“সৈনিকদের গ্রাম” বাগরাকোটে সেনা সন্তানদের জন্য প্রার্থনা পরিবারের
Family prays for army children in Bagrakot, "village of soldiers"

Truth of Bengal: বাগরাকোট, মালবাজার ব্লকের একটি ছোট গ্রাম। এক সময় ছিল চা শ্রমিকদের বসবাস। কিন্তু আজকের দিনেও এই গ্রামের পরিচিতি অন্যভাবে বদলে গিয়েছে—এটি এখন “সৈনিকদের গ্রাম” হিসেবে পরিচিত। তিন দশকে, এই গ্রাম থেকে অসংখ্য পরিবার তাদের সন্তানদের ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পাঠিয়েছে। বাগরাকোটের যুবকরা শুধু স্থলসেনাতেই নয়, বায়ুসেনা, নৌসেনা এবং সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত অগ্নিবীর বাহিনীতেও প্রতিনিধিত্ব করছে।
গ্রামের প্রায় ২০০টি পরিবারের প্রতিটি ঘর থেকে একজন করে সেনা জওয়ান রয়েছেন বাহিনীতে। সেনাদের পোস্টিং ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে হলেও, অনেককেই এখন পাকিস্তান-সংলগ্ন সীমান্তে বা উপদ্রুত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। এই পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে যাদের সন্তান সীমান্তে নিয়োজিত, তারা এখন এক অদ্ভুত মিশ্রিত অনুভূতির মধ্যে রয়েছেন—ভয়ের পাশাপাশি এক গভীর গর্বও তাদের মনে।
গ্রামের বাসিন্দা কবীর থাপা, যিনি সম্প্রতি ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন, তিনি এক অদ্ভুত বাস্তবতার সম্মুখীন হন যখন তাঁর ছুটি বাতিল হয়ে যায়। তখনই তাঁরা পরিবারসহ রাতারাতি বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তাদের চলে যাওয়ার সময় গ্রামের পরিচিত মুখ অজয় খারকা তাঁর ভাই ও জামাইয়ের সেনাবাহিনীতে যোগদানকে ঘিরে গর্বিত। এই পরিস্থিতিতে গ্রামের প্রতিটি পরিবার তাদের সন্তানদের নিয়ে গর্বিত হলেও, সেই সঙ্গে রয়েছে উৎকণ্ঠাও।
বাগরাকোটের আরেক বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত চা শ্রমিক ভোলানাথ শর্মার একমাত্র ছেলে রোহিত শর্মা বর্তমানে অগ্নিবীর পদে রয়েছেন এবং জম্মুতে অবস্থান করছেন। তিনি প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। কিন্তু ভোলানাথ শর্মা তার ছেলের প্রতি আশাবাদী, তার বক্তব্য, “দেশের প্রতি, সেনাবাহিনীর প্রতি কর্তব্যে ছেলে যেন অবিচল থাকে। সে জন্য সর্বোচ্চ বলিদান দিতে হলেও আমার ছেলে দেবে, সেটাই চাইছি।”
বাগরাকোটের এক বৃদ্ধা, সাবিত্রী ভুজেল, যিনি তাঁর জামাতা অরুণ প্রতাপের জন্য উদ্বিগ্ন, তিনি বলেন, “পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের দেশ। আমাদের সেনারা যে কোনও মূল্যে ওদের চরম শিক্ষা দেবে, তা নিশ্চিত।” এই কথাগুলো স্পষ্টভাবে বোঝায় যে, শুধু গ্রামবাসীর মধ্যে নয়, সর্বত্রই এক ধরনের জাতীয়তাবাদী গর্ব বিরাজ করছে।
গ্রামের অধিকাংশ সেনা সদস্যরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোর্খা রেজিমেন্টের সৈনিক। তাঁদের সৈনিকরা সীমান্তে “জয় মহাকালী” স্লোগানে মুখরিত করছে। তবে, এই সৈনিকদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। যদিও পরিবারের সদস্যরা ভয় পেয়েও নিজেদের সাহসী এবং গর্বিত মনে করছে, তাঁদের একটাই কামনা—তাঁদের সন্তানেরা ফিরে আসুক বিজয়ী হয়ে।
বাগরাকোট গ্রাম এমন এক জায়গা, যেখানে ভয়ের পাশাপাশি সাহস এবং কর্তব্যের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা রয়েছে। এই গ্রামের প্রতিটি পরিবার একে অপরকে সাহস দিচ্ছে, এবং জানাচ্ছে—যতই কঠিন পরিস্থিতি আসুক না কেন, তাদের সন্তানরা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত।