রাজ্যের খবর

উদয়ন ও উপাসনা গৃহ সংস্কারের প্রয়োজনে বিশ্বভারতীতে দিল্লির ২ আধিকারিক

2 Delhi officials at Visva-Bharati for renovation of Udayan and House of Worship

Truth of Bengal: সৌতিক চক্রবর্তী, বোলপুর: ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে পড়ছে। বেশ কিছু দরজা জানালাও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। বাইরের দেওয়ালের প্লাস্টারের একাংশ খসে পড়েছে। শান্তিনিকেতনের কবিগুরু স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী উদয়ন গৃহের এমনই অবস্থা। পাশাপাশি, ভারী যান চলাচলের জন্য ঐতিহ্যবাহী উপাসনা গৃহেরও অবস্থা উদ্বেগজনক। তার প্রেক্ষিতেই সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) অর্থাৎ ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণকে আবেদন জানিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তাতেই সাড়া দিয়ে বুধবার দিল্লি থেকে দুই আধিকারিক শান্তিনিকেতন আসেন। উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষের সঙ্গে বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার সকালে তাঁরা রবীন্দ্র ভবন ও উপাসনা গৃহ ঘুরে দেখেন। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানিয়েছেন। শান্তিনিকেতনে যে ক’টি ঐতিহ্যবাহী ভবন রয়েছে, তার মধ্যে উদয়ন গৃহ ও উপাসনা গৃহ অন্যতম। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় ৩০-এর দশকে উদয়ন গৃহ নির্মাণে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিলেন কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

মূলত রবীন্দ্রনাথের স্বাচ্ছন্দ্য ও দেশ-বিদেশ থেকে আগত অতিথিদের কথা ভেবে তিনি এই বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করেন। তার রূপায়ণে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিলেন সুরেন্দ্রনাথ কর। এই বাড়ির অনেক ঐতিহাসিক পটভূমিকা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর কথোপকথন এই বাড়িতেই হয়েছিল। কবির জন্মদিনে জনগণের উদ্দেশ্যে জীবনের অন্তিম বার্তা দিয়েছিলেন উদয়ন বাড়ির বারান্দায় – থেকেই। ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই শান্তিনিকেতন থেকে কবির অন্তিম যাত্রা ছিল এই বাড়ি থেকেই। বর্তমানে বিশ্বভারতীর কার্যালয়, প্রদর্শশালা হিসেবে বাড়িটি ব্যবহৃত হয়। ভবনটিতে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত চেয়ার, পিয়ানো, দোলনা প্রভৃতি যত্নের সঙ্গে সংরক্ষিত রয়েছে।

অন্যদিকে, শান্তিনিকেতনের সূচনাকালে ব্রহ্ম উপাসনার জন্য মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের আমলে তৈরি হয়েছিল উপাসনা গৃহ। শান্তিনিকেতনের অন্যতম প্রাচীন ভবনটি কাচের তৈরি। অতীত থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সাবলীলভাবে উপাসনার জন্য এই বাড়ি সমানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে উপাসনা গৃহ সংলগ্ন পাশের রাস্তাটি রাজ্য সরকারের। ভারী যান চলাচলে ভাইব্রেশন অর্থাৎ অতিরিক্ত কম্পনের ফলে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে এএসআই বিশ্বভারতীকে আগেই সতর্ক করেছিল। বর্তমানে গাড়ির ধোঁয়ার কার্বনে উপাসনা গৃহের কাচগুলির ক্ষতি হচ্ছে।

তাই ওই রাস্তায় আগামী দিনে যান চলাচল বন্ধ না হলে উপাসনা গৃহের অবস্থা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণও করেছে কর্তৃপক্ষ। তার মাঝে এদিন এসআইয়ের পুনরায় পরিদর্শন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বুধবার সকালে প্রথমে রবীন্দ্র ভবনের উদয়ন গৃহ, বাগান প্রভৃতি পরিদর্শন করেন। এরপর উপাসনা গৃহও ঘুরে দেখেন। যদিও বিশ্বভারতীর রক্ষণাবেক্ষণে তাঁরা সন্তুষ্ট নন, এমনটাই বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তাই তারা কী রিপোর্ট দেন, সেদিকেই তাকিয়ে কর্তৃপক্ষ।

ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, প্রতিনিধি দলটি বিশ্বভারতীর আধিকারিকদের সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের প্রয়োজনে এ দিনের পরিদর্শন করেন। আমরা তাদের রিপোর্ট পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

Related Articles