রাজ্যের খবর

মানিকচকে সম্প্রীতির ছোঁয়া, হিন্দু যুবকের সৎকারে মুসলিম প্রতিবেশীরা

A touch of harmony in Manikachak, Muslim neighbors attend funeral of Hindu youth

Truth Of Bengal: অভিষেক দাস, মালদা: আজকের সময়ে যখন দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদের নানা খবর সামনে আসে, ঠিক তখনই এক অন্য ছবি উঠে এল মালদার মানিকচক ব্লকের করিয়া সুলতানপুর গ্রাম থেকে। এখানে হিন্দু ও মুসলিম প্রতিবেশীদের মধ্যে এমন এক বন্ধনের পরিচয় পাওয়া গেল, যা সমাজে সম্প্রীতির বুনিয়াদকে আরও দৃঢ় করে তোলে।

সম্প্রীতির এই নজির তৈরি হয়েছে দীনেশ সাহা নামক এক হিন্দু যুবকের মৃত্যুর পর। জন্ম থেকেই তিনি দৃষ্টিশক্তির সমস্যায় ভুগতেন এবং ছিলেন কিছুটা রাগী ও জেদি স্বভাবের। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে বাড়ির সঙ্গে রাগারাগি করে সেলুনে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে যান দীনেশ। কিন্তু অনেক রাত পেরিয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজ শুরু করেন।

দুঃখজনকভাবে, বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে এক আমগাছে দীনেশ সাহার ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলেই মনে করা হচ্ছে। মানিকচক থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় এবং পরে তা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এই দুঃখজনক ঘটনার পরেই গ্রামের মানুষ দেখালেন সম্প্রীতির এক মর্মস্পর্শী দৃষ্টান্ত। করিয়া সুলতানপুর গ্রামে মাত্র দুটি হিন্দু পরিবার বসবাস করে, বাকি সকলেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। কিন্তু দীনেশ সাহার মৃত্যুর পর মুসলিম প্রতিবেশীরাই সামনে এগিয়ে এসে সমস্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং অন্যান্য ধর্মীয় রীতি পালন করতে পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন।

গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ কুদ্দুস বলেন, “আমরা এই গ্রামে বহুদিন ধরে একসঙ্গে বাস করছি। হিন্দু-মুসলিম বলে কোনও ভেদাভেদ নেই আমাদের মধ্যে। আগে কেউ মারা গেলে যেমন পাশে থেকেছি, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা ওদের, ওরা আমাদের—এই সম্পর্কটাই আমাদের গর্ব।”

গ্রামের মুসলিম যুবকেরা দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থায় সাহায্য করেন, কাঠ, গাড়ি, এমনকি শ্রাদ্ধে ব্যবহৃত সামগ্রীর ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত নিজেরাই করে তোলেন। দীনেশের পরিবারের একজন সদস্য বলেন, “গ্রামের মানুষজন যদি না থাকত, আমরা এই দুঃসময়ে কিছুই করতে পারতাম না। ওর শেষযাত্রা এভাবে সম্পন্ন করতে পেরে শান্তি লাগছে।” এ ঘটনা শুধু একটি গ্রামের উদাহরণ নয়, বরং সমগ্র সমাজের কাছে এক বার্তা—মানবতা ও সম্প্রীতির শক্তি সব ভেদাভেদকে অতিক্রম করতে পারে।

Related Articles