রাজ্যের খবর

শারদোৎসবের জন্য শোলার কদম ফুল তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন কারিগররা

Durga pujo 2023

The Truth of Bengal: আকাশে বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ।আগমনীর মর্ত্যে আসার আগেই সাজো সাজো রব পড়ে গেছে চারিদিকে। পুজোর উপাচার থেকে প্রতিমা-মণ্ডপ সজ্জার সরঞ্জামের সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, তাঁদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। শারদোৎসবের জন্য শোলার কদম ফুল তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন কারিগররা৷ ব্যান্ডেল, মঙ্গলকোটের মতোই চন্দ্রকোণার মালাকার পাড়াতেও এখন সেই ব্যস্ততার চিত্রই দেখা যাচ্ছে৷ একসময় শোলার চাঁদমালা, মুকুট, ডাকের সাজ তৈরি হত মালাকার পাড়ার ঘরে ঘরে। বরাত আসত সারা বছর৷ তবে দুর্গাপুজোর আগে চাহিদা বাড়ত। এখনও চাহিদা থাকে শোলার কাজের। এরমাঝে কারিগরের অভাব দেখা দিয়েছে। কাঁচা শোলার দাম বেড়েছে অনেকটাই৷ শোলা শিল্পকে ফ্যাশন দুরস্ত করে তুলে প্রতিযোগিতার বাজারে আকর্ষণীয় করার চেষ্টাও জারি আছে।খাটুনির তুলনায় আয় কম হওয়ায় বর্তমান প্রজন্ম সেই ভাবে আগ্রহী নয় এই পেশায় যুক্ত হতে। তবে কেউ কেউ এখনও পূর্বপুরুষের এই পেশা ধরে রাখতে চাইছেন৷ একসময় ৫০-৬০টি পরিবার মালাকার পাড়ায় শোলার কাজ করত। খাটুনি বেশি লাভ কম বলে শোলার মুকুট ডাকের সাজ এখন আর হয় না৷ তবে কদম ফুল তৈরি করেন মালাকাররা।দুর্গাপুজোয় পদ্মফুল লাগে।

আর শোলার কদম ফুল লাগে মঙ্গল ঘটে। দুর্গা পুজোর সময় সেই কদম ফুলের চাহিদা থাকে অনেক। মালাকার পাড়ায় তাই ব্যাস্ততা তুঙ্গে। বিভিন্ন রঙের কদম ফুল তৈরিতে ব্যস্ত মালাকাররা। কাঁচা শোলা রোদে শুকিয়ে মাপ মতো কেটে খোসা ছাড়ানো হয়। দুধ সাদা শোলা কেটে নানা মাপের ফুল তৈরি হয়। চাহিদা মতো রং লাগানো হয়। বাড়ি থেকে পাইকারি বিক্রি হয় এই শোলার ফুল। শারদোৎসবের সময় থেকে সারা বছর চাহিদা থাকে কদম ফুলের। তবে শোলার দাম অনেকটাই বেড়েছে৷ তাই গত বছর থেকে ফুলের দামও বাড়তে হয়েছে কিছুটা। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় শোলা পাওয়া যায়। সেই শোলা কিনে মজুত করে রাখতে হয়। তাই একসঙ্গে অনেক টাকা লগ্নি করতে হয়। পুজোর আগে ব্যস্ততা তুঙ্গে চন্দ্রকোনার ডিঙ্গাল গ্রামের মালাকার পরিবারে।চাহিদা থাকলেও কাঁচামালের সংকটে দুঃশ্চিন্তায় মালাকার পরিবারগুলি।এরা বংশপরম্পরায় শোলার কাজ করেন।শোলার চাঁদমালা, মুকুট, প্রতিমার অঙ্গসজ্জার নানান গহনা।দুর্গাপুজোর সময় এদের ব্যস্ততা চরমে উঠে।যেমন এখন নাওয়াখাওয়া ভুলে দিনরাত ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাঁদমালা সহ সোলার বিভিন্ন গহনা তৈরি করতে।নিজঘরের দাওয়ায় বসে চাঁদমালায় ডিজাইন তুলতে যে তুলনায় পরিশ্রম হয় সেই তুলনায় রোজগার হয়না।তবুও পূর্বপুরুষদের পেশাটাকে ছাড়তে পারেনি জানাচ্ছেন মালাকার পরিবারের সদস্যরা।আগে গ্রামে অধিকাংশ পরিবার এই কাজের সাথে যুক্ত ছিল,বর্তমানে পরিশ্রমের তুলনায় রোজগার কম তারউপর কাঁচা মালের সংকট। এই পেশা থেকে মুখ ফেরাচ্ছে অনেক পরিবার। বংশপরম্পরায় চলে আসা এই পেশা ধরে রেখেছেন ডিঙ্গাল গ্রামের প্রদীপ মালাকার ও তার পরিবার।

সামনেই দুর্গা পুজো তাই ডিঙ্গাল গ্রামের মালাকার পরিবারে সোলার গহনা তৈরিতে হাত লাগিয়েছে পরিবারের পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা সদস্যরাও।পরিবারের দাবি,তাদের এই কাজের মুল সম্পদ হল সোলা,সেই সোলা এখন অমিল নিজেদের এলাকাতেই।ফলে বাইরে থেকে চড়া দামে সোলা কিনে এনে গহনা তৈরির কাজ করতে হয়।পূর্ব মেদিনীপুর,হাওড়া থেকে তাঁরা পাইকারি দরে সোলা কিনে এনে এইসব উপকরণ তৈরি করেন। সেই সোলাও এখন পর্যাপ্ত পরিমাণে মিলছে না।সোলার গনহা তৈরির সাথে যুক্ত প্রদীপ মালাকার জানান,’আগে প্রচুর শোলা পাওয়া যেত লোকালে,এখন তা মিলেনা,বাইরে থেকে দ্বিগুন দামে কাঁচামাল সোলা কিনতে হয়।এখন নানা কারণে শোলার সঙ্কট দেখা দিচ্ছে,অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দামও বেড়েছে।তুলনায় মালা,চাঁদমালা সহ গহনার দাম বাড়েনি। ‘দুর্গাপুজোর সময় বিভিন্ন দশকর্মা দোকান থেকে চাহিদামত অর্ডার আসে,এবারও বেশকিছু অর্ডার এসেছে ইতিমধ্যে।সোলার গহনার চাহিদা থাকলেও কাঁচামালের জোগান কম থাকায় চাহিদা মতো গহনা তৈরি করে ডেলিভারিও দিতে সমস্যায় পড়তে হয় তাদের।পাশাপাশি মালাকার পরিবারগুলির দাবি,’এখন আধুনিক জিনিষপত্র বেরিয়ে যাওয়ায় শোলার কাজের কদর কমেছে,তাই আমাদেরও কমেছে রোজগারপাতি।’সরকারী সাহায্যের দাবি উঠছে মালাকার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।

Related Articles