রাজ্যের খবর

বারুইপুর রায়চৌধুরী বাড়ির পুজোয় ৩০০ বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ প্রথা! আজও ওড়ানো হয় নীলকণ্ঠ পাখি।

Blue-throated birds are flown during Durga Puja

The Truth of Bengal: জারিজুরি কমলেও রীতি মানার চল এখনও আছে।জমিদার বাড়িতে ঐতিহ্য ধরে রাখতে দুর্গাপুজোয় ওড়ানো হয় নীলকন্ঠ পাখি।বলাহয়, রাবনবধের আগে এই পাখির দর্শন পেয়েছিলেন স্বয়ং রামচন্দ্র।কেউ কেউ বলেন,নীলকন্ঠই নাকি পথ  দেখিয়ে নিয়ে যায় রামচন্দ্র ও তাঁর বাহিনীকে।তাই নীলকন্ঠের দর্শন পাওয়া অত্যন্ত শুভ। আর মহামায়ার আরাধনার সময়  বারুরইপুরের এই রায়চৌধুরী বাড়িতে ওড়ানো হয় নীলকন্ঠ পাখি।৩০০বছর ধরে এই রীতি মানা হয় এই বনেদী বাড়ির পুজোজঙ্গল ও আগাছায় ভরেছে রায়চৌধুরী বাড়ি কথায় বলে জমিদার না থাকলেও জমিদারি প্রথা আজও আছে। সেই প্রথা মেনেই দুর্গাপুজোর আয়োজন হয় বারুইপুর জমিদার বাড়িতে। যেটা রায়চৌধুরীদের ভিটে বাড়ি বলে পরিচিত।সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই জমিদার বাড়িতে বসেই লিখেছিলেন ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের কিছু অংশ। এছাড়াও ঋষি অরবিন্দ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বেরও দর্শন পেয়েছে এই বাড়ি৷ প্রায় তিনশো বছরের পুরোনো বাড়িটি তৈরি করেন জমিদার রাজবল্লভ চৌধুরী। বারুইপুরের ইতিহাস থেকে জানা যায়, বারুইপুর থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত এক বিশাল জায়গা যৌতুক হিসাবে পেয়েছিলে তিনি। তৎকালীন সেই নবাবের কাছ থেকেই পাওয়া ‘রায়চৌধুরী’ উপাধিও। কর্ন‌ওয়ালিসের আমলে এক বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন তাঁর এই স্বপ্নের প্রাসাদ।

ঝোপ-জঙ্গল এবং শ্যাওলাতে ঘেরা সে বাড়ির আজ বেশ করুণ দশা! তবু স্বাধীনতার আগের এবং পরের বহু ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে বারুইপুরের রায়চৌধুরীর পরিবারের সেই জমিদার বাড়ি।প্রায় তিনশো বছর আগে সেই জমিদার বাড়িতেই শুরু হয় দেবী দুর্গার বন্দনা। রীতি অনুযায়ী, এক চালচিত্রের প্রতিমাতেই হয় পুজো। বাড়ির ঠাকুরদালানেই তৈরি হয় সেই দুর্গা প্রতিমা। তবে ষষ্ঠী নয়, পুজো শুরু হয় প্রতিপদ থেকেই। তিনজন পুরোহিত একত্রে করেন সেই পুজো। সপ্তমীর দিন থেকে নবমী পর্যন্ত ছাগ-বলিও দেওয়া হয়। অষ্টমীর দিন জমিদার বাড়িতে বসে জমাটি আড্ডা। একসময় জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে দিক-বিদিক থেকেই অগুনতি মানুষ ছুটে আসতেন। তবে বর্তমানে বিভিন্ন বারোয়ারি পুজোর হিড়িকে সেই ভীড় কমেছে বেশ।তথাকথিত উৎসবের চাকচিক্য, উজ্জ্বল আলো, আয়োজনের ধুমধাম কোন কিছু না থাকলেও, জমিদার বাড়ির সাবেকী দুর্গাপুজো দেখতে প্রতি বছর বারুইপুর রাস মাঠের কাছে রায়চৌধুরীদের ঠাকুর দালানে ভিড় জমান আবালবৃদ্ধবনিতা। শুধু বারুইপুর, সোনারপুর নয়, সূদূর জয়নগর, মন্দিরবাজার, কুলতলি থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন তিনশো বছরের বেশি প্রাচীন এই দুর্গাপুজো দেখতে।বর্তামানে এই পুজোর দায়িত্বে থাকা রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্য অমিয়কৃষ্ণ রায়চৌধুরীর কাছ থেকেই জানা গেল শাতব্দী প্রাচীন পুজোর ইতিহাস। তিনি জানালেন, ‘তিনশো বছর আগে রাজা রাজবল্লভ রায়চৌধুরী এই দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন।

এখনও তিন জন পুরোহিত রীতি মেনে এখানে পুজো করেন।প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে যায় পুজো।সপ্তমী থেকে নবমী নিশি পর্যন্ত প্রতিদিন এখানে বলি হয়। নিয়ম মেনে ছাগ বলি হয় ওই তিনদিন। তবে সবচেয়ে মজা হয় অষ্টমীর দিনে। বিশাল পরিবারের ছিড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভিন দেশের সদস্যরাও এইদিন একত্রিত হন। পরিবারের  মহিলা সদস্যদের বিশ্বাস এয়োস্ত্রীরা ওইদিন মিলে মিশে অষ্টমীর ভোগ খেলে পরিবারে সুখ শান্তি আসে।‘ অমিয়বাবুর অভিমান, ‘একদা জমিদার বাড়িতে নৈবেদ্যর ডালা সাজিয়ে যে ভাবে প্রজারা আসতেন এখন আর তাঁর কিছুই পাওয়া যায় না।‍‍`জমিদার বাড়ির বাসিন্দারা আজ প্রায় কেউই থাকেন না সে বাড়িতে। তবে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকলেও প্রত্যেক বছরই পুজোতে দেশের বাড়ি ফিরে আসেন তাঁরা। দিন, কাল, সময় বদলালেও তাই জমিদার বাড়ির নিয়ম আজও বদলায়নি। নিয়মানুযায়ীই, আজও দশমীর দিন বিসর্জনের পর নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানো হয় রায়চৌধুরী পরিবারে। পুরাণ মতে, নীলকন্ঠ পাখিরা কৈলাসে গিয়ে দুর্গার ফেরার খবর দেয় মহাদেবকে। তাই প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও বহুবছর ধরেই রায়চৌধুরী পরিবারে চলে আসছে এই ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যে ভর করেই পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন সে পরিবারের বাসিন্দারা। পূজা কদিন জমিদারি প্রথা না থাক জমিদারের মতো পূজা অর্চনা মেতে ওঠে রায়চৌধুরীর পরিবার।

Related Articles