রাজ্যের খবর

প্রাচীন সুখসাগর রোড, কালীগঞ্জ বন্দর ও ভাগীরথী শিল্পাশ্রম ঐতিহাসিক নদিয়ার নয়া পর্যটন কেন্দ্র

Ancient Sukhsagar Road, Kaliganj Port and Bhagirathi Shilpashram are the new tourist centers of the historic Nadia

Truth Of Bengal: দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়, নদিয়া: তখন বাণিজ্যে বা পরিবহনে মানুষের ভরসা নদীপথ। স্রোতস্বিনী গঙ্গা বয়ে চলেছে প্রহমান ধারায়। নদিয়ার অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে তখন নাম রয়েছে কালীগঞ্জ বন্দরের। এ প্রান্তে চাকদহ, চাঁদুড়িয়া, শিমুরালি, চৌগাছা, রাউতাড়ি, তাঁতিগাছি, নরপতিপাড়া, চাঁদমারি, ঘোষপাড়া, কাঁচরাপাড়া আর অপর প্রান্তে হুগলি।

দুই পারের যোগাযোগ বা নদীপথে বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্যবাহী জাহাজ ও নৌকো এসে ভিড়তো কালীগঞ্জ ঘাটে। এখান থেকে মাল খালাস হয়ে গরুর গাড়ি করে চলে যেত বিভিন্ন এলাকায়। মানুষের কোলাহল, ব্যস্ততায় সকাল থেকে সন্ধ্যে জমজমাট থাকতো এই এলাকা। বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই কালীগঞ্জ। আবার এই গঙ্গার ধার দিয়েই রয়েছে প্রাচীন সুখসাগর রোড। কথিত আছে এই রাস্তা ধরে শ্রীচৈতন্যদেব গিয়েছিলেন কুমারহট্টে (হালিসহর)।

ইংরেজ শাসনের অনেক ইতিহাস এই কালীগঞ্জ বন্দর এবং গঙ্গা নদীকে ঘিরে রয়েছে। ইংরেজ সাহেবদের তখন নীল চাষ রমরমিয়ে চলছে নদিয়ার বিভিন্ন জায়গায়। নীলকুঠি ছিল তাঁতিগাছি, চৌগাছা সহ বিভিন্ন এলাকায়। প্রক্রিয়াজাত করার পর সেখান থেকে নীলের ডেলা এই নদী বন্দর হয়ে পৌঁছে যেত ইংল্যান্ডে। কালীগঞ্জ বন্দরের খুব কাছেই নদীর ধারে গড়ে তুলেছিল একটি বাংলো। যা বর্তমানে সিপিটি নামে পরিচিত।

শোনা যায়, ইংরেজ সাহেবরা ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে এসে এই বাংলোতে আমোদ-প্রমোদ করতেন। তারা ঘোড়ার গাড়ি করে এলাকায় বিভিন্ন কাজে যেতেন। বর্ষাতেও মাটির রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি চলতে যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য রাস্তার দু’ধারে পাথর দিয়ে বাঁধানো হয়েছিল। ঘোড়ার গাড়ি চাকা ওই পাথর বরাবর যেত। পরবর্তীতে এই কালীগঞ্জ এলাকাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভাগীরথী শিল্পাশ্রম। যেখানে অনাথ বাচ্চাদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব নেওয়া হয়।

আজ সব ইতিহাস। সময়ের স্রোতে বদলে গেছে সবকিছু। নেই কালীগঞ্জ বন্দর। বন্ধ হয়ে গিয়েছে ভাগীরথী শিল্পাশ্রম। যত্নের অভাবে ইংরেজদের তৈরি সিপিটি ভূত-বাংলো হয়ে উঠেছে। গঙ্গা নদী বহু দূরে সরে গিয়েছে। রেলপথের দাপটে ব্যবসাকেন্দ্র কালীগঞ্জ আজ ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে আজও বেঁচে আছে অনেক ইতিহাস। আর রয়ে গিয়েছে গঙ্গা থেকে বয়ে আসা খাল। যে খাল জানান দিয়ে যায় বহু বছর আগের গঙ্গার প্রবাহমান ধারাকে। এখনো জোয়ার-ভাঁটা দেখা যায় এই খালে। পুরনো ইতিহাসকে মানুষের মনে বাঁচিয়ে রাখতে এবার নয়া উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই খালের ধারেই গড়ে উঠেছে এক নতুন পিকনিক স্পট। ইতিহাসের টানে মানুষ আসুক এই এলাকায়। জানুক ইতিহাস। পিকনিকের আনন্দের মাঝেই সারাটা দিন ঘুরে বেড়াতে পারবেন বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্পট। আবার এই নতুন পিকনিক স্পটে রয়েছে বিনোদনের জন্য নানান ব্যবস্থা।

ভালো পিকনিক স্পট খুজছেন নিরিবিলি তবে এক মুহূর্তে দেরি না করে চলে আসুন চাকদহ থানার অন্তর্গত ভাগিরথী শিল্পাশ্রম এর ঢিলছোড়া দূরত্বে কালীগঞ্জ বাজারের উপরেই গঙ্গা থেকে বয়ে আসা খালের পাশে এই পিকনিক স্পটটি রয়েছে। আছে নৌকাবিহার- এর ব্যবস্থা। এছাড়াও অসাধারণ এক ফুলবাগান। যেখানে ফুটে রয়েছে নানান ধরনের ফুল। আছে বাচ্চাদের খেলাধুলার মাঠ। দোলনার ব্যবস্থাও আছে। তৈরি করা হয়েছে বাঁশের ব্রিজ। যাঁরা পিকনিক করতে আসবেন নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন। আবার রান্না করে দেওয়ার ব‍্যবস্থা আছে। বিশ্রামাগার, বাথরুম, হলঘর এক জায়গায় বসে খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন। পাশ দিয়ে চলে গেছে চাকদহ থেকে কল‍্যানী তে যাবার রাজ‍্য সড়ক সুখসাগর রোড।

শিমুরালি স্টেশন থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বে অটো বা টুকটুকি বা বাস নিয়েও যেতে পারেন এই পিকনিক স্পটে। পিকনিক স্পটের মালিক ভাষ্কর বর্মন বলেন, এখানে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত রকম সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আসলে আমরা এই পিকনিক স্পটটি করেছি মানুষ চাই একটু নিরিবিলি। সেই নিরিবিলি ও প্রকৃতির পরিবেশকে আমরা তুলে ধরেছি এই স্পটে। সবাই আসুন ভালো লাগবে। আমরা তুলে ধরেছি পুরনো দিনের সেই টালির বাড়ি। শিশুরা যাতে দৌড়াদৌড়ি করতে পারে তার ব্যবস্থা আছে। বাথরুম সহ রেস্টুরুম আছে। বাজার কাছে এখানে সব রকম জিনিসের সুবিধা আছে, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো।

প্রত্যেককে বলছি স্পটে আসুন আপনাদের ভালো লাগবে। আর সঙ্গে প্রাচীন ইতিহাস জানুন। রাজরাজেশ্বরী মন্দির সহ অনেক প্রাচীন মন্দির আছে এলাকায়। অভিনেতা বিকাশ রায়ের বাড়ি ছিল এই এলাকাতেই। ইতিহাসের সঙ্গে আধুনিকতার মিশেল। এলাকাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকেও অসাধারণ। চলে আসতেই পারেন। শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে আসলে নামতে হবে শিমুরালি রেলস্টেশনে। সেখান থেকে অটো বা টোটো করে পৌঁছে যান কালীগঞ্জ। যারা গাড়ি নিয়ে আসবেন তারা সোজা পৌঁছে যান এই এলাকায়। সারাটা দিন কাটাতে মন্দ লাগবে না।

Related Articles