এর মাঝে কারণ খুঁজতে রেল দফতর তদন্তে নেমেছে।রেলবোর্ডের চেয়ারপার্সন মালগাড়ির চালকের ত্রুটিকে দায়ী করেছেন।বলা হচ্ছে মালগাড়ির চালক নিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালাননি। মৃত চালকের নামে অভিযোগও দায়ের হয়েছে।রেলপ্রশাসনের কর্তারা বলছেন,রাঙাপানি ও আলুয়াবাড়ি স্টেশনের মাঝে কাজ করছিল না স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল। তাই কাগুজে অনুমতি দেওয়া হয়।প্রশ্ন,দুই চালককেই কি একই লাইনে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয় ? যেখানে মালগাড়ির ঘন্টায় ১০কিলোমিটার গতিতে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে কিকরে ঘন্টায় ৭৮কিমি বেগে সেই গাড়ি ছুটছিল ? এখানে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে,তাহলে একই লাইনে কীকরে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসও মালগাড়ি এল ? তাহলে কি রেলওয়ে ট্রাকিং সিস্টেম কাজ করেনি ?সব প্রশ্নই রেলের তদন্তকারী আধিকারিকরা আমতা আমতা করে এড়িয়ে যাচ্ছেন। কোথায় গোড়ায় গলদ ? এই বড়সড় দুর্ঘটনা তার খোঁজ করতে কতটা কনফিডেন্ট হাইস্পিড রেল চালানোর স্বপ্ন দেখা রেল কর্তারা ?
রাঙাপানি ও নিজবাড়ি স্টেশনের মধ্যে ৭ কিমির দূরত্ব। তবে কি রাঙাপানিতে সবুজই ছিল সিগন্যাল, উঠছে প্রশ্ন! এইসমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এরমধ্যে ২০জনের কাছে রেল আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারী রেল অফিসাররা। প্রত্যক্ষদর্শীদেরও বয়ান রেকর্ড করার জন্য তত্পর রেলের অনুসন্ধানকারী টিম।রেলের পক্ষ থেকে আরও জানা যাচ্ছে, রেলওয়ে ট্র্যাকিং সিস্টেম কাজ না করায়, এক্সপ্রেস ট্রেন ও মালগাড়ির গতিবিধি নিয়ে অন্ধকারে ছিলেন রেল কর্মীরা।কেন এই সমন্বয়ের অভাব ? ঠিক কার গাফিলতিতে এতগুলো প্রাণ অকালে ঝরে গেল ? এবার কী সঠিক অনুসন্ধান হবে। প্রাণ হারানো যাত্রীদের পরিজনরা সবকিছু ছেড়ে একথাই জানতে চাইছেন। উত্তর-পূর্ব রেলের মুখ্য সুরক্ষা কমিশনার জনককুমার গর্গের তত্ত্বাবধানে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে। ১৯ জুন থেকে এই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে। দুর্ঘটনা সম্পর্কে কারুর কাছে কোনও তথ্য থাকলে তাঁরা তা তদন্ত কমিশনের কাছে জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছে উত্তর-পূর্ব রেল।যাত্রীরা বলছেন,তদন্ত চলবে,রিপোর্টও বেরোবে।কিন্তু সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার খোলনলচে কী বদলাবে ? অ্যান্টি কলিউশন ডিভাইস বা কবজের মতো প্রযুক্তি প্রয়োগ করার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কবে কাটবে? আর কত প্রাণ গেলে রেল মন্ত্রকের হুঁশ ফিরবে সেই প্রশ্নই এখন রেল যাত্রীদের মহলে ঘোরাফেরা করছে।